Beta
শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

ভারতের পেঁয়াজ আসছে না কেন

পেঁয়াজ
ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর গত ৫ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত মাত্র ৬ হাজার টন পেঁয়াজ এনেছেন ব্যবসায়ীরা।
[publishpress_authors_box]

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে প্রায় একমাস হলো। এরও আগে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) এবং ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলেছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত পেঁয়াজ আসছে না। ফলে পেঁয়াজ আমদানির প্রতিযোগিতা না থাকায় এবার চড়া বাজার আরও চড়ে চলেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুললেও ৪০ শতাংশ শুল্ক বহাল রেখেছে। এ কারণেই দেশটির পেঁয়াজ আমদানির আগ্রহ কমেছে তাদের।  

গত ৪ মে ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর মাত্র ৬ হাজার টন পেঁয়াজ এনেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তা বাজার সামালে সামান্যই ভূমিকা রেখেছে।

এ পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। তবে এ দশা আগে কখনও হয়নি। সবসময়ই দেখা গেছে, ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে দেশের বাজারে দ্রুতই এর সুফল মেলে।

আগে দেখা যেত, বাজার চড়লে বিকল্প দেশ থেকেও পেঁয়াজ আনা হতো। দাম তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে ভারতের পেঁয়াজের সঙ্গে অন্য পেঁয়াজ পেরে উঠত না। তখন একচেটিয়া ব্যবসা করতো ভারতীয় পেঁয়াজ আনা ব্যবসায়ীরা। তবে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমত।

কোরবানি ঈদ ঘিরে এখন বাজার চড়েই যাচ্ছে, কারণ পেঁয়াজ আমদানির প্রতিযোগিতা নেই।

পাইকারি বাজারে এখন ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি দরে।

খুচরা বাজারে এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মান ও আকার ভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুফল নেই

ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে গত ৪ মে। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দেশটির কৃষকদের চাপ থাকলেও মোদি সরকার সেটি আমলে নেয়নি।

পেঁয়াজ উৎপাদনকারী প্রদেশ মহারাষ্ট্রে নির্বাচনের দুদিন আগে হঠাৎ করেই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। কিন্তু ৪০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখে। একইসঙ্গে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য (এমইপি) টনপ্রতি ৫০০ ডলার বহাল রাখে।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর প্রথম সপ্তাহে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছিল। তবে সেই প্রবণতা স্থায়ী হয়নি।

ভারতের পেঁয়াজ আসছে না দেখে দেশের ফড়িয়ারা বাড়াতে থাকে দাম। তা বাড়তে বাড়তে ৬৫ টাকার পেঁয়াজ এখন ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তর। তাদের সর্বশেষ হিসাবে, ২০২৩ সালের ৫ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৩০ মে পর্যন্ত ২৬ লাখ টন আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে। আর একই সময়ে দেশে পেঁয়াজ এসেছে ৭ লাখ ২৪ হাজার টন। আর ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর গত ৫ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত মাত্র ৬ হাজার টন পেঁয়াজ এনেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বোঝাই যাচ্ছে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুফল মিলেনি।

হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “শেষ পর্যন্ত ভারত ৪০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখবে, আমরা সেটি চিন্তাই করিনি। আর ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য টন প্রতি ৫০০ ডলার নির্ধারিত থাকলে দাম এতটা বাড়তো না।”

এই আমদানিকারকের হিসাবে, ভারত থেকে প্রতিটন পেঁয়াজ আমদানি করে দেশের স্থলবন্দর হিলি পর্যন্ত আনতে খরচ হচ্ছে কেজি ৭২-৭৪ টাকা। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজ কেনা পড়ছে কেজি ২২ রুপি দরে। ৪০ শতাংশ ভারতীয় শুল্ক বাবদ যাচ্ছে ১৮ টাকা। মহারাষ্ট্র থেকে হিলি পর্যন্ত গাড়ি ভাড়া ৫ রুপি হিসাবে ভারতীয় অংশ পর্যন্ত খরচ পড়ছে ৪৫ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা পড়ছে ৬২ টাকা। এর সঙ্গে বাংলাদেশ কাস্টমসে শুল্ক-এক্সাইজ বাবদ খরচ কেজিতে ৬ টাকা। সব মিলিয়ে কেজিতে খরচ পড়ছে ৬৮ টাকা। মুনাফা যোগ করে সেটি কেজি ৭৪ টাকায় বিক্রি করবে আমদানিকারকরা। চট্টগ্রাম-ঢাকায় সেটি বিক্রি হয়তো পাইকারিতে কেজি ৮০ টাকার ওপরে বিক্রি হবে।

শহীদুল ইসলাম বলেন, “ভারত থেকে এত দামে পেঁয়াজ আমরা কখনোই আনিনি। ফলে এত দাম থাকলে বাজারে সুবিধা করতে পারবে না ভারতীয় পেঁয়াজ। সেজন্য এলসি খুলে আমরা আমদানি করিনি। কিন্তু দেশের বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকার ওপরে উঠায় আমদানির চিন্তা করছি।”

চোরাপথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে। সকাল সন্ধ্যার পুরনো ছবি।

ভারতের শুল্ক ছাড়ের অপেক্ষা ব্যবসায়ীদের

পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৪০ শতাংশ শুল্ক অব্যাহত থাকলে ভারতীয় পেঁয়াজ দেশের বাজারে খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না। বরং চোরাইপথে ভারতীয় পেঁয়াজ এসে দেশের বাজার সয়লাব হয়ে যাবে। আগে আমরা সেটি দেখেছি। বাংলাদেশি ও ভারতীয় ব্যবসায়ীরা চান এই শুল্ক প্রত্যাহার করা হোক। কিন্তু ভারতে এখন লোকসভা নির্বাচনের ভোটের ফলের দিকে সবার নজর। আশা করা যাচ্ছে, মঙ্গলবারের মধ্যেই চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে ভারতে সরকারে নতুন কে আসছেন। এরপর শুল্ক প্রত্যাহার বা বহাল রাখার বিষয়টিতে তারা নজর দেবেন।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ১০ দিন পরই বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। ফলে এই ঈদ ঘিরে প্রচুর পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এখন সেই বাড়তি চাহিদার কারণে বাজারে হু হু করে দাম বাড়বে। ফলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি নতুন সিদ্ধান্ত না আসে তাহলে চড়া দামেই পেঁয়াজ খেতে হবে দেশের মানুষকে।

খাতুনগঞ্জের প্রবীন এক আড়তদার আফসোস করে বলেন, “একাধিকবার বিপদে পড়ে ধীরে ধীরে আমরা পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়িয়েছি। পেঁয়াজ উৎপাদন করে আমরা স্বাবলম্বী হওয়ার দিকেই আগাচ্ছি।

“ভারত রপ্তানি প্রত্যাহার করার পর শুল্ক বহাল রাখায় আমাদের লক্ষ্য অর্জনে আরও একধাপ আগানোর সুযোগ ছিল। মানুষকে দেশি পেঁয়াজ খেতে অভ্যস্ত করে দেশের টাকা দেশেই রাখার একটা ভালো সুযোগ ছিল। কিন্তু ক্রমাগত দাম বাড়ায় সেই সুযোগ আমরা হাতছাড়া করছি।”

দেশি পেঁয়াজ কখনও খুচরায় কেজি ৬৫ টাকার ওপর বিক্রি হওয়া উচিত নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই দাম ঠিক রাখতে পারলে বিদেশি কোনও পেঁয়াজ দেশে সুবিধা করতে পারবে না। কিন্তু সেই কাজটি করবে কে?”

বিকল্প দেশ থেকে আমদানির চিন্তা

ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় দেশের আমদানিকারকরা আগেভাগেই বিকল্প গন্তব্য থেকে পেঁয়াজ আনার হাত গোটান। তবে ৪০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকায় তারা ফের বিকল্পের খোঁজ করছেন, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।

এই সুযোগে দেশি ফঁড়িয়ারা যখন দাম ইচ্ছে মতো বাড়াচ্ছেন, তখন আবারও বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির খোঁজ চলছে।

খাতুনগঞ্জ ভিত্তিক কাঁচাপণ্যের এক আমদানিকারক বলছেন, বিকল্প দেশ থেকে আনতে গেলে খরচ পড়বে ৫৫ টাকার মতো। আর দেশের বাজারে দাম ৮০ টাকার বেশি। ফলে বাজার ধরতে সমস্যা হবে না। ইতোমধ্যে তুরস্ক, চীন, পাকিস্তান, মিশরের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা হয়েছে।

তিনি বলেন, “এখন সমুদ্রপথে পেঁয়াজ আনতে সমস্যা হচ্ছে দুটি। একটি হচ্ছে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে সেই পেঁয়াজ দেশে পৌঁছানো। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ভারত সরকার যদি ৪০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয় তখন কী হবে?

“এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আমরা ভারতে নতুন সরকার গঠন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত