ভুলে যাওয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অতি সাধারণ ঘটনা। পথে চলতে ফিরতে কত ঘটনাই তো আমরা ঘটতে দেখি। কিন্তু এর ক’টি আমাদের মনে থাকে?
কিন্তু কেন আমরা ভুলে যাই? এটি কি শুধুই স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা? নাকি অন্য কিছু?
১৯ শতকের জার্মান মনোবিজ্ঞানী হারম্যান এবিংহাউস তার ‘ফরগেটিং কার্ভস’ তত্ত্বে দেখিয়েছিলেন বেশিরভাগ মানুষ নতুন তথ্যের বিবরণ দ্রুত ভুলে যায়। তবে সময়ের সাথে সাথে এই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা কমে আসে।
সম্প্রতি নিউরো সায়েন্টিস্টরা এই তত্ত্বের সত্যতার প্রমাণ পেয়েছেন।
গবেষকরা বলছেন, ভুলে যাওয়া কখনো কখনো বেশ কাজের হতে পারে। আমাদের মস্তিষ্কে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ তথ্য প্রবাহিত হয়। এই প্রতিটি তথ্য মনে রাখতে গেলে তথ্য সংরক্ষণ করা খুব কঠিন হয়ে যেত।
কোনও বিষয়ে আমরা যত বেশি মনোযোগ দিই, ওই বিষয়টি আমাদের স্মৃতিতে ততো বেশি টিকে থাকে। এই একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা প্রতিদিনের অপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলো ভুলে যাই।
নিউরো সায়েন্টিস্টরা বলছেন কোন একটি বিষয় বার বার স্মরণ করার চেষ্টার মধ্য দিয়ে ওই বিষয়টি আমাদের মস্তিষ্কে আরও ভালোভাবে গেঁথে যায়। যেমন- নতুন একটি রাস্তায় চলাচল করতে গেলে যে কারও বেগ পেতে হতে পারে। কিন্তু পর পর দু-তিনদিন তাকে যদি একই রাস্তায় চলাফেরা করতে হয়, তবে প্রতিবার ওই রাস্তায় গমন করতে গিয়ে তিনি পথ মনে করার চেষ্টা করবেন। আর এভাবেই রাস্তাটি ধীরে ধীরে তার খুব ভালো চেনা হয়ে উঠবে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এই কাজ করতে গিয়ে মস্তিষ্ক পুরোনো কিছু তথ্য দুর্বল করে ফেলে। এই কাজ করতে গিয়ে নাকি পুরনো কোনও রাস্তার বিস্তারিত তথ্যও মুছে ফেলতে পারে আমাদের মস্তিষ্ক।
স্কুলের পড়া হুবহু বলতে পারা বিরাট কৃতিত্বের ব্যাপার। যিনি এই কাজটি পারেন তাকে জিনিয়াস বলতে আমাদের একেবারেই বাঁধবে না। সভা সেমিনারে যারা বইয়ের পৃষ্ঠা নম্বর সহ অনর্গল বক্তৃতা দিতে পারেন তারা বাহবা পাবেন এমনটাই স্বাভাবিক। এমন ব্যক্তিরা চাইলেও নাকি তথ্য ভুলে যান না।
কিন্তু কখনো কখনো তথ্য ভুলতে পারা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরী। বিশেষ করে যারা পিটিএসডি বা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে নেতিবাচক স্মৃতি ভুলতে না পারা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। পিটিএসডি-তে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনুকূল পরিবেশে বেদনাদায়ক স্মৃতি মনে পড়ে যায়, আর তখন পরিস্থিতির সঙ্গে তারা নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারেন না।
মোদ্দা কথা, বিভিন্ন কারণে আমরা তথ্য ভুলে যেতে পারি। এতে পর্যাপ্ত মনোযোগের অভাব যেমন থাকতে পারে, তেমনি সময়ের সঙ্গেও অনেক স্মৃতী ম্লান হয়ে যায়।
গবেষকদের মতে ভুলে যাওয়া সব স্মৃতিই আবার হারিয়ে যায়না। সেগুলো আমাদের মস্তিষ্কেই অনধিগম্য অবস্থায় থাকে। ভুলে যাওয়ার এই বিভিন্ন রূপ আমাদের মস্তিষ্ককে কার্যকরভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।