ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে গুলি করে পর্যটক হত্যার পর সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে তা হলো, সেখানে সেনা মোতায়েন ছিল না কেন?
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই প্রশ্নটি রেখেছে ভারতের বিরোধীদলগুলো। সেই সঙ্গে আরও কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাবও চেয়েছে তারা।
পহেলগাম হামলা নিয়ে বৃহস্পতিবার দেশটির পার্লামেন্টে একটি সর্বদলীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও অংশ নেন।
গত মঙ্গলবার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সহায়তায় তিনজন সন্দেহভাজন হামলাকারীর স্কেচ তৈরি করে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। যাদের দুজন পাকিস্তানের নাগরিক বলে দাবি করা হচ্ছে।
হামলার পরই পাকিস্তানকে দায়ী করে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। এর মধ্যে দুই দেশের কূটনৈতিক বন্ধন শিথিল করা, পাকিস্তানি সেনাসদস্যদের বহিষ্ককার করা এবং ১৯৬০ সালের সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করা হয়।
তার পাল্টায় পাকিস্তান ভারতের সাথে সিমলা চুক্তিসহ সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করে, ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ‘বিনা ভিসা প্রকল্পের’ আওতায় দেওয়া সব ভিসা স্থগিত করে, ভারতের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় এবং সব ধরনের বাণিজ্যও বন্ধ করে।
এরপর বৃহস্পতিবার ভারতে ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধীদের বক্তব্যের বেশিরভাগ অংশজুড়েই ছিল পহেলগারে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান বৈসরণে নিরাপত্তাবাহিনীর অনুপস্থিতির প্রসঙ্গ।
মূলত কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই প্রশ্ন তোলেন, পরে সে প্রসঙ্গে কথা বলেন আরও অনেকে। তাদের মধ্যে রাজ্যসভায় বিরোধীদলীয় নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে এবং আম আদমি পার্টির এমপি সঞ্জয় সিং ছিলেন।
বিরোধীদলের নেতাদের মূল প্রশ্ন ছিল, হামলার ওই জায়গায় কেন কোনও নিরাপত্তাকর্মী ছিল না? এ প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, অমরনাথ যাত্রার আগে আগে বৈসরণ এলাকা রীতিমতো নিরাপদ করা হয়। জুনে শুরু হবে অমরনাথ যাত্রা। তখন এই পথটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হবে এবং অমরনাথ গুহার মন্দিরে যাওয়ার পথে বৈসরণে বিশ্রাম নেওয়া তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নিরাপত্তা রক্ষীদের নিয়োগ দেওয়া হবে।
কিন্তু স্থানীয় টুর অপারেটররা ২০ এপ্রিল থেকে পর্যটকদের সেখানে নেওয়া শুরু করে এবং তা তীর্থ মৌসুমকে সামনে রেখে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই, বলছেন মন্ত্রীরা।
বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়, আগাম পর্যটক ভ্রমণের তথ্য স্থানীয় প্রশাসনও জানত না। আর সে কারণেই সেখানে কোনও সেনা নিয়োজিত ছিল না।
বৈঠকে বিরোধীদল আরও একটি প্রশ্ন তোলে। তা হলো, ভারতের যেখানে পানি সংরক্ষণের সক্ষমতা নেই, সেখানে কেন সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করা হলো?
১৯৬০ সালে স্বাক্ষর করা এই চুক্তির ফলে ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারত ও পাকিস্তান সিন্ধু অববাহিকার ছয়টি নদীর পানি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে আসছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশই সীমান্তের উভয় পাশের জমি উর্বর রাখতে পারছে।
সেই চুক্তি বিষয়ক প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় সরকারের তরফে বলা হয়, এই পদক্ষেপ কোনও তাৎক্ষণিক ফলাফলের জন্য নয়, বরং একটি প্রতীকী ও কৌশলগত পদক্ষেপ।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, “সরকার যে কঠোর পদক্ষেপ নেবে, তা বোঝানোর জন্যই এই চুক্তি স্থগিত করা হয়। পাকিস্তানকে কঠোর বার্তা দেওয়ার অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত একথাও স্মরণ করিয়ে দেয় যে ভারত সরকার সামনে কী ধরনের অবস্থান নিতে যাচ্ছে।”
সর্বদলীয় এই সভার শুরুতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি পর্যালোচনা করেন। ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর পরিচালক তপন ডেকা ২০ মিনিটের একটি উপস্থাপনায় পহেলগাম হামলার ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন। গোয়েন্দা সংস্থা কী বলছে এবং কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেসবও উঠে আসে সেখানে।
তথ্যসূত্র : এনডিটিভি