এক সকালে গ্রাহকের বাড়ির বাথরুমের নল ঠিক করছিলেন কেভ ক্রেন। ৪৯ বছর বয়সী যুক্তরাজ্যের লিসেস্টারশায়ার শহরের এক গ্রামের ওই পানির মিস্ত্রিকে অনেকেই ডাকত ‘গায়ক প্লাম্বার’ বলে।
কাজের সময় সঙ্গে রেডিও রাখেন ক্রেন। কেউ থামিয়ে না দিলে তাতে দুয়া লিপা থেকে বিটলস বাজতেই থাকে। আর গানের সঙ্গে চলে ক্রেনের গলা মেলানো।
সেদিনও নিউ রিয়েলিটি রেকর্ডসের মালিক পল কনেলির তিনটি বাথরুমে মেরামতের কাজ পড়েছিল তার। কাজ করতে করতে যথারীতি বাথরুমে গান গাইছিলেন ক্রেন। আর ওই গান শুনে ৬২ বছর বয়সী কনেলি কান খাঁড়া করলেন।
কনেলি বলে উঠলেন, “আমি একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।”
ক্রেনের নিজের কোনো গান আছে কি না খোঁজ করেন কনেলি। নিজের কয়েকটি গান তাকে শুনতে দিলেন ক্রেন।
এবার কনেলি ক্রেনের কাছে সরাসরি প্রস্তাব রাখেন, “তুমি ঠিক কী শর্তে আমাদের লেবেলে তোমার গানের অ্যালবাম করতে চাও?”
ক্রেনের অ্যালবাম ঠিকই প্রকাশ করেছিলেন কনেলি।
বাংলাদেশে প্রথম র্যাপ অ্যালবাম হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। ‘ত্রিরত্নের ক্ষ্যাপা’ অ্যালবামের একটি জনপ্রিয় গান ছিল ‘বাথরুমে’। তাতে সাংবাদিক পরিচয়ে একজন কারও কাছে প্রশ্ন করেন, “আচ্ছা আপনার কোথায় কখন গান গাইতে ভালো লাগে?”
পার্থ বড়ুয়ার কণ্ঠে সুরে সুরে উত্তর আসে, “বাথরুমে… বাথরুমে।”
বাথরুমে ঝরনা ছেড়ে গোসল করতে করতে, এমনকি কাপড় ধুতে ধুতেও গলা ছেড়ে গান গাওয়ার অভ্যাস নেই এমন মানুষ কমই মিলবে।
সিরামিকের উপকরণ, টাইলস বসানো মেঝে-দেয়াল মিলিয়ে বাথরুমে কণ্ঠের গুঞ্জন জোরালো হয়ে ওঠে। যারা বাইরে একেবারেই গাইতে সাহস করেন না, তারাও বাথরুমের দরজা বন্ধ করে নিজের কণ্ঠের প্রতিধ্বনি উপভোগ করতে করতে গোসল সেরে নেন।
যারা গান এডিটের সফটওয়ার বা অ্যাপ নিয়ে কাজ করেন তাদের কাছে রিভার্ব শব্দটা খুব পরিচিত হবেই।
বাথরুমে গান গাওয়ার জাদু হলো এই রিভার্ব।
বাথরুমের চার দেয়ালে হালকা গলা ছেড়ে গাইলে চারিদিকে ধাক্কা খেয়ে আওয়াজের গুঞ্জন ঘুরতে থাকে আপনাকে ঘিরে। তাতে নিজের গান নিজের কানে দারুণ লাগে।
আর ঝরনার পানির আওয়াজ তো আপনার গানে সঙ্গ দিচ্ছেই।
অবশ্য বড় আকারের বাথরুম হলে এই প্রতিধ্বনি ও গুঞ্জনে তারতম্য হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গান শরীর ও মনের জন্য উপকারী। শরীরে অক্সিজেন বাড়ে। তাতে ভোকাল কর্ড, শ্বাসতন্ত্র, হৃদযন্ত্র ভালো থাকে। গোসলের সময় শরীর আর্দ্র থাকে। শুষ্ক কণ্ঠে নয়, আর্দ্র কণ্ঠে অনেকক্ষণ গান গাওয়া চালিয়ে যাওয়া যায়। এতে গলা ভেঙ্গে যায় না সহজে।
আর তাই ঝরনা ছেড়ে গাইতে গাইতে নিজের গান নিজের কানে ভালো যদি লেগেই যায় তো না থেমে গাইতে থাকুন।