Beta
রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ স্থগিতে কে জিতল   

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
[publishpress_authors_box]

ক্ষমতায় বসার সঙ্গে সঙ্গেই কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা কোনোমতে আটকালেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম পারদো।

ট্রাম্পের প্রতিবেশী এই দুই দেশের রাষ্ট্রনেতা তার সঙ্গে ফোনে কথা বলে অবৈধ অভিবাসী ও মাদক পাচারের বিষয়ে তার দাবি মেনে নিতে রাজি হয়েছেন।

আর তাতে আশ্বস্ত হয়ে ট্রাম্পও কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ এক মাসের জন্য স্থগিতে সম্মতি দিলেন।

এর মধ্য দিয়ে গোটা উত্তর আমেরিকা বাণিজ্য যুদ্ধের হাত থেকে আপাতত রেহাই পেল।

ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার কার্যকর হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো অবৈধ অভিবাসী ও প্রাণঘাতী মাদক ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে নজরদারি আরও বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হন।

তার আগে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট শেইনবাউম পাশের দেশে যাতে তার নাগরিকরা অবৈধভাবে যেতে না পারে, এজন্য উত্তর সীমান্তে সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা বাড়াতে রাজি হন। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র পাচারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করলেও চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি ট্রাম্প। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে এটি কার্যকর হতে যাচ্ছে।

এখন কথা হচ্ছে, মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসানো থেকে এই যে ট্রাম্প ৩০ দিনের জন্য সরে এলেন, এতে জয়ের হাসি কে হাসলেন? ট্রাম্প, ট্রুডো নাকি শেইনবাউম?         

পার্শ্ববর্তী দেশের পণ্যের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কৌশল নতুন নয়।

ট্রাম্পের কৌশল কি সফল

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রতিবেশী দেশগুলোকে বাণিজ্য যুদ্ধের হুমকি দেওয়ার ট্রাম্পের কৌশল কাজে দিয়েছে। হুমকি পেয়ে কানাডা ও মেক্সিকো উভয়ই সীমান্তে কড়াকড়ি করতে রাজি হয়েছে। অবৈধ অভিবাসী ঠেকানোর পাশাপাশি ফেন্টানিলের পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে তারা সম্মত হয়েছে।

এটিকে বিজয় হিসেবে দেখতেই পারেন ট্রাম্প। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার কৌশল হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলোকে সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বাধ্য করা তার ‘আমেরিকা সর্বপ্রথম’ নীতিরই অংশ।

এই কৌশলের কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ গুরুতর বিষয়গুলোতে এখন মনোনিবেশ করতে পারবেন ট্রাম্প। 

অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, শুল্ক আরোপ করে কাউকে চাপে ফেলার ট্রাম্পের এই কৌশল নতুন নয়।

এর আগে তার প্রথম মেয়াদে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছিল কানাডা, মেক্সিকো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যদিও সেই পদক্ষেপের আওতা তেমন বিস্তৃত ছিল না।

এবার কেবল দুটি নয়, কানাডা ও মেক্সিকোর সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ করে শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

এই পদক্ষেপ তিনি এক মাসের জন্য স্থগিত করলেও কিছু বিষয় এখনও পরিষ্কার নয় ব্যবসায়ীদের কাছে। যেমন, এক মাস পর কী হবে? ট্রাম্প কি দেশ দুটির সব পণ্যের ওপর শুল্ক বসাবেনই?

অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, এই এক মাসের অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। ব্যবসায়ীরা এই বাজারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ফেলতে পারে; নতুন কারখানা নির্মাণে বিনিয়োগ স্থগিত করতে পারে বা শ্রমিক নিয়োগ আটকে দিতে পারে-যতক্ষণ পর্যন্ত না বাণিজ্য বিরোধের বিষয়টি তাদের কাছে আরও স্পষ্ট হচ্ছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

অসফল ট্রুডো বাণিজ্য যুদ্ধ থামাতে সফল

টানা ৯ বছর দেশ শাসনের পর অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রুডো। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হলেও বাণিজ্য যুদ্ধের হাত থেকে দেশকে অন্তত ৩০ দিনের জন্য সফলভাবে রক্ষা করতে পেরেছেন তিনি।

এতে কানাডার রাজনীতিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।            ভয়াবহ বাণিজ্য যুদ্ধ ৩০ দিনের জন্য ঠেকিয়ে রাখাকে রাজনৈতিক সাফল্য হিসেবে দাবি করতেই পারেন ট্রুডো।      

শেইনবাউম পেলেন সময় 

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার সময় থেকে ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম।

শুক্রবারও তিনি বলেছিলেন, মেক্সিকান পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ ঠেকানোর বিষয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসী।     

হ্যাঁ, এটা ঠিক, ফেন্টানিলের পাচার রোধে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের সীমান্তে পাঠাতে রাজি হয়েছেন শেইনবাউম। তবে একই সঙ্গে ট্রাম্পের কাছ থেকে নিজের দাবিও আদায় করে নিয়েছেন তিনি।                

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম পারদো।

শেইনবাউম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে, তবে এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সীমান্তপথে মেক্সিকোতে অত্যাধুনিক অস্ত্র পাচার বন্ধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কিছুদিন পর মেক্সিকো সফর করবেন। সেখানে তার সঙ্গে শেইনবাউমের অবৈধ অভিবাসী ও মাদক পাচারের বিষয়ে আলোচনা হবে।         

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট শেইনবাউমের হাতে এক মাসের মতো সময় আছে, যা নেহাতই কম নয়।

এসময়ের মধ্যে তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে টানাপোড়েন আরও কমাতে পারেন, তাহলে তা গত অক্টোবরে ক্ষমতায় আসা এই রাষ্ট্রপ্রধানের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিজয় হবে।

তথ্যসূত্র : বিবিসি   

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত