ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের পাহাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে রাইসি একা ছিলেন না, সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দোল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রাহমাতি ও প্রদেশটিতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলি আলে-হাশেম।
তারা সবাই রবিবার আজারবাইজান সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন। উদ্বোধন শেষে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে হেলিকপ্টারে করে ফিরছিলেন। পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রাইসি ও তার সঙ্গীদের অবস্থা কী, তারা কেমন আছেন, আদৌ বেঁচে আছেন কি না, এ নিয়ে রাতভর ছিল জল্পনা-কল্পনা।
পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের যে এলাকায় হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়, তা অত্যন্ত দুর্গম। আবহাওয়াও হিমশীতল। এসব কারণে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের অবস্থান নির্ণয় করতে বেগ পেতে হচ্ছিল উদ্ধারকর্মীদের।
এক পর্যায়ে সোমবার সকালে ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট পীর হোসেন কোলিভান্দ জানান, প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সন্ধান পাওয়া গেছে।
পরে ইরানের বার্তা সংস্থা মেহর নিউজ জানায়, প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ হেলিকপ্টারের সব যাত্রী মারা গেছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, ইরানের হাল এখন ধরবে কে?
ইরানের সংবিধানের ১৩১ ধারায় বলা আছে, ক্ষমতায় থাকাকালে যদি প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হয়, তাহলে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট তার জায়গায় বসবেন।
সে হিসেবে ইরানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে ইরানের তিন সদস্যের পরিষদের একজন হবেন ৬৮ বছর বয়সী মোখবার, যাদের দায়িত্ব নতুন নির্বাচন আয়োজনের।
এই পরিষদের বাকি দুই সদস্য হলেন ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ ও বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম-হোসেইন মোহসেনি-ইজে’ই।
তিন সদস্যের এই পরিষদ আগামী ৫০ দিনের মধ্যে ইরানে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করবে।
খামেনির ঘনিষ্ঠ মোখবার
ইরানের সদ্যপ্রয়াত প্রেসিডেন্ট রাইসির মতো মোখবারও দেশটির সর্বোচ্চ নেতা খামেনির ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত। আর প্রেসিডেন্ট যিনিই হোন না কেন, ইরানে ক্ষমতার চাবিকাঠি আসলে খামেনিরই হাতে।
দেশটির খুজেস্তান প্রদেশের দেজফুল শহরে ১৯৫৫ সালে জন্ম মোখবারের।
আশির দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) মেডিকেল ইউনিটের কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।
২০২২ সালের অক্টোবরে মস্কো সফর করা ইরানের প্রতিনিধি দলে মোখবার ছিলেন বলে একাধিক সূত্র সেসময় রয়টার্সকে নিশ্চিত করে।
ইরানের ওই প্রতিনিধি দল রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও আরও ড্রোন সরবরাহে রাজি হয়েছিল।
এক সময় খামেনি-সংশ্লিষ্ট সিতাদ নামের একটি বিনিয়োগ তহবিলেরও প্রধান ছিলেন মোখবার।
২০১০ সালের জুলাইয়ে সিতাদের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোখবারকে একটি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সে তালিকায় সেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে ‘পারমাণবিক বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মকাণ্ডে’ জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।
তালিকাভুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সে সময় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অবশ্য দুই বছর পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন মোখবারকে সেই তালিকা থেকে বাদ দেয়।
২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাইসি জয়ী হলে মোখবারকে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ইরানের ক্ষমতা কাঠামোয় সর্বোচ্চ নেতার হাতেই সব ক্ষমতা। রাষ্ট্রের প্রধান তিনি। প্রেসিডেন্টকে দেশটির দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি বলা যায়। প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ নেতার পরামর্শ নিয়েই সরকার চালিয়ে থাকেন।