Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

বিশ্বে পিছিয়ে পড়া মেয়ারস্ক বাংলাদেশে কেন শীর্ষে

মেয়ারস্ক লাইন।
বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহনে শীর্ষে রয়েছে মেয়ারস্ক লাইন।
[publishpress_authors_box]

সাগরপথে পণ্য পরিবহনে বিশ্বের শীর্ষ তালিকার একেবারে চূড়ায় মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানি (এমএসসি)। দীর্ঘসময় ধরে শীর্ষে থাকা ড্যানিশ কোম্পানি মেয়ারস্ক লাইনকে টপকে দুই বছর আগেই এক নম্বরে অবস্থান নেয় সুইস প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বাংলাদেশে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে এখনও শীর্ষে মেয়ারস্ক লাইন। এমএসসি রয়েছে তার পেছনে।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩১ লাখ ৬৯ হাজার একক কন্টেইনার ওঠানামা হয়েছে। প্রতিবছর এই সংখ্যা ৪ শতাংশ করে বাড়ছে। ফলে সমুদ্রপথে কন্টেইনার পরিবহনের বিশাল এই বাজার ধরতে বিশ্বের বড় শিপিং লাইনগুলো রীতিমতো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের তথ্য সংগ্রহে রাখে বিদেশি জাহাজের মেইন লাইন অপারেটররা (এমএলও)। প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি-জুন ছয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কন্টেইনারভর্তি পণ্য পরিবহনে শীর্ষস্থানে রয়েছে মেয়ারস্ক লাইন। কোম্পানিটি এই সময়ে মোট কন্টেইনার পরিবহন করেছে ২ লাখ ৫৩ হাজার একক।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সুইস কোম্পানি এমএসসি পরিবহন করেছে ১ লাখ ২১ হাজার একক কন্টেইনার। তৃতীয়স্থানে থাকা ফরাসি প্রতিষ্ঠান সিএমএ-সিজিএম পরিবহন করেছে ৮৪ হাজার ৮১৯ একক কন্টেইনার।

সাগরপথে পণ্য পরিবহনে এমএসসি রয়েছে শীর্ষে।

২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে শুধু আমদানি পণ্য পরিবহনের হিসাব কষলে দেখা যায়, এখানেও তালিকার শীর্ষে মেয়ারস্ক। দ্বিতীয় স্থানে সিএনসি লাইন এবং তৃতীয় স্থানে এমএসসি। একই সময়ে শুধু রপ্তানির পণ্য পরিবহনেও শীর্ষে মেয়ারস্ক। দ্বিতীয় এমএসসি। তৃতীয় সিএমএ।

সিএনসি রপ্তানিতে ষোড়শ স্থানে চলে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানি মোট কন্টেইনার পরিবহনে তাদের অবস্থান পিছিয়ে গেছে। রপ্তানিতে সিএমএ তৃতীয় থাকলেও আমদানিতে তাদের অবস্থান চতুর্থ। ফলে তাদের অবস্থান দ্বিতীয়তে থাকেনি, পিছিয়ে গেছে।

ড্যানিশ কোম্পানি মেয়ারস্ক লাইন বাংলাদেশে নিজেরা সরাসরি সার্ভিস পরিচালনা করছে। কোম্পানির বাংলাদেশের প্রধান নিখিল ডি লিমা’কে ফোন করলে তিনি মূল কার্যালয়ের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে মেয়ারস্ক লাইন কোন কৌশলে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে, সে বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর।
দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রাণবিন্দু চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর।

তবে ডেনিশ এই কোম্পানির ঊর্ধ্বতন এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এই শিপিং লাইনে প্রফেশনালিজমে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশকে বিশেষভাবে ফোকাস করেই পণ্য পরিবহনের রুট নির্ধারণ করা হয়। 

“আর বাংলাদেশ রুটে আমাদের সবচেয়ে বেশি জাহাজ পণ্য পরিবহন করছে। আমরা এই দেশের ব্যবসায়ীদের মনের ভাষা বুঝি, চাহিদা বিশ্লেষণ করি। আর বিশ্বের শীর্ষ তৈরী পোশাক শিল্পের বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক-চুক্তি আছে। বিদেশি সেই ক্রেতার সাথে একটা বন্ডিং তৈরি হয়েছে। সেই ক্রেতারাই ঠিক করেন কোন লাইনে কোন দেশে পণ্য পরিবহন হবে। ফলে বাংলাদেশ অংশ থেকে সেটি বদলানোর সুযোগ নেই।”

বিশ্বের শিপিং বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ এবং প্রকাশকালী অনলাইন পোর্টাল আলফালাইনারের ৬ জুলাই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে পণ্য পরিবহণে মেয়ারস্ক লাইন দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও প্রথম স্থানে থাকা এমএসসির সঙ্গে তাদের বেশ ব্যবধান।

এমএসসি এখন বিশ্বের ৫৯ লাখ ৮০ হাজার একক কন্টেইনার একাই পরিবহন করছে; যা বিশ্বে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ২০ শতাংশ। মেয়ারস্ক লাইন ৪৩ লাখ ৩০ হাজার একক কন্টেইনার পরিবহন করে দ্বিতীয় স্থানে আছে, তা বৈশ্বিক পণ্য পরিবহনের ১৪ শতাংশ।

সাগরপথে পণ্য পরিবহনে বিশ্বে তৃতীয় সিএমএ-সিজিএম।

তৃতীয়স্থানে থাকা সিএমএ-সিজিএম ৩৭ লাখ ৬২ হাজার কন্টেইনার পরিবহন করে মার্কেট শেয়ার সাড়ে ১২ শতাংশে উন্নীত করেছে।

ফলে দেখা যাচ্ছে, প্রথম স্থানের সাথে দ্বিতীয়স্থানের ব্যবধান সাড়ে ৫ শতাংশ আর কন্টেইনারের পরিমাণ ১৬ লাখ ৭০ হাজার একক। আর দ্বিতীয় স্থানের সঙ্গে তৃতীয় স্থানের ব্যবধান অনেক কম মাত্র ২ শতাংশ। আর কন্টেইনারের হিসাবে ব্যবধান ৫ লাখ ৮৪ হাজার একক।

বাংলাদেশে মেয়ারস্কের এগিয়ে থাকার কারণ কী- জানতে চাইলে এমএসসি বাংলাদেশের হেড অব অপারেশন আজমীর হোসাইন চৌধুরী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মেয়ারস্ক লাইন বাংলাদেশের শুরু থেকেই এই খাতে ব্যবসা করে আসছে। দীর্ঘদিন থাকার কারণে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ঘিরে অনেক কানেকটিভিটি তৈরি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। আর এই কানেকটিভিটির কারণে বাংলাদেশ ঘিরে তাদের ফোকাস বেশি। ফলে নতুনদের বাজার দখল করা কঠিন ছিল।”

গত ছয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনে সিএনসি আছে চতুর্থ স্থানে।

এমএসসি বাংলাদেশে কাজ করছে ২০০৯ সাল থেকে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের তুলনায় অনেক নবীন হলেও বিভিন্ন নতুন কৌশল প্রয়োগ করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এর সুফল মিলেছে ইতোমধ্যে; যার প্রমাণ আমাদের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা।

“২০২২ সালে আমরা পণ্য পরিবহনে চতুর্থ থেকে ২০২৪ সালে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছি। রপ্তানিতে আমরা মেয়ারস্ক লাইনের কাছাকাছি চলে গেছি। কাজ করছি আমদানিতে ব্যবধান কমানোর। এজন্য আমরা বেশ কিছু নতুন রুট চালু করছি।”

মেইন লাইন অপারেটরদের তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনে ৮৪ হাজার ৮১৯ একক কন্টেইনার দিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে সিএমএ-সিজিএম। আর ৮৩ হাজার একক কন্টেইনার পরিবহন করে সিএনসি আছে চতুর্থ স্থানে।

২০২৩ সালের পুরো বছরে মেয়ারস্ক লাইন ছিল শীর্ষে। দ্বিতীয় ছিল এমএসসি। তৃতীয় ছিল সিএমএ। আর চতুর্থ ছিল ওয়ান লাইন। পঞ্চম ছিল সিএনসি লাইন।

সিএমএ-সিজিএম’র কারও সঙ্গে সকাল সন্ধ্যা কথা বলতে পারেনি।

জাপানি কোম্পানি ওয়ান লাইন এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত।

নতুনদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে জাপানভিত্তিক ওয়ান লাইন। জাপানি তিনটি শিপিং কোম্পানি একীভূত হয়ে তারা বিশ্বে কার্যক্রম শুরু করেছে। ছয় বছর আগে যাত্রা শুরু করে বেশ ভালো অবস্থানে পৌঁছেছে প্রতিষ্ঠানটি।

ওয়ান লাইনের মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) শাকিল আহসান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “তিনটি প্রতিষ্ঠানের মেধা-কৌশল-অভিজ্ঞতা যুক্ত করে সর্বোচ্চ সার্ভিস দিচ্ছি। সাথে বিশ্বজুড়েই জাপানিদের একটা ব্রান্ড ইমেজ আছে। এসব মিলিয়ে আমরা এগোচ্ছি।”

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩১ লাখ ৬৯ হাজার একক কন্টেইনার উঠানামা হয়েছে। আর কন্টেইনার উঠানামার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.৩৬ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি নিজেদের কব্জায় নিতে বিদেশি শিপিং কম্পানিগুলো নতুন রুট, নতুন সার্ভিস, প্রতিযোগিতামূলক ভাড়ার অফার দিচ্ছে। ফলে এই খাতে প্রতিযোগিতা দিনদিন বাড়ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত