মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তর্বর্তী সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও অনেক ভোগ্যপণ্যের দাম এখনও সহনীয় পর্যায়ে নামেনি।
পাঁচ দিন আগে বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে কেবল ব্রয়লার মুরগি; তাও সব এলাকায় নয়। যারা ব্রয়লার মুরগি খেতে পছন্দ করেন না, তাদের বেশি দামে সোনালী কিনতে হচ্ছে।
নির্ধারিত দামের অনেক বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে ডিম।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
এ পরিস্থিতে আমিষের চাহিদা মেটাতে বাড়তি খরচ লাগায় নিম্ন আয়ের মানুষকে কমই কিনতে হচ্ছে কিংবা কেনা থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে।
ঢাকার অধিকাংশ বাজারে এক কেজির ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে কোনও কোনও বাজারে এক কেজির ব্রয়লার মুরগি ১৮৫-১৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
সব বাজারেই হালকা বাদামি রঙ্গের ডিম (ফার্ম) এক ডজন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে দেখা যায়। সোনালী মুরগির কেজি ছিল ২৭০-২৮০ টাকা।
অথচ গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণ করে দেয়।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম রাখা হবে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। তাতে এক ডজন ডিমের দাম পড়বে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।
খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা ও সোনালি মুরগি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা দরে বিক্রি করতে নির্দেশনা দেয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানায়, উৎপাদন পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম পড়বে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, যা পাইকারিতে হবে ১১ টাকা শূন্য ১ পয়সা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম উৎপাদন পর্যায়ে পড়বে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা ও পাইকারি পর্যায়ে দাম পড়বে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা। সোনালী মুরগি উৎপাদন পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা ও পাইকারিতে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা কেজি দরে বিক্রি হবে।
তবে পাইকারি বাজারের এই মূল্য কার্যকর না হওয়ায় খুচরা বাজারেও বাড়তি দামে এই পণ্যগুলো কিনতে হচ্ছে।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের মেঘনা ফার্মের মালিক নজরুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বেঁধে দেওয়া দামে বেচাকেনা করা যায় না। আনা নেওয়া করতে গিয়ে কত ডিম ভেঙে যায়। তাছাড়া মুরগি গরমে মারা যাচ্ছে। এ কারণে দাম বাড়ে।”
ঢাকার নর্দায় মোড়ল কাঁচা বাজারের বিক্রেতা মো. কবির বলেন, সোনালী মুরগী ২৮০ টাকার কমে বিক্রি করা যায় না।
টিন সেডের দোকানে গরমে সারারাত ফ্যান চালু রাখতে হচ্ছে, বাতাস দিতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিল বাড়ছে। এই কারণে দাম কমাতে পারছেন না তিনি।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে মুরগি ও ডিমের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়।
পাশাপাশি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এসব পণ্যের যৌক্তিক মূল্য সঠিকভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত রবিবার অধিদপ্তর ডিম ও মুরগির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দেয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পোলট্রি খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মতামতের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জন্য ডিম ও মুরগির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ফসল, মাছ ও মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে এসব পণ্যের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাছাড়া সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ক্রেতা সমাগম বেশি থাকায় শুক্রবারে দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকে বলেও ক্রেতাদের অভিযোগ রয়েছে।
মিজানুর রহমান এসেছিলেন কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে। তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি এখানে একটি অফিসে কাজ করি। আজকে আমার ডিউটি ছিল। তাই ভাবলাম কিছু বাজার সদাই করে নিয়ে যাই। একে তো ভ্যাবসা গরম। আবার অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার সব কিছুর দাম একটু বেশি হাঁকছে বিক্রেতারা।”
কেবল দাম বেঁধে দেওয়া নয়, আমদানি করেও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি ভারত থেকে আড়াই লাখ ডিম আমদানি করা হলেও তাতে বাজারে বড় ধরনের প্রভাব রাখতে পারেনি। কারণ, সরবরাহের চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি। প্রতিদিন ৪ কোটির বেশি ডিম কেনেন ভোক্তারা।
তবে ভারত থেকে ৭-৮ টাকার মধ্যে ডিম আমদানি করা গেলেও বাংলাদেশে এর উৎপাদন ব্যয় পড়ছে ১০ টাকার বেশি। এর কারণ হিসেবে উৎপাদকরা প্রাণিখাদ্যের দাম বেশির অজুহাত দিচ্ছেন।