Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

হাইপারসনিক মিসাইল কেন ভারতের জন্য বড় সাফল্য

India Hypersonic
[publishpress_authors_box]

শব্দের চেয়ে কয়েকগুণ দ্রুতগতিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র- হাইপারসনিক মিসাইলের সফল পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে সামরিক শক্তিতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের যে প্রতিযোগিতা চলছে, সেই দৌড়ে সামিল হলো ভারত।

গত ১৭ নভেম্বর ভারত সফলভাবে নতুন প্রজন্মের এই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায়। এর মধ্যে দিয়ে এশিয়ায় চীন ও উত্তর কোরিয়ার পর হাইপারসনিক মিসাইলের মালিক হলো ভারত।

যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়া এরই মধ্যে এই ক্ষেপণোস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। সেই তালিকায় এবার নাম লেখাল ভারত।

এতদিন ধরে সামরিক ক্ষমতাধর দেশগুলোর হাতে যেসব দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছিল, সেগুলো অনেকটা সেকেলে হওয়ায় তার স্থান পূরণে দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে—কার আগে কে নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে পারে।

পরাশক্তিগুলোর হাতে এখন যেসব প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র আছে, এগুলো যেভাবে ঠেকাতে হবে তার কৌশল ইতোমধ্যেই বের করে ফেলেছে প্রতিপক্ষ দেশগুলো।

ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে একাধিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। উড়িষ্যার উপকূল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে মিসাইলটি উৎক্ষেপণ করা হয়।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ১৭ নভেম্বর সোশাল মিডিয়া এক্সে লেখেন, “ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। আমরা সফলভাবে উড়িশ্যার উপকূলের কাছে ড. এপিজে আবদুল কালাম দ্বীপ থেকে হাইপারসনিক মিসাইলের ফ্লাইট পরীক্ষা শেষ করেছি।

“এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। গুরুত্বপূর্ণ এই সাফল্য আমাদের দেশকে সেই বিশেষ দেশের তালিকায় যুক্ত করেছে, যারা উন্নত ও অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি অর্জন করতে সক্ষম।”

হাইপারসনিক মিসাইলটি তৈরি করেছে ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)। আর এতে সহায়তা করেছে ড. এপিজে আবদুল কালাম মিসাইল কমপ্লেক্স ও সমরাস্ত্র শিল্পের অন্য অংশীদাররা।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “মিসাইলটি বিভিন্ন রেঞ্জ ব্যবস্থার মাধ্যমে ট্র্যাক করা হয়। এতে একাধিক ডোমেইন বসানো হয়েছিল। ডাউন রেঞ্জ শিপ স্টেশন থেকে পাওয়া ফ্লাইট ডেটা সফল টার্মিনাল ম্যানুভার ও লক্ষ্যবস্তুতে এর নিখুতভাবে আঘাত হানার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।”

উড়িশ্যার উপকূলের কাছে ড. এপিজে আবদুল কালাম দ্বীপ থেকে হাইপারসনিক মিসাইলের পরীক্ষা চালায় ভারত।

ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইরান ও ইসরায়েলের মতো অন্যান্য দেশও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করছে।

হাইপারসনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে রাশিয়া ও চীনের চেয়ে পিছিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি এখনও সফলভাবে কোনও হাইপারসনিক মিসাইল পরীক্ষা করতে পারেনি।

২০২০ সালে সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের সময় প্রথমবারের মতো হাইপারসনিক মিসাইল ব্যবহার করে রাশিয়া। গতি ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতিক্রম করার সক্ষমতার কারণে কিনজাল মিসাইলকে একটি আদর্শ অস্ত্র আখ্যা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। এরপর ইউক্রেন অভিযানের সময়ও একাধিকবার কিনজাল ব্যবহার করেছে রাশিয়া।

হাইপারসনিক অস্ত্রের ধারণাটি প্রথম ১৯৩০ সালের দিকে জার্মান প্রকৌশলী ড. ইউজিন স্যাঙ্গার ও ইরামগার্দ ফ্লুগের মাথায় আসে। তারা তখন ‘সিলভারভোগেল’ নামে একটি হাইপারসনিক যানের নকশাও করেছিলেন। কিন্তু সেই নকশা অনুযায়ী রাজনৈতিক কারণে পরবর্তী জার্মান বিজ্ঞানীরা আগাতে পারেননি।

এরপর ১৯৭০-৮০ সালের দিকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকেল নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০০০ সালের দিকে রাশিয়া কেএইচ-৪৭এম২ কিনজাল মিসাইল তৈরির কাজ শুরু করে। ২০১০ সালে মিসাইলটির প্রথম পরীক্ষা করা হয়।

হাইপারসনিক অস্ত্র শব্দের গতির চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গতিতে, অর্থাৎ ম্যাক ৫-এ চলতে সক্ষম। ম্যাক হলো শব্দের গতির পরিমাপক মানদণ্ড। ১ ম্যাক সমান ঘণ্টায় ১ হাজার ২৩৫ কিলোমিটার।

অত্যাধুনিক এই মিসাইল ব্যালিস্টিক মিসাইলের তুলনায় বায়ুমণ্ডলের অনেক নিচ দিয়ে উড়ে। একে শনাক্ত করা কঠিন। এগুলো দ্রুত লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানো ছাড়াও বায়ুমণ্ডলে থাকা অবস্থাতেই দিক পরিবর্তন করতে পারে।

বায়ুমণ্ডলে থাকা অবস্থাতেই দিক পরিবর্তন করতে পারে হাইপারসনিক মিসাইল।

হাইপারসনিক অস্ত্রের দুটি প্রধান ধরণ রয়েছে। একটি হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল (এইচজিভি) ও অন্যটি হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইল (এইচসিএম)।

ভয়েস অব আমেরিকার মতে, সাধারণ ব্যালিস্টিক মিসাইলের মতো এইচজিভি একটি রকেট থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এরপর গ্লাইড ভেহিকলটি রকেট থেকে পৃথক হয়ে কমপক্ষে ম্যাক ৫ গতিতে লক্ষ্যবস্তুর দিকে ধাবিত হয়।

এইচসিএম লক্ষ্য নির্ধারণের পর উচ্চগতির এয়ার-ব্রিদিং ইঞ্জিন, যা স্ক্র্যামজেট নামে পরিচিত, ব্যবহার করে।

প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিনের মতে, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র জাতীয় নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

এমন অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। এর কারণ হলো, এগুলোর উচ্চগতির ক্ষমতা ও গতি। এই বৈশিষ্ট্যগুলো বর্তমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে এড়িয়ে যেতে সহায়তা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জেনারেল জন হাইটেন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ওয়াশিংটনে বলেন, “হুমকি যাই হোক না কেন, যদি তা দেখা না যায়, তবে এর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা সম্ভব নয়।”

ব্যালিস্টিক মিসাইলও কমপক্ষে ম্যাক ৫ গতিতে গতিতে চলতে সক্ষম। তবে এগুলোর গতিপথ অনুমান ও শক্তিশালী রাডারের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।

পাওয়ার স্টাডিজ সেন্টারের একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে, “হাইপারসনিক প্রযুক্তি ব্যালিস্টিক মিসাইল থেকে আলাদা। কারণ, এটি ব্যালিস্টিক গতিপথ অনুসরণ করে না এবং লক্ষ্যবস্তুর দিকে চলার পথে গতিশীল হতে পারে। হাইপারসনিক অস্ত্র তাদের গতি ও কম উচ্চতায় উড়ার কারণে শনাক্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে সক্ষম।”

তবে হাইপারসনিক অস্ত্রের নিজস্ব কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

লকহিড মার্টিন বলছে, এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে হলে ‘বিভিন্ন কঠিন প্রকৌশল ও পদার্থবিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জ’ অতিক্রম করতে হয়, যেমন ঘর্ষণ ও বায়ুর প্রতিরোধের কারণে সৃষ্ট তাপ। হাইপারসনিক ফ্লাইটের সময় যোগাযোগ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। একটি ব্যবস্থায় অপারেটর, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সেন্সর সিস্টেমের মাধ্যমে সংযোগ বজায় রাখতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত