মস্কোর কাছে কনসার্ট হলে শুক্রবার হামলা চালিয়েছে ইসলামিক স্টেট, এমন তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে। দেশটির এক কর্মকর্তা শনিবার রয়টার্সকে একথা বলেন।
বলা হচ্ছে, ইসলামিক স্টেটের আফগান শাখা আইএসআইএস-কে রাশিয়ায় এই হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে এই সংগঠনটি হঠাৎ কেন রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর কাছে এমন হামলা চালাল, এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন পর্যবেক্ষকরা।
আইএসআইএস-কে কারা
ইসলামিক স্টেট খোরাসান (আইএসআইএস-কে) ২০১৪ সালের শেষের দিকে পূর্ব আফগানিস্তানে আত্মপ্রকাশ করে। এটি ইরান, তুর্কমেনিস্তান ও আফগানিস্তানের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত অঞ্চলের পুরোনো নাম ‘খোরাসান’ থেকে নামকরণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী থেকে পলাতক সদস্যদের নিয়ে এটি গঠিত হয়েছিল। এদের মধ্যে রয়েছে আল-কায়েদা, তেহরিক-ই-তালেবান (টিটিপি) এবং আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সাবেক তালেবান যোদ্ধারা।
আইএসআইএস-কে ইসলামিক স্টেটের অন্যতম সক্রিয় আঞ্চলিক শাখা। ২০১৮ সালে এর সদস্য সংখ্যা সর্বাধিক হলেও পরে তা কমতে থাকে। তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের ফলে সংগঠনটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে আইএসআইএস-কে-এর মতো চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে তাদের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
আইএসআইএস-কে পরিচালিত কিছু উল্লেখযোগ্য হামলা
আইএসআইএস-কে-এর বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের ভেতরে ও বাইরে বহু মসজিদে হামলার অভিযোগ রয়েছে।
এই বছরের শুরুতে ইরানের দুইটি শহরে বোমা হামলায় প্রায় ১০০ জন নিহত হয়। এসব হামলায় আইএসআইএস-কে-এর হাত রয়েছে, এমন প্রমাণ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কাবুলের রুশ দূতাবাসে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৬ জন নিহত হয়। আইএসআইএস-কে এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে।
২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার সময় কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছিল। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ সেনা ও প্রায় ১৭০ জন নিহত হয়। তখন আইএসআইএস-কে এই হামলার দায় স্বীকার করে।
এই মাসের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর এক জেনারেল আইএসআইএস-কে নিয়ে একটি সতর্কতা দেন। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, গোষ্ঠীটি ‘ছয় মাসের মধ্যে এবং খুব অল্প বা কোনও সতর্কতা ছাড়াই’ আফগানিস্তানের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা স্বার্থে আক্রমণ করতে পারে।
রাশিয়ায় কেন হামলা
শুক্রবার রাশিয়ায় আইএসআইএস-কে-এর হামলাটি নতুন করে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই গোষ্ঠীটি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধিতা করেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সৌফান সেন্টারের কলিন ক্লার্ক বলেন, “গত দুই বছর ধরে আইএসআইএস-কে রাশিয়ার প্রতি মনোযোগী। পুতিনের সমালোচনা করে প্রায়ই তারা প্রচারণা চালায়।”
আর ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, “আইএসআইএস-কে রাশিয়াকে নিয়মিতভাবে মুসলিমদের নিপীড়নকারী কার্যকলাপে জড়িত বলে মনে করে।”
টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে পুতিনের সামরিক হস্তক্ষেপও রাশিয়ায় আইএসআইএস-কের হামলার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। বিশেষ করে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পক্ষে পুতিনের অভিযান পরিচালনাকে উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সিরিয়ায় আইএসআইএস-কে ও অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো রুশ বিমান হামলায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছিল।
তথ্যসূত্র : রয়টার্স ও টাইমস অব ইন্ডিয়া