Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

ছেলেকে ক্ষমা করে বাইডেন কেন বেকায়দায়

Biden
[publishpress_authors_box]

নির্বাহী আদেশে ছেলেকে ক্ষমা করে তোপের মুখে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। নিজ দল ডেমোক্র্যাট শিবির থেকেও সমালোচার শিকার হয়েছেন তিনি।

অতীতে বাইডেন একাধিকবার বলেছিলেন, নির্বাহী ক্ষমতাবলে ছেলেকে ক্ষমা করে দেওয়ার মতো কোনো কাজ তিনি করবেন না। হান্টার বাইডেনের আইনজীবীরা অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রেসিডেন্টের ক্ষমা পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য কাজ করা একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট বা তার পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হোয়াইট হাউসের সহকারীদের কথায় তারা বিশ্বাস করেননি। তারা মনে করেন, হান্টার বাইডেনকে ক্ষমা করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জো বাইডেন যেসব কথা বলেছিলেন, তা সঠিক ছিল না।

হোয়াইট হাউসের সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, “যারা শীর্ষ পর্যায়ের কাছাকাছি ছিলেন, তারা জানতেন যে বাইডেন সম্ভবত এটি করবেন। তাহলে আমরা কেন এতোদিন ভান করেছিলাম?”

হোয়াইট হাউসের আরেক সাবেক কর্মকর্তা জানান, তিনি ও আরও অনেকে নিশ্চিত ছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট শেষ পর্যন্ত তার ছেলেকে ক্ষমা করবেন। আরেকজন সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, “বিষয়টি এভাবেই যে শেষ হবে, তা স্পষ্ট ছিল।”

জো বাইডেনের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ মিত্রও হান্টার বাইডেনকে ক্ষমা করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন।

থ্যাঙ্কসগিভিং ছুটিতে ম্যাসাচুসেটসের নানটাকেটে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত রবিবার রাতে তার ছেলেকে ক্ষমার ঘোষণা দেন। এই সিদ্ধান্তের কারণে বাইডেনের নিজ দলের আইনপ্রণেতারা তার সমালোচনা করেছেন। প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যাঁ-পিয়ের গত ৭ নভেম্বর বলেছিলেন, হান্টার বাইডেনকে ক্ষমা করার বিষয়টি বিবেচনায় নেই।

জো বাইডেন তার ছেলেকে ক্ষমা করার সিদ্ধান্তে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করেছেন। তিনি বরাবরই তার পরিবারের প্রতি অত্যন্ত অনুগত। এমনকি এই অনুগত আচরণ ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক ক্ষতি সত্ত্বেও বজায় রেখেছেন।

হান্টার বাইডেনকে গত জুনে একটি বিচারক আদালত অবৈধ অস্ত্র কেনা ও মাদকাসক্ত অবস্থায় তা রাখার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। ওই মামলায় তার মাদকাসক্তি ও পারিবারিক টানাপোড়েনের বিষয়টি উঠে আসে। এরপর সেপ্টেম্বরে তিনি ৯টি কর-সম্পর্কিত অপরাধে দোষ স্বীকার করেন। অভিযোগে বলা হয়, তিনি ১৪ লাখ ডলারের কর পরিশোধ না করে সেই অর্থ বিলাসবহুল জীবনযাপনে, যেমন এস্কর্ট, স্ট্রিপার, গাড়ি ও মাদকের পেছনে ব্যয় করেন।

সিএনএন জানিয়েছে, হান্টার বাইডেন সেপ্টেম্বরে ফেডারেল কর মামলার নয়টি অভিযোগে দোষ স্বীকার করতে রাজি হননি। এতে তার ১৭ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ ডলারের বেশি জরিমানার ঝুঁকি ছিল।

ডিসেম্বরে হান্টার বাইডেনের সাজা ঘোষণার তারিখ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার ওপর আইনি চাপ বাড়তে থাকে। প্রেসিডেন্টের ছেলের ঘনিষ্ঠরা জানান, তারা চাননি হান্টারকে সাজা ঘোষণার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হোক।

ক্ষমা ঘোষণার আগে, হান্টার বাইডেনের আইনজীবীরা ৫০ পৃষ্ঠার একটি দলিল বিতরণ করেন। এতে প্রেসিডেন্টের ছেলের ওপর ছয় বছরের তদন্তের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি এতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকান মিত্রদের তার আইনি সমস্যাগুলোর জন্য দোষারোপ করা হয়।

জো বাইডেনের এই পদক্ষেপটি যদিও বিতর্কিত। তবে তিনি তার পরিবারের বা ঘনিষ্ঠ একজন সদস্যকে ক্ষমা দেওয়ার সিদ্ধান্তে একেবারে নতুন কিছু করেননি। আমেরিকার বিভিন্ন প্রেসিডেন্ট তাদের ক্ষমা দেওয়ার ক্ষমতা কখনও কখনও এমনভাবে ব্যবহার করেছেন, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে বাইডেনের মতো কোনো প্রেসিডেন্ট এত জোর দিয়ে আগে বলেননি যে, তিনি কখনো এমন কিছু করবেন না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগেরবার প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তার মেয়ের শ্বশুর চার্লস কুশনারকে ক্ষমা করেন। আর বিল ক্লিনটন পদত্যাগের দিন তার সৎভাই রজারকে ক্ষমা দেন। রজার একটি মাদক সংক্রান্ত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।

ওহিওর ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি গ্রেগ ল্যান্ডসম্যান সোশাল মিডিয়া এক্সে বলেন, “একজন পিতা হিসেবে আমি বুঝতে পারি। তবে যিনি জনসেবায় মানুষের বিশ্বাস ফেরাতে চান, তার জন্য এটি একটি পিছিয়ে যাওয়া।”

আরেক ডেমোক্র্যাট, কলোরাডোর সেনেটর মাইকেল বেনেট বলেন, “আমেরিকানরা বিশ্বাস করে, বিচার ব্যবস্থা সবার জন্য ন্যায্য এবং সমান। বাইডেনের সিদ্ধান্ত সেই বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ন করেছে।”

অ্যারিজোনার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি গ্রেগ স্ট্যানটন বলেন, “আমি প্রেসিডেন্টকে সম্মান করি। তবে মনে করি, তিনি এই সিদ্ধান্তটি ভুল নিয়েছেন। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা কোনো প্রসিকিউশন ছিল না। হান্টার অপরাধ করেছে। বিচারকদের একটি প্যানেল তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।”

তবে কেউ কেউ বলছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতে যাওয়ায় জো বাইডেন তার ছেলেকে ক্ষমা করা সংক্রান্ত আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত