মানুষ কবে শপথ নিতে শুরু করেছিল তার সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা কঠিন। তবে ঐতিহাসিক বিভিন্ন নথি থেকে দেখা যায়, যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৩০০০ বছর আগেও শপথ প্রচলিত ছিল। নিচের শিরোনামগুলিতে ক্লিক করে মানুষের শপথ নেওয়ার কারণ পড়ুন।
দুই কারণ
মানুষ বিভিন্ন কারণে শপথ নেয়। সব মিলিয়ে শপথের কারণকে মূল দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: (১) কথা বা কাজের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানো, (২) একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা আদর্শের প্রতি অঙ্গীকার প্রকাশ।
বিশ্বাসযোগ্যতা
আইনি পটভূমিতে: সাক্ষী ও অন্যান্য ব্যক্তি সত্য বলছেন তা নিশ্চিত করার জন্য শপথ ব্যবহার করা হয়। আত্মসম্মানবোধ জাগিয়ে শপথ ব্যক্তিকে তুলনামূলক সত্যবাদী হতে উৎসাহিত করে। ব্যক্তিগত সম্পর্কে: মানুষ একে অপরের প্রতি অঙ্গীকার ও আনুগত্য প্রকাশের জন্য শপথ নিতে পারে, যেমন হয় বিয়ের সময়। শপথ বিশ্বাস গড়ে তুলতে এবং সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে পারে। পেশাগত জীবনে: কোনও পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার বা পেশার শপথ নৈতিক আচরণ এবং পেশার মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকার প্রকাশ করতে পারে।
অঙ্গীকার
আনুগত্যের শপথ: এই শপথগুলি কোনও দেশ বা সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য গৃহীত হয়। এগুলিকে দেশপ্রেম এবং জাতিকে রক্ষা করার ইচ্ছার প্রকাশ হিসাবে দেখা যেতে পারে। ধর্মীয় শপথ: কিছু ধর্মীয় ঐতিহ্য নিজেদেরকে একটি বা এক গুচ্ছ বিশ্বাসে উৎসর্গ করার জন্য শপথ ব্যবহার করে। এটি ঈশ্বর বা উচ্চতর শক্তির প্রতি একজনের ভক্তি এবং প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করার একটি উপায় হতে পারে। ব্যক্তিগত শপথ: ব্যক্তি নিজে নিজের সাথে শপথ নিতে পারে। যেমন নিজের উন্নতি বা পরিবর্তনের জন্য নতুন বছরে সে কী কী করবে তার শপথ। এটি নিজেকে উদ্বুদ্ধ করা এবং লক্ষ্যে অটুট থাকার একটি উপায় হতে পারে।
শপথের মনো–সামাজিক পটভূমি
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শপথ কথা ও কাজের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর কার্যকারিতা বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভরশীল: নৈতিক গুরুত্ব: শপথ কথা বা কাজের ঐকান্তিকতা ও পরবর্তী ফলের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে। এটি উচ্চতর মূল্যবোধ, ধর্মীয় নীতি বা আত্মসম্মানকে উদ্দীপিত করে শপথ নেওয়া ব্যক্তিকে মিথ্যা বলা বা শপথ ভঙ্গের মাধ্যমে সম্ভাব্য নৈতিকতা লঙ্ঘনের প্রতি আরও সচেতন করে। সামাজিক চাপ ও জবাবদিহিতা: শপথ প্রায়ই জনসমক্ষে বা সাক্ষীর উপস্থিতিতে গ্রহণ করা হয়। এটি শপথ গ্রহণকারীর উপর সত্যবাদী হওয়ার জন্য সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে। কারণ শপথ ভঙ্গ করলে তিনি সমাজে হেয় হতে পারেন, তার খ্যাতিতে টান পড়তে পারে, এমনকি তিনি আইনের মুখোমুখিও হতে পারেন। প্রতিশ্রুতি ও আন্তরিকতার ইঙ্গিত: শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ব্যক্তি কোনও মতাদর্শ, সত্য বা আদর্শের প্রতি প্রকাশ্যে অঙ্গীকার জানায়। এর ফলে তাদের কথার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়তে পারে।
শপথ ভঙ্গ করলে কী হয়?
শপথ ভঙ্গ করার ফল শপথের ধরনের উপর নির্ভর করে। আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার মতো আইনি শপথ ভঙ্গ করলে গুরুতর আইনি পরিণতি হতে পারে, যার মধ্যে জরিমানা, কারাদণ্ড এবং এমনকি পেশাদার সনদ বাতিলের মতো ক্ষতি হতে পারে। নির্দিষ্ট ধর্মীয় ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে শপথ ভঙ্গ করার ফলে আধ্যাত্মিক অপপরিণতি হতে পারে, যেমন অপরাধবোধ, লজ্জা বা ধর্মত্যাগ। নতুন বছরের সংকল্পের মতো ব্যক্তিগত শপথ ভঙ্গ করার ফল বাইরে থেকে না-ও বোঝা যেতে পারে।। তবে এটি শপথ ভঙ্গকারী ব্যক্তিকে হতাশ করে তুলতে পারে যার ফলে তার লক্ষ্য অর্জন ব্যাহত হতে পারে।