Beta
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

বেঁধে দেওয়া দামে ডিম পাবে পাইকাররা

ডিম কিনতে গিয়ে অনেকেই হতাশ হচ্ছেন।
[publishpress_authors_box]

চলমান অস্থিরতা কাটাতে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পাইকারদের কাছে ডিম বিক্রির কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ঢাকার কাপ্তান বাজার ও শুক্রবার তেজগাঁও বাজারের পাইকারদের সরকারি দামে ডিম সরবরাহ করা হবে।

রাজধানীতে প্রধান এই দুই পাইকারি বাজারে প্রতিদিন ২০ লাখ ডিম সরবরাহ করবে শীর্ষস্থানীয় ডিম উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো।

বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে ঢাকায় এ কার্যক্রম শুরু করা হলেও সারাদেশেই এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলীম আখতার খান কাপ্তান বাজারে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। তেজগাঁও বাজারে এ কার্যক্রম শুরু হবে শুক্রবার থেকে।

তবে একদিন আগে মঙ্গলবার ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন বুধবার থেকে ডিমের নতুন দাম কার্যকর হবে। তখন তিনি বলেছিলেন, প্রতিটি ডিম উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১২ টাকায় পাওয়া যাবে।

তবে বুধবার এই দামে কোথাও ডিম পাওয়া যায়নি। বেঁধে দেওয়া দামের থেকে ৩৫-৪০ টাকা বেশি টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে এক ডজন ডিম।

ঢাকা শহরের প্রায় সব এলাকাতেই ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিম কিনতে হচ্ছে ১৭৫-১৯০ টাকা দিয়ে। সাদা ও বাদামি রঙের ডিমের দামে কোনও পার্থক্য ছিল না।

বুধবার ঢাকা শহরের কারওয়ান বাজার থেকে শুরু করে মিরপুর, রামপুরা, সেগুনবাগিচা, আগারগাঁও, পান্থপথ এলাকায় কাঁচাবাজার ঘুরে, পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

কারওয়ান বাজারে পাইকারি পর্যায়ে ডিম কিনতে হলে কমপক্ষে ১০০টি ডিম কিনতে হয়, যার দাম ১ হাজার ২৮০ টাকা। সেই হিসাবে একটি ডিমের পাইকারি দর পড়ে ১২ টাকা ৮০ পয়সা। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এই ডিমই খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয় ১৫-১৬ টাকা প্রতিটি।

বুধবার সন্ধ্যায় বিপিআইসিসির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যুগ্ম-আহ্বায়ক মসিউর রহমান বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পোল্ট্রি স্টেকহোল্ডাররা একত্রে বসে ডিমের যৌক্তিক উৎপাদন খরচসহ উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ডিমের মূল্য নির্ধারণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের পাহাড়ি ঢল ও বন্যার কারণে দেশের প্রায় এক চতুর্থাংশ জেলার পোল্ট্রি খামারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে দৈনিক প্রায় ৬০-৭০ লাখ ডিমের উৎপাদন কমে যায়; ফলে চাহিদা ও জোগানের মাঝে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়।

মসিউর রহমান বলেন, দেশের এ সংকটকালে একটি মহল অতিরিক্ত মুনাফা লোটার চেষ্টা করলে ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। দেশ ও মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পোল্ট্রি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন বিপিআইসিসি আগামী ১৫ দিনের যে বিশেষ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, তাতে খামার থেকে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১২ টাকায় পাওয়া যাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, সরকারের বাজার তদারকি সংস্থা, ডিম উৎপাদনকারী বড় খামারি ও পাইকারি আড়ৎদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা- এ উদ্যোগকে সফল করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয় ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

এ উদ্যোগের অন্য এক সমন্বয়ক ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, খামার থেকে ভোক্তার হাতে ডিম পৌঁছাতে ৭ হাত বদল হয়। সম্প্রতি ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণে বেশ কিছু এলাকায় কিছু অপেশাদার লোকজনও ডিমের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এতে হাত বদলের সংখ্যা আরও বেড়েছে। যত হাত বদল হবে, দাম ততই বাড়বে। তাই আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- হাত বদলের সংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহায়তায় আমরা সে চেষ্টাই করছি।

বিপিআইসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সকালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে এবং দুপুরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে পৃথক দু’টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন সন্ধ্যাতেই বিপিআইসিসির উদ্যোগে ডিম উৎপাদনকারী বড় খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি অনলাইন সভা আহ্বান করা হয়। পরেরদিন ১৬ অক্টোবর (বুধবার) বড় খামারি, তেজগাঁও এবং কাপ্তান বাজারের পাইকারি আড়ৎদারদের প্রতিনিধি সমন্বয়ে আরও একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়; যেখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় ডিমের সরবরাহ ও বিপণন সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। পরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে কাপ্তান বাজারে সরকারি দামে ডিম বিক্রির কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সময় স্বল্পতার কারণে তেজগাঁও পাইকারি বাজারে যথাসময়ে ডিমের চালান পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না; তাই শুক্রবার থেকে তেজগাঁও বাজারের কার্যক্রম শুরু হবে।

এ কার্যক্রমে ডিম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- কাজী ফার্মস, ডায়মন্ড এগস লি., প্যারাগন পোল্ট্রি, পিপলস পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, নারিশ পোল্ট্রি, ভিআইপি শাহাদত পোল্ট্রি, নর্থ এগ লি., নাবিল এগ্রো, আর আর পি, রানা পোল্ট্রি, চাঁদ এগ্রো, কৃষিবিদ পোল্ট্রি, চিত্রা এগ্রো, আমান পোল্ট্রি ও মেগা পোল্ট্রি।

এছাড়া আফিল এগ্রো ও প্রাণ এগ্রোও পরবর্তী সময়ে এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হবে বলে আশা করছে বিপিআইসিসি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত