উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন মাসখানেক আগে হঠাৎ ঘোষণা দেন, দক্ষিণ কোরিয়া তার প্রধান শত্রু। এরপরই বাজিয়ে দিলেন যুদ্ধের ডঙ্কা।
কিম জং উনের নির্দেশে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দুই দেশের মধ্যকার সড়ক ও রেলপথ। এ কাজটা এমনভাবে করা হলো যে চাইলেও পরে যোগাযোগ পুনরায় স্থাপন করা সম্ভব নয়।
এরপর সীমান্তে জড়ো করা হয়েছে পরমাণু ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র। বাড়ানো হয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা। বেলুনে আবর্জনা ভরে সেগুলো ফেলা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে।
উত্তর কোরিয়ার এমন যুদ্ধ যুদ্ধ সাজ দেখে দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়ুংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিম ইউল-চুল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, “উত্তর কোরিয়া যা যা করবে বলেছিল, তারা ঠিক তাই করছে।”
উত্তর কোরিয়া দীর্ঘদিন দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পুনর্মিলনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। তাদের সংবিধানেই বলা আছে, উভয় দেশই পুরো উপদ্বীপের ওপর তাদের সার্বভৌমত্ব দাবি করতে পারে।
কিন্তু কিম জং উনের এসব তৎপরতায় এমনটি যে হচ্ছে না, তা স্পষ্ট।
কিয়ুংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিম ইউল-চুল বলেন, “অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে একত্র হওয়ার চিন্তা পুরোপুরিই বাদ দিতে বদ্ধপরিকর উত্তর কোরিয়া।”
মারমুখী অবস্থান এখন কেন
কিম জং উন এই প্রথম দক্ষিণ কোরিয়াকে শত্রুজ্ঞান করছেন, তা নয়। আগেও প্রকাশ্যে বহুবার এ ধরনের কথা বলেছেন তিনি। তাহলে এ বছর কী এমন ঘটল, যাতে তিনি বাধ্য হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি এতটা মারমুখী হতে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এর কারণ হতে পারে আবহাওয়া। এ বছর গ্রীষ্মে উত্তর কোরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যায় ভেসে যায়। এতে প্রাণহানি হয়। ধ্বংস হয় বহু বাড়িঘর। বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় হাজার হাজার খামার।
দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা মনে করছেন, বন্যা পূর্ব ও পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি উত্তর কোরিয়া। এতে বেড়ে যায় মানুষের ক্ষোভ। সরকারের প্রতি পুঞ্জীভূত অসন্তোষ থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতেই দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে আবারও সংঘাত করতে চাইছে পিয়ংইয়ং।
সংঘাতের প্রেক্ষাপট সাজাতে তাই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রমালিকানাধীন পত্রিকার প্রথম পাতায় ফলাও করে খবর প্রকাশ হতে থাকে, পিয়ংইয়ংয়ের ওপর ড্রোন ওড়াচ্ছে সিউল।
এই পদক্ষেপকে উত্তর কোরিয়ার জনগণ, যারা কিম পরিবারের স্বৈরতন্ত্রে ক্লান্ত, তাদের পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মনে করছে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী।
দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিন ওন-সিক এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “দেশের ভেতরকার অস্থির পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে পিয়ংইয়ং।
“উত্তর কোরিয়া এমন এক দেশ, যে তার ব্যবস্থায় বহিঃশত্রুর হুমকি জিইয়ে রেখে দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায়।”
রাশিয়া কি জড়িত
২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকে মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।
পশ্চিমা দেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করছে কিম জং উন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, রাশিয়ায় ১০ হাজার সেনা পাঠিয়েছে পিয়ংইয়ং।
দুই কোরিয়ার মধ্যকার সড়ক ও রেলপথ কিম জং উন ডিনামাইটের সাহায্যে উড়িয়ে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে মিত্র দেশ চীন দুপক্ষকে টানাপোড়েন আর না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
ড্রোন হামলার জন্য সিউলকেই দায়ী করে রুশ সরকার বলেছে, “এহেন ঘটনা উত্তর কোরিয়ার সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত।”
তথ্যসূত্র : এনডিটিভি