অঞ্চলিক যুদ্ধের দুয়ারে দাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য। ইরান যেকোনও মুহূর্তে ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারে। আর এমনটা হলে মধ্যপ্রাচ্যের আরও অনেক দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আর এমন পরিস্থিতির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ জেনারেল গোপনে ও অঘোষিত সফরে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্স জেনারেল ও দেশটির জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ সি কিউ ব্রাউন সম্প্রতি জর্ডান দিয়ে তার মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করেছেন। মিসর ও ইসরায়েল ছাড়াও তিনি আরও কয়েকটি দেশে যেতে পারেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধ এড়িয়ে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতেই সি কিউ ব্রাউন গোপনে এই সফর করছেন। এসময় তিনি ওই অঞ্চলের একাধিক দেশের জেনারেলদের সঙ্গে সীমান্ত নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক করবেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সামরিক বাহিনীর প্রধানরা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কী ভাবছেন তা জানার চেষ্টা করবেন যুক্তরাষ্ট্রের এই শীর্ষ জেনারেল।
ব্রাউন এমন সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে সফর করছেন যখন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সমাঝোতা ও যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রাউনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই চুক্তি হলে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনার পারদ ক্রমশ নেমে আসবে।
জর্ডানে যাওয়ার আগে রয়টার্সকে ব্রাউন বলেন, “আমার সমকক্ষদের সঙ্গে আলোচনার সময়, আমরা কোনও ধরনের ব্যাপক উত্তেজনা রোধ করতে এবং একটি বৃহত্তর সংঘর্ষ এড়াতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে কী কী করতে পারি, সে সম্পর্কে আমরা চিন্তা করছি।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গাজা যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই চেষ্টাও চলছে ১১ মাস ধরে। সংঘাত গাজার বিশাল অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েল এবং লেবাননের ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর সঙ্গে সীমান্ত সংঘাত শুরু হয়েছে। লোহিত সাগর কার্যত অচল করে রেখেছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা সিরিয়া, ইরাক ও জর্ডানে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর উপর হামলা চালাচ্ছে।
ইরান ও এর মিত্রদের নতুন কোনও হামলা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। দেশটি মধ্যপ্রাচ্য থেকে থিওডোর রুজভেল্ট ক্যারিয়ার সরিয়ে আব্রাহাম লিঙ্কন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার মোতায়েন করেছে।
জাতিসংঘও মধ্যপ্রাচ্যে এয়ার ফোর্স এফ-২২ স্কোয়াড্রন ও একটি ক্রুজ মিসাইলবাহী সাবমেরিন মোতায়েন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ব্রাউন বলেন, “আমরা একটি ব্যাপক সংঘর্ষ রোধে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠানোর জন্য অতিরিক্ত সামরিক শক্তি নিয়োগ দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের বাহিনীর উপর আক্রমণ হলে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতেরও ব্যবস্থা নিয়েছি।”
গত মাসে ইরানের রাজধানী তেহরানের উপকণ্ঠে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া নিহত হন। ওই হামলার জন্য ইরান ইসরায়েলকে দায়ী করছে। যদিও ইসরায়েল এখনও হানিয়াকে হত্যা নিয়ে কোনও বক্তব্য দেয়নি।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয় হিজবুল্লাহর এক জ্যেষ্ঠ কমান্ডার। ওই ঘটনার জেরে হিজবুল্লাহও প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ইরান ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও হামলা চালানো হয়নি। গত শুক্রবার ইরানের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকাচি টেলিফোনে কথা বলেন ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে। সেসময় তিনি ইসরায়েলে ইরানের হামলা চালানোর অধিকার আছে বলে জানান আরাকাচি।