Beta
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪

হঠাৎ কেন পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন কেজরিওয়াল

অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

ভারতের রাজধানী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দুই দিনের মধ্যে পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

মদ নীতি সংক্রান্ত মামলায় গত ছয় মাস তিনি কারাগারে ছিলেন। দুইদিন আগে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর গতকাল রবিবার হঠাৎ তিনি এমন ঘোষণা দিলেন।

কেজরিওয়ালের বক্তব্য

আম আদমি পার্টির (এএপি) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, তিনি আদালত থেকে ন্যায়বিচার পেয়েছেন। কিন্তু এবার জনতার আদালতে তিনি ন্যায়বিচার চান।

তিনি বলেন, “দুদিন পরেই আমি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেব। জনগণ রায় না দেওয়া পর্যন্ত আমি ওই চেয়ারে বসব না। দিল্লিতে নির্বাচন কয়েক মাস বাকি। আইনি আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি, এখন জনগণের আদালতে ন্যায়বিচার পাব। জনগণের নির্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসব।

“আমি দিল্লিবাসীর কাছে জানতে চাই, কেজরিওয়াল কি নির্দোষ নাকি দোষী? আমি যদি কাজ করে থাকি, তাহলে আমাকে ভোট দিন।”

নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নিশানা করে কেজরিওয়াল অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে আবেদন করেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে তারা যেন কারাগার থেকে পদত্যাগ না করেন।

তিনি বলেন, “তারা বিজেপি করে না এমন মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়। গ্রেপ্তার হলে আমি তাদের পদত্যাগ না করে কারাগার থেকে সরকার পরিচালনা করার আহ্বান জানাই।”

নিজের পদত্যাগ না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গ্রেপ্তারের পর আমি পদত্যাগ করিনি। কারণ আমি গণতন্ত্রকে সম্মান করি এবং সংবিধান আমার কাছে সর্বোচ্চ।”

এরপর কী

অরবিন্দ কেজরিওয়াল রবিবার জানান, পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী বাছাই করতে আগামী দুই দিনের মধ্যে দিল্লিতে আম আদমির ৬০ জন বিধায়ককে নিয়ে একটি বৈঠক হবে। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি পদত্যাগ করবেন।

নিয়ম অনুসারে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে নির্বাচন হবে। নভেম্বরে মহারাষ্ট্রের সঙ্গে দিল্লির নির্বাচনও দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এবিষয়ে তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু আমি দাবি জানাচ্ছি নভেম্বরে মহারাষ্ট্রের সঙ্গে যেন দিল্লিতেও নির্বাচন হয়। এর আগ পর্যন্ত আম আদমি পার্টি থেকে একজন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

নির্বাচনে জিততে সমর্থনের জন্য তিনি জনগণের কাছে যাবেন বলে জানিয়েছেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, “আমি প্রতিটি বাড়িতে-রাস্তায় যাব এবং জনগণের কাছ থেকে রায় না পাওয়া পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসব না।”

কেজরিওয়ালের এই বক্তব্য বলে দিচ্ছে, জনসংযোগের জন্য দিল্লিতে বিশাল প্রচার অভিযানের পরিকল্পনা করেছে আম আদমি। কেজরিওয়াল ছাড়াও তার সাবেক ডেপুটি মণীশ সিসোদিয়া এই প্রচারে মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন। মণীশও এখন মদ নীতির মামলায় জামিনে রয়েছেন।

ঝুঁকি, না কি সুচিন্তিত পদক্ষেপ

মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার আগেই যেহেতু কেজরিওয়াল জনগণের রায় চান, ফলে তিনি ভোটের সুবিধা পেতে পারেন, এমনটা বলছে এনডিটিভি।

তবে কেজরিওয়ালের এই পদত্যাগের ঘোষণাকে ‘নাটক’ বলেছে বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি)। দলটি মনে করছে, এবার দিল্লির নির্বাচনে তারাই জিতবে।

এনডিটিভিকে বিজেপির নেতা হারিশ খুরানা বলেন, “৪৮ ঘণ্টা পর কেন, তার উচিৎ এখনই পদত্যাগ করা। দিল্লির মানুষ তা চাইছে। তিনি সচিবালয়ে যেতে পারছেন না, কোনও নথিতেও সাক্ষর করতে পারছেন না। এমন অবস্থায় অবিলম্বে পদত্যাগ না করার কি কারণ থাকতে পারে।”

বিজেপি আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে খুরানা বলেন, “আমরা প্রস্তুত। আজ হোক আর কাল হোক, ২৫ বছর পর দিল্লিতে আমরাই ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছি।”

কেজরিওয়াল ও সিসোদিয়া উভয়ই জনগণের রায় না নিয়ে দপ্তরে যাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অর্থাৎ তারা মুখ্যমন্ত্রীর পদের জন্য লড়ছেন না। আম আদমিকে দলের অন্য শীর্ষ নেতাদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসাতে হবে।

মাত্র কয়েক মাসের জন্য মুখ্যমন্ত্রী বাছাই করা প্রায়শই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং পরে বড় সমস্যার দিকে ধাবিত করে। উদাহরণ হিসেবে বিহারের নীতিশ কুমারের কথা বলা যায়। তিনি তার জায়গায় জিতন রাম মাঝি ও ঝাড়খন্ডের হেমন্ত সরেনকে বসিয়েছিলেন। কিন্তু নীতিশ যখন তার পদ ফেরত চাইলেন, তখন তারা তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

আগাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুবিধা ও অসুবিধা দুইই আছে। গত কয়েক মাস ধরে আম আদমির শীর্ষ নেতারা আইনি ঝামেলায় ব্যস্ত। এর মধ্যে, দিল্লিতে জলাবদ্ধতার মতো নাগরিক সমস্যা নিয়ে বিরোধীরা ক্রমাগত দিল্লি সরকারকে নিশানা করেছে। ফলে নভেম্বরে নির্বাচনের জন্য দলটি প্রস্তুতির জন্য খুব একটা সময় পাবে না।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত