Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

হিজবুল্লাহয় হাসান নাসরাল্লাহর উত্তরসূরি কে

হাসান নাসরাল্লাহ
হাসান নাসরাল্লাহ
[publishpress_authors_box]

ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বিবৃতি দিয়েছে হিজবুল্লাহও, যেখানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও রয়েছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের কয়েক দফা হামলায় শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কমান্ডারকে হারানো হিজবুল্লাহ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছিল, ঠিক সেই সময়ে লেবাননের দক্ষিণ বৈরুতে শুক্রবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় সংগঠনটির প্রধান নাসরাল্লাহও নিহত হলেন।

বিশ্লেষকদের মতে, হাসান নাসরাল্লাহ শুধু হিজবুল্লাহর নেতাই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি লেবাননের শিয়া আন্দোলনকে এর সমর্থক ও বৃহত্তর অঞ্চলের কাছে মূর্ত করে তুলেছিলেন।

হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন নাসরাল্লাহ ১৯৯২ সালে যখন সংগঠনটির মহাসচিব বা শীর্ষ নেতার দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তার বয়স ত্রিশের কোঠায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে নাসরাল্লাহই ছিলেন হিজবুল্লাহর প্রধান।

ফলে তিন দশকের বেশি সময় ধরে হিজবুল্লাহ নেতৃত্ব দেওয়া নাসরাল্লাহর মৃত্যুতে নিশ্চিতভাবে সংগঠনটির নেতৃত্বে একটি বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা সহজে পূরণ হওয়ার কথা নয়।

তার মৃত্যুর পর হিজবুল্লাহর প্রধান হিসেবে আলোচনায় আসছে দুটি নাম– হাশেম সাফিদ্দিন ও নাইম কাসেম। এই দুজনের মধ্য থেকেই হিজবুল্লাহয় হাসান নাসরাল্লাহর উত্তরসূরি বেছে নেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

হাশেম সাফিদ্দিন

হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের প্রধান ও নাসরাল্লাহর আত্মীয় হাশেম সাফিদ্দিন সংগঠনটির পরবর্তী মহাসচিব হওয়ার পথে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

হাসান নাসরাল্লাহর মতো হাশেম সাফিদ্দিনও (বাঁয়ে) শুরু থেকেই হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুক্ত।

১৯৬৪ সালে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর টায়ারের কাছাকাছি অবস্থিত দেইর কানুন এন-নাহর গ্রামে জন্মগ্রহণ করা সাফিদ্দিন ইরাকের নাজাফ ও ইরানের কুম শহরের দুটি প্রধান শিয়া ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রে নাসরাল্লাহর সঙ্গে একত্রে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা করেন। নাসরাল্লাহর মতো সাফিদ্দিনও শুরু থেকেই হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুক্ত।

সাফিদ্দিন এমন একটি সম্মানিত শিয়া পরিবারের সদস্য, যে পরিবারের অনেকেই ধর্মীয় পণ্ডিত হিসেবে স্বীকৃত। এই পরিবার থেকে অনেকেই লেবাননের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সাফিদ্দিনের ভাই আবদুল্লাহ ইরানে হিজবুল্লাহ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সাফিদ্দিনের নিজেরও ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তার ছেলে রেধা বিয়ে করেছেন ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত হওয়া ইরানের শীর্ষ স্থানীয় জেনারেল কাসেম সোলাইমানির মেয়েকে।

হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদে নেতৃত্ব দেওয়া সাফিদ্দিন সংগঠনটির শূরা পরিষদেরও একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং এর জিহাদি পরিষদের প্রধান। এই ভূমিকা তাকে হিজবুল্লাহর বিদেশি প্রতিপক্ষদের শত্রুতে পরিণত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব সাফিদ্দিনকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসাবে ঘোষণা করেছে এবং তার সম্পদ জব্দ করে রেখেছে।

নাইম কাসেম

৭১ বছর বয়সী নাইম কাসেম হিজবুল্লাহর উপ-মহাসচিব এবং প্রায়ই তাকে সংগঠনটির ‘নাম্বার টু’ বা দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হয়।

তার জন্ম লেবাননের নাবাতিয়েহ প্রশাসনিক অঞ্চলের কফর কিলা গ্রামে। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় এই গ্রামটি বিশেষ করে গত অক্টোবর থেকে অনেকবার ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।

নাইম কাসেমকে হিজবুল্লাহয় ‘নাম্বার টু’ বা দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হয়।

শিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কাসেমের সম্পৃক্ততার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। গত শতকের সত্তরের দশকে তিনি অধিকারাহারাদের নিয়ে প্রয়াত ইমাম মুসা আল-সদরের আন্দোলনে যোগ দেন, যে আন্দোলনটি পরবর্তী সময়ে লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী ‘আমাল আন্দোলনের’ অংশে পরিণত হয়েছিল।

এক পর্যায়ে কাসেম ‘আমাল আন্দোলন’ থেকে বেরিয়ে আসেন এবং গত শতকের আশির দশকের শুরুর দিকে হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন, যা তাকে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালীন ধর্মীয় নেতাদের একজনে পরিণত করে।

বৈইরুতে দশকের পর দশক ধরে ধর্ম বিষয়ে পড়ানো কাসেমের ধর্মীয় পরামর্শদাতাদের অন্যতম ছিলেন আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ হুসেইন ফাদলাল্লাহ, যিনি শিয়া মতাদর্শীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সম্মানিত।

হিজবুল্লাহর বেশিরভাগ কার্যক্রমই যেহেতু গোপন থাকে, সে কারণে এই সংগঠনে নাইম কাসেমের সব ভূমিকা সম্পর্কেও সব তথ্য পাওয়া যায় না। একটা সময়ে তিনি হিজবুল্লাহর শিক্ষা নেটওয়ার্কের কিছু অংশ পরিচালনা করেতেন। এ ছাড়া সংগঠনটির পার্লামেন্টারি কার্যক্রমও দেখাশোনা করতেন তিনি।

নাইম কাসেমকে ১৯৯১ সালে যখন হিজবুল্লাহর উপ-মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়, তখন সংগঠনটির মহাসচিব ছিলেন আব্বাস আল-মুসাবি, যিনি পরে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

বছরের পর বছর ধরে হিজবুল্লাহয় একটি গুরুত্বপূর্ণ জনমুখী ভূমিকায় থাকা কাসেম এই সংগঠনটির শূরা পরিষদেরও সদস্য।

তিনি ‘হিজবুল্লাহ’ নামে ২০০৫ সালে সংগঠনটির ভেতরের নানা বিষয় নিয়ে একটি বইও প্রকাশ করেন, যা পরে বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল।

তথ্যসূত্র : আল জাজিরা

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত