Beta
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কেরালায় ভূমিধসে কেন এত প্রাণহানি

ভারতের কেরালার ওয়েনাডে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ফলে নদীর মতো কাদা-পানির স্রোত তৈরি হয়। ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
ভারতের কেরালার ওয়েনাডে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ফলে নদীর মতো কাদা-পানির স্রোত তৈরি হয়। ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার ওয়েনাড় জেলায় ভারী বৃষ্টিপাতে একাধিক ভূমিধসের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৩৪৪ জনে পৌঁছেছে। নিখোঁজ রয়েছেন আড়াই শতাধিক মানুষ। আহত আরও দুই শতাধিক।

ভূমিধস এলাকা থেকে এরই মধ্যে প্রায় ২ হাজার জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আশ্রয় শিবিরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে।

ওয়েনাড়ের মেপ্পাদির বিস্তৃত পাহাড়ি অঞ্চলের ৮৬ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত মোট তিনবার ভূমিধস হয়। এতে গাছপালা, পাথর, কাদামাটির তলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় চার গ্রাম।

মঙ্গলবার রাতে প্রথম ভূমিধস হয় মুণ্ডাক্কাই শহরে। তখন প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। ভূমিধসে মেপ্পেদির পাশের শহর মুন্দাকাল ও চুড়ালমালাতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ভূমিধসের সঙ্গে সঙ্গেই পুরো এলাকার সব দোকান ও বাড়ি পানি আর কাদায় ডুবে যায়। একটি সেতু ভেঙ্গে পড়ায় প্রায় চারশ পরিবার আটকা পড়ে।

মুণ্ডাক্কাই এলাকার চা, কফি ও এলাচ বাগানগুলোতে বহু পরিযায়ী শ্রমিক আটকা পড়েন।

এই শ্রমিকরা মূলত পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে সেখানে কাজ করতে গিয়েছিলেন। তাদের অনেকেই ভূমিধসের পর নদীর স্রোতে ভেসে গেছেন। সেখানে বহু পর্যটকও রয়েছেন।

ভূমিধসে পাহাড়ি উপত্যকার গ্রাম ও শহর কাদাপানির নিচে চাপা পড়ে।

গত কয়েকদিন ধরেই কেরালার বিভিন্ন জায়গায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী আরও কয়েকদিন এই বৃষ্টিপাত চলবে।

ওয়েনাড় একটি পার্বত্য জেলা। এটি পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অংশ। বর্ষার মৌসুমে সেখানে ভূমিধসের ঝুঁকি থাকে। আগেও এই অঞ্চলে ভূমিধসের ঘটনা হয়েছে।

কেরালার বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বিভাগ সাধারণ মানুষকে ভূমিধসপ্রবণ এলাকা থেকে দূরে থাকতে বলেছে। ওয়েনাড়, কোঝিকোড়, মালাপ্পুরম ও কান্নুরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

এ সব এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কেরালার আরও কয়েকটি এলাকায় বৃষ্টির জন্য অরেঞ্জ ও ইয়েলো অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

কাদাপানিতে চাপা পড়া বাড়িঘরে চলছে উদ্ধার অভিযান।

সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কাঁচা রাস্তা ও বনাঞ্চল দিয়ে কাদাপানি ঢুকে পড়ছে। ঘরবাড়ি ভেসে যাচ্ছে এবং মানুষ ও যানবাহন আটকে পড়েছে।

চুড়ালমালা থেকে মুন্ডাক্কাই ও আট্টামালার মধ্যে সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেঙে যায়। ফলে ওই দুটি এলাকা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আটকে পড়া পরিবারগুলোর কাছে উদ্ধার-কর্মীদের পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ওই সেতুটি দ্রুত নির্মানের জন্য সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করেন। বুধবার থেকে সেই কাজ শুরু করেছেন সেনা সদস্যরা।

ওয়েনাড়সহ রাজ্যের আটটি জেলায় আগামী কয়েক দিন আরও বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর। বৃষ্টিপাত এখনও চলছে।

ভেঙে পড়া সেতু নির্মাণে কাজ করছেন সেনা সদস্যরা।

এতো বেশি মানুষ মরল কেন

ভূমিধসে এতো বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর পেছনে সময় মতো মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে না পারাকেই দায়ী করা হচ্ছে। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এজন্য কেরালার প্রাদেশিক সরকারকে দায়ী করেছে। কেরালার প্রাদেশিক সরকারে আছে বিজেপি বিরোধী জোট।

বুধবার ভারতের রাজ্যসভায় দেওয়া ভাষণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার আগে থেকেই ভূমিধসের আশঙ্কা করেছিল। গত ২৩ জুলাই কেরালা সরকারকে এ বিষয়ে সতর্কও করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার সময়মতো লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরাতে পারেনি। ফলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।”

ভারতের এবারের জাতীয় নির্বাচনে ওয়েনাড়ের সংসদ সদস্য হন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। উত্তর ভারতের রায়বেরেলি থেকেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু পার্লামেন্টের বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হওয়ায় তাকে একটি আসন ছেড়ে দিতে হয়।

রাহুল ওয়েনাড়ের সংসদ সদস্য পদটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সামনে রাহুল গান্ধীর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সেখান থেকে ভোটে লড়বেন। তারা দুজনই বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছেন।

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

রাহুল গান্ধী বলেন, “রাজনীতির ইস্যু নিয়ে কথা বলার সময় ও জায়গা এটা নয়। মানুষ সহায়তা চাইছে। তাদের চিকিৎসা দরকার। আমি এখন রাজনীতি নিয়ে উৎসাহিত নই। আগে মানুষের সবচেয়ে ভালো যে সুরক্ষার ব্যবস্থা আছে সেটা দরকার।”

রাহুল দুর্যোগে বিপন্ন মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন। রাহুল বলেন, “এটা ভয়াবহ পরিস্থিতি। কেরালার জন্য, গোটা দেশের জন্য। আমরা পরিস্থিতি দেখতে এসেছি। কত মানুষ তাদের সব কিছু হারিয়েছেন। এটা যন্ত্রণার। আমরা সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আরও অনেক কিছু করতে হবে। আমি চিকিৎসক, নার্স, প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবকসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

ভূমিধসে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভূমিধসে নিহতদের পরিবারকে দুই লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। আর আহতদের দেওয়া হবে ৫০ হাজার রুপি করে।

ওয়েনাড় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেতু ভেঙে পড়া ও ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় প্রথম দিকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করতে বেশ দেরি হয়েছে। আর এ কারণেও হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটেছে।

উদ্ধার অভিযান চলছে।

ইতোমধ্যে ৮২টি সরকারি ত্রাণ শিবিরে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। সরকার ত্রাণ শিবিরগুলোতে খাদ্য সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ নিশ্চিত করছে।

ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য কেরালা প্রায়ই ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকিতে থাকে।

ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলটিতে ২০৪ মিলিমিটার (৮ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে ৫৭২ মিলিমিটার (২২.৫ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়। অল্প সময়ের মধ্যে এতো বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণেই এই ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনা ঘটে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত মুষলধারে বৃষ্টি এবং বন্যা থেকে খরা ও ঘূর্ণিঝড় পর্যন্ত চরম আবহাওয়ার সাক্ষী হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই ঘনঘন এমন চরম আবহাওয়া দেখা দিচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত