Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

আবার কেন সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও করল শিক্ষার্থীরা

high-court-students-gathering
[publishpress_authors_box]

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পাঁচ দিন পর সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও করেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। তাতে বিচারাঙ্গনের নেতৃত্ব খোলনলচে বদলে গিয়েছিল। দুই মাস পর আবার সেই ধরনের কর্মসূচিতে নামল শিক্ষার্থীরা।

‘আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বিচারকদের’ পদত্যাগের দাবিতে বুধবার সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

বেলা ১১টার পর হাইকোর্টের সামনে মিছিল নিয়ে উপস্থিত হয় তারা। তার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে সবাইকে আদালত প্রাঙ্গণে ডাকেন।  

সেই ডাকে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ হাইকোর্ট মাজার গেট দিয়ে মিছিল করে সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে ঢোকে।

একই সময়ে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়।

এসব ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টে ঢোকার রাস্তাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসনাত এই কর্মসূচি ঘোষণা করে ফেইসবুকে লেখেন, “আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে আগামীকাল (বুধবার) সকাল ১১টায় হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি।” সারজিস আলম লেখেন, “যখনই শকুনরা স্বাধীনতা খামচে ধরার স্পর্ধা দেখাবে তখনই রাজপথ হবে আমাদের ঠিকানা। চলে আসুন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে। গন্তব্য-হাইকোর্ট।”

হাইকোর্ট মাজার গেট দিয়ে আদালত প্রাঙ্গনে মিছিল নিয়ে প্রবেশ করছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ‘বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী’ ব্যানার নিয়ে আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে একদল আইনজীবীও। বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদেরও একই দাবিতে পৃথকভাবে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।

বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা বলছেন, রাষ্ট্রের ভঙ্গুর অবস্থার জন্য দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ বিচারপতিরাও দায়ী। তারা তাদের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তা করেননি। ফ্যাসিস্টদের দোসর বিচারপতিরা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

এসময় আইনজীবীদের ‘দফা এক দাবি এক, দলবাজদের পদত্যাগ’, ‘ফ্যাসিস্টদের প্রেতাত্মারা, হুঁশিয়ার সাবধান’ ও ‘আইনজীবী-জনতা, গড়ে তোলো একতা’সহ বিভিন্ন শ্লোগান দিতে দেখা যায়।

ঘটনার সূত্রপাত কোথায়

হাইকোর্ট ঘেরাওয়ের ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার বিচারপতি আতাউর রহমান খান ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চের একটি ঘটনা েথকে।

দ্বৈত এই বেঞ্চে শুনানির জন্য আট শতাধিক মামলা কার্যতালিকায় ছিল। এদের অধিকাংশই ছিল আগাম জামিনের মামলা।

মঙ্গলবার বিচারকাজ শুরুর আগেই ‘দুর্নীতির’ মাধ্যমে কার্যতালিকায় মামলা তোলার অভিযোগ ওঠে। এতে প্রাথমিকভাবে বিচারকাজ বন্ধ হয়ে যায়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “সকালে কোর্ট ওঠার পর মেনশন করার সময় ব্যারিস্টার আশরাফ রহমান জ্যেষ্ঠ বিচারকের উদ্দেশে বলেন– ‘আই বেগ অ্যাপলজি মাই লর্ড, আপনার আদালতের বেঞ্চ অফিসাররা ঘুষ নিয়ে কার্যতালিকায় মামলা তুলেছেন। যারা টাকা না দিয়ে মামলা জমা দিয়েছেন, তাদের মামলা ঠিকমত দৈনিক কার্যতালিকায় দেননি। এতে অসংখ্য আইনজীবী বঞ্চিত হয়েছেন।”

অ্যাডভোকেট আমিনুল বলেন, “জ্যেষ্ঠ বিচারক তখন উত্তেজিত হয়ে ওই আইনজীবীকে তুই-তোকারিসহ নানা অশালীন ভাষায় গালাগাল দেন।

“তিনি বলেন, ‘আমি বারের নেতা ছিলাম। তোমাকে কে সাহস দিয়েছে আমার আদালতের বিরুদ্ধে কথা বলতে। আমার এজলাস থেকে বের হও, বেয়াদব, তোকে থাপ্পড় দিয়ে পুলিশে দেব’।”

তখন আইনজীবীরা হইচই শুরু করলে বিচারকরা এজলাস থেকে নেমে যান। পরে ব্যারিষ্টার আশরাফ রহমানসহ একদল আইনজীবী প্রধান বিচারপতির কাছে যান। সব শুনে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের বিচারক বদলেও দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

বিচারপতি আতাউর রহমান খান ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের যে অবকাশকালীন বেঞ্চ দায়িত্ব পালন করে আসছিল, সেখান থেকে বিচারপতি আতাউর রহমান খানকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তার জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয় বিচারপতি কাজী জিনাত হককে।

এসব ঘটনার কারণেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক বুধবার হাইকোর্ট ঘেরাওয়ের ডাক দেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে আন্দোলনেই গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। 

এরপর গত ১০ অগাস্ট এই আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডাকে হাইকোর্টে জড়ো হয়েছিল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তাদের দাবির মুখে সেদিনই পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারক।

পরে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক সৈয়দ রেফাত আহমদকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। সম্প্রতি হাইকোর্ট বিভাগে নতুন ২৩ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়। এদিকে দুই মাস নীরব থাকার পর মঙ্গলবার পুরান ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা বিক্ষোভ করে। তার পরদিনই বৈষম্যবিরোধীরা কর্মসূচি দিল সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে।    

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত