নাবিল আর মিতুর প্রেমের শুরুটা হাই স্কুলে। প্রাইভেট পড়তে গিয়ে দুজনের প্রথম আলাপ। তারপর মাঝে মাঝে একসাথে বাড়ি ফেরা। এভাবে একদিন প্রেম। দুজনে মাত্রই তখন ক্লাস টেনে উঠেছে। কৈশোরের লুকুচুরি প্রেম তাদের। সম্পর্কটা একদিন আরেকটু বড় হলো। কৈশোর পেরিয়ে দুজনের পা রাখল যৌবনে। স্কুল পেরিয়ে কলেজ, আর একদিন দুজনেই পড়ার সুযোগ পেল একই বিশ্ববিদ্যালয়ে। লুকিয়ে প্রেমের দিন তবে ফুরোলো!
বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর চুটিয়ে প্রেম। আর তারপরই দুজনের বিচ্ছেদ। অথচ তাদের দেখে মনে হতো, “দুজন দুজনার কত যে আপন”।
কৈশোরের প্রেম বড় বেলায় ভেঙে যায় অনেকেরই। কারণ, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে জীবন বদলায়। বদলে যায় দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনবোধ। স্কুলের বন্ধুত্ব অথবা প্রেম যতোই আন্তরিক হোক না কেন, একটা সময় আসে যখন ‘দুজনার দুটি পথ ওগো দুটি দিকে’ যায় বেঁকে। জীবনের এই সময়টি কারও কলেজ জীবনেই আসতে পারে, আবার কারও আসে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। কারও আবার পেশাগত জীবনে প্রবেশের পর।
রিলেশনশিপ কাউন্সেলরদের মতে, হাই স্কুলের প্রেমগুলো এমন পরিবেশে গড়ে ওঠে যখন দুটো মানুষের প্রায় প্রতিদিন যোগাযোগ হয়। এ সময় সম্পর্ক নিয়ে দুজনের আবেগের গভীরতা থাকে অনেক বেশি। তবে এই সম্পর্কগুলো ব্যক্তিগত অভিরুচি এবং অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে গড়ে উঠলে তবেই একটি শক্তিশালী ভিত্তি পায়।
তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হয় না।
গভীর বন্ধুত্ব এবং দারুণ বোঝাপড়া। এ দুটোই হাই স্কুলের প্রেমিক-প্রেমিকাদের একসঙ্গে রাখতে পারে। তবে, জীবনের কোনও এক পর্যায়ে দুটো মানুষের দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এভাবে একদিন সম্পর্কও শেষ হয়ে যায়।
কিন্তু কেন?
মুম্বাই ভিত্তিক ট্রমা সাইকোলজিস্ট অ্যাবসি স্যাম বলেন, “এই ধরনের সম্পর্কগুলো গড়ে ওঠে ভরা আবেগ এবং স্নায়ুবিক বিকাশের বয়সে। যে সময় মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করতে থাকে। তবে নতুন পরিবেশ আর অভিজ্ঞতার সংস্পর্শে তাদের মূল্যবোধ, জীবনের লক্ষ্য আর মনযোগের কেন্দ্র পাল্টে যায়।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৈশোরে সঙ্গীর সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হওয়া, ভালোবাসা বিনিময়, আবেগময় কথোপকথন সম্পর্ককে করে তোলে মজবুত। অথচ একটি বয়সে এসে এই বিষয়গুলোই আর নিয়মিত ঘটে না।
স্যাম মনে করেন, দুটো মানুষ কৈশোর পেরিয়ে যখন যৌবনে পা দেয়, তারা দুজনেই আবিষ্কার করে জীবনের নানা পরিবর্তন। অতীতের সঙ্গে নিজেদের পার্থক্যগুলোও এ সময় ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জীবন সম্পর্কে দুজনের দৃষ্টিভঙ্গিতেও আসতে পারে বড় পরিবর্তন। প্রাপ্তমনস্ক হওয়ার এই পর্যায়ে দুজনের ভেতর সৃষ্টি হয় দূরত্ব। যার ফলে দুজনের মাঝে এমনকি সংঘাতও হতে পারে।
আসলে কৈশোরের তুমুল প্রেমের মাঝে সঙ্গীর জীবন বোধ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়। কেননা এই সময় দুজনেই নিজের ব্যাপারে নিত্যনতুন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে যায়। সঙ্গীর কাছে নিজেদের চাওয়া পাওয়ার ব্যাপারগুলোও এ-সময় স্বচ্ছ থাকে না।
সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক রেড্ডিটেও এ নিয়ে হয়েছিল বিস্তর আলোচনা। সেখানে এক রেড্ডিট ইউজারের মন্তব্য ছিল এরকম-
“বয়স যখন সবে ১৯, তখনও মস্তিষ্ক বিকশিত হতে থাকে। এ সময় মানুষের প্রচুর নতুন অভিজ্ঞতা হয়। দ্রুত পরিবর্তন এবং বিকাশ এ সময়ের বৈশিষ্ট্য। ফলে আপনার হাই স্কুল প্রেমিকের সাথে যেসব বিষয়ে মিল ছিল, জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার পরিবর্তনের কারণে কয়েক বছরের মধ্যে সেগুলো আর থাকবে না। তাই দুজন মানুষ একসঙ্গে এবং একই পথে বেড়ে উঠলেই যে সবকিছু খাপে খাপে মিলে যাবে এমনটা ভাবা একটু কঠিন।”
অবশ্য ব্যতিক্রম আছে। কৈশোর কিংবা উঠতি তারুণ্যের কোনও কোনও প্রেম শেষমেশ সংসারে গাঁটছড়া বাঁধে। এ ধরনের সম্পর্কগুলো সাধারণত খুবই শক্তিশালী হয়। এক্ষেত্রে দুদিক থেকেই দৃঢ় বন্ধুত্ব বজায় রেখে, খুব ভালো বোঝাপড়া প্রয়োজন। তবেই সমস্ত প্রতিকূলতাকে পরাজিত করে কৈশোর বেলার প্রেম দেখবে সাফল্যের চেহারা।