Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

বিশ্ব টয়লেট দিবস ও ১০ হাজার কোটি লিটার পানির অপচয়

বিশ্ব টয়লেট দিবস, জাতিসংঘ
[publishpress_authors_box]

কেবল টয়লেটের জন্য মানুষ প্রকৃতির এক অমূল্য সম্পদ পানির কতোটা অপচয় করছে আপনি জানেন!প্রতিদিনের জীবনযাত্রার অপরিহার্য অংশ হওয়া সত্ত্বেও, পয়ঃনিষ্কাশন ও টয়লেট ব্যবস্থার গুরুত্ব প্রায়ই অবহেলিত হয়। এ সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতেই প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব টয়লেট দিবস।

২০২৪ সালের প্রতিপাদ্য ‘পয়ঃনিষ্কাশন ও পানির সংকট’, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নিরাপদ স্যানিটেশন ও পানির সুবিধা এখনো অনেকের কাছে অধরা।

নিরাপদ টয়লেটের অভাব সরাসরি মানুষের স্বাস্থ্য, পরিবেশ, এবং সামাজিক উন্নয়নের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

বিশ্ব টয়লেট দিবস যেভাবে শুরু

বিশ্ব টয়লেট দিবস প্রথম পালিত হয় ২০০১ সালে। সিঙ্গাপুরের একটি সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশন এর প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক সিম এই দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগ নেন। তার লক্ষ্য ছিল টয়লেট এবং স্যানিটেশন নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা, যা তখন একটি উপেক্ষিত বিষয় ছিল।

পরবর্তীতে, ২০১৩ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব টয়লেট দিবসকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। সেই থেকে জাতিসংঘের নেতৃত্বে প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য হলো- স্যানিটেশনের ঘাটতি দূর করা এবং সবার জন্য নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন টয়লেট সুবিধা নিশ্চিত করা।

এ বছরের প্রতিপাদ্যের পেছনে

২০২৪ সালে বিশ্ব টয়লেট দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বজুড়ে স্যানিটেশন সংকট এবং নিরাপদ পানির অভাবে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। জাতিসংঘের মতে:

  • বিশ্বে এখনও ৩৬০ কোটি মানুষ নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
  • প্রতি বছর নিরাপদ স্যানিটেশনের অভাবে প্রায় ৮ লাখ মানুষ ডায়রিয়া এবং অন্যান্য পানিবাহিত রোগে মারা যায়।
  • টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)  অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এ পথে অগ্রগতি ধীর।

জেনে নিই কিছু তথ্য

১. প্রথম পাবলিক টয়লেটের জন্ম

১৮৫১ সালে লন্ডনের ‘গ্রেট এক্সিবিশনে’ প্রথমবারের মতো পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হয়। এর ব্যবহার ফি ছিল মাত্র এক পেনি, যেখান থেকে “Spend a penny” কথাটি এসেছে।

২. টয়লেটের ডিজাইনার ‘জন হ্যারিংটন’

১৬০০ সালে ব্রিটিশ উদ্ভাবক জন হ্যারিংটন প্রথম ফ্লাশ টয়লেট ডিজাইন করেন। মজার বিষয়, তার নামে ইংরেজিতে টয়লেটকে ‘জন’ বলা হয়।

৩. বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল টয়লেট

আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে (ISS) ব্যবহৃত টয়লেটটি নির্মাণে প্রায় ১৯ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল। এটি মাধ্যাকর্ষণহীন অবস্থায় কাজ করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি।

৪. স্যানিটেশনের উন্নতি মানে জীবনের উন্নতি

নিরাপদ টয়লেট ব্যবস্থার ফলে বিশ্বে প্রতি ১ ডলার বিনিয়োগে প্রায় ৫ ডলার পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা লাভ করা সম্ভব। কারণ এটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় কমায় এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।

৫. বাংলাদেশ ও স্যানিটেশন অগ্রগতি

বাংলাদেশে ২০০০ সালে যেখানে মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ স্যানিটেশনের সুবিধা পেতেন, সেখানে এখন ৭৪ শতাংশ মানুষ নিরাপদ টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন।

তবে, এখনো দেশের প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ খোলা স্থানে মলত্যাগ করেন।

৬. টয়লেট ব্যবহার এবং সুরক্ষা

বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নারীদের জন্য নিরাপদ টয়লেটের অভাবে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি, এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রায় ৪০ শতাংশ নারী টয়লেটের নিরাপত্তা নিয়ে সবসময় উদ্বেগে ভোগেন।

৭. প্রতিদিন ১০০ বিলিয়ন লিটার পানি অপচয়

বর্তমান টয়লেট ব্যবস্থায় প্রতিদিন বিশ্বে প্রায় ১০০ বিলিয়ন লিটার পানি অপচয় হয়। তাই “ইকো-ফ্রেন্ডলি” টয়লেট ব্যবস্থার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

বিশ্ব টয়লেট দিবস শুধু একটি দিন নয়; এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে স্যানিটেশন একটি মৌলিক অধিকার। স্যানিটেশন এবং পানির সংকট দূর করতে হলে সকলের প্রচেষ্টা প্রয়োজন। নিরাপদ টয়লেট ব্যবস্থার উন্নতি শুধু স্বাস্থ্যই রক্ষা করে না, এটি একটি পরিচ্ছন্ন, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনের পথ প্রশস্ত করে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত