Beta
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫

লিভারপুলের স্বপ্নযাত্রায় গার্দিওলার ‘রিসেট বাটন’ কাজে আসবে?

guardiola-5
[publishpress_authors_box]

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমের কথা। ১৩ পয়েন্টের ব্যবধান ঘুচিয়ে সেবার প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছিল আর্সেনাল। পয়েন্টের হিসাবনিকাশে এমন পিছিয়ে থেকে শিরোপা জেতার ইতিহাস ইংলিশ ফুটবলে আরও আছে। এই উদাহরণগুলো কি এবার ম্যানচেস্টার সিটিকে অনুপ্রাণিত করতে পারে?

অবশ্যই পারে। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসেই পয়েন্টের পার্থক্য ঘুচিয়ে শিরোপা জেতার কীর্তি আছে ম্যান সিটির। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১০ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকা ম্যান সিটির হাতে উঠেছিল ইংলিশ ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব। চলতি মৌসুমে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের সঙ্গে তাদের ব্যবধান ১১ পয়েন্টের। ম্যাচ বাকি আছে আরও ২৫টি।

বড়দিনের পর ম্যান সিটির ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা কিংবদন্তিতুল্য। গত মৌসুমেই যেমন বড়দিনের পর কোনও ম্যাচ না হেরে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা উদযাপন করেছিল ম্যানচেস্টারের ক্লাবটি। সামনেই বড়দিন। অতীত ইতিহাসে পা রেখে আরেকবার ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ তাদের সামনে। হবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

ম্যান সিটির ‘শূন্য থেকে শুরু’

ম্যান সিটিকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া কঠিন। অতীত ইতিহাস অন্তত তা-ই বলছে। কিন্তু লিভারপুলের কাছে ২-০ গোলের হারের পর আত্মবিশ্বাসে যে আঘাত লেগেছে, সেখান থেকে অন্তত শিরোপার স্বপ্ন দেখাটা বাড়াবাড়ি। কোচ পেপ গার্দিওলাও অত সাহস দেখাচ্ছেন না। বরং দলকে আঁস্তাকুড় থেকে কিভাবে টেনে ‍তুলবেন, তা নিয়ে বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে এই কথায়, “রিসেট বাটন চেপে আমরা শূন্য থেকে শুরু করব।”

প্রিমিয়ার লিগে টানা চার হার, সব মিলিয়ে টানা সাত ম্যাচ জিততে না পারা একটা দলের মানসিক অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, বলার অপেক্ষা রাখে না। অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের কাছে হারের ম্যাচে সিটির খেলোয়াড়ের বড্ড ক্লান্ত লেগেছে। গার্দিওলা বারবার চোটকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছেন। এও বলেছেন- ফিট স্কোয়াড দিলে তিনি ম্যান সিটির চেহারা পাল্টে দেবেন!

চোট এবারের মৌসুমে কোন দলে নেই। রিয়াল মাদ্রিদের কথা ধরা যাক। মাদ্রিদের ক্লাবটিকে হাসপাতাল বললে ভুল হবে না। অবস্থা এমন বেগতিক, কার্লো আনচেলত্তির একাদশ সাজাতেই ঘাম ঝরাত হচ্ছে। প্রিমিয়ার লিগের আর্সেনালেও চোটের ধাক্কা আছে। তবে তারা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, কৌশল পাল্টে ঘায়েল করছে প্রতিপক্ষদের। গার্দিওলার মতো বিশ্বসেরা কোচ আপাতকালীন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে পারছেন না। এটা তার সামর্থ্যের ওপর প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দেয়।

প্রিমিয়ার লিগে টানা চারবারের চ্যাম্পিয়ন ম্যান সিটি। সবশেষ সাত মৌসুমে শিরোপা জিতেছে ছয়বার। এবারের মৌসুম শুরুতেও ছিল হট ফেভারিট। গোল উৎসবে প্রতিপক্ষদের গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে তছতছ ম্যান সিটির সাজানো বাগান। রোদ্রির মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়া এবং কেভিন ডি ব্রুইনার ফিটনেস ঘাটতিকে নেপথ্যের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিটিজেনদের সাফল্য রচনার কারিগর মাঝমাঠের এই দুই শিল্পী। কিন্তু তাদের চোটসমস্যা ছাড়াও অন্দরমহলে আরও বড় কোনও সমস্যার উপদ্রব হয়েছে কিনা, সে আশাঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ম্যান সিটি ফিরে আসে। ঘুরে দাঁড়িয়ে শিরোপাও জেতে। সেখানে তাদের পারফরম্যন্স তো অবশ্যই, একইসঙ্গে প্রতিপক্ষদের উদার হৃদয়ের ‘উপহার’-ও থাকে মুখ্য ভূমিকায়। ২০১৮-১৯ মৌসুমে লিভারপুলের পা হড়কানো শিরোপা পাইয়ে দিয়েছিল ম্যান সিটিকে। চ্যাম্পিয়নশিপে পার্থক্য ছিল মাত্র ১ পয়েন্টের।

স্লটের লিভারপুল আরও দুর্বার

ওই লিভারপুল পরের মৌসুমে প্রায়শ্চিত্ত করেছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের অধীনে। চার মৌসুম পর আবারও শিরোপার পথে আগুয়ান অলরেডস। এবার নতুন কোচ আর্নে স্লটের হাত ধরে। মৌসুমের এই পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর্সেনাল থেকে ৯ পয়েন্টে এগিয়ে লিভারপুল। পয়েন্ট ব্যবধানের এই হিসাবে প্রিমিয়ার লিগের গত ৩০ বছরের ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে- শিরোপা যাচ্ছে মার্সিসাইডের ক্লাবটিতে।

ক্লপ চলে গেলেন তার সাফল্য-চিহ্ন রেখে। সাজানো বাগানের মালি হারিয়ে আবারও কি ব্যর্থতার গহীনে হারাবে লিভারপুল? ইতিহাস গড়া জার্মান ট্যাকটিশিয়ানের জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয় আর্নে স্লট নামের এক ডাচ কোচকে। সাফল্য বলতে যার নামের পাশে ডাচ লিগ ও কাপের একটি করে শিরোপা। এমন একজনকে কেন বেছে নেওয়ার হলো, সে আলোচনাও হয়েছে বিস্তর।

টাক মাথার বলিষ্ঠ শারীরিক গড়নের মানুষটা দেখে ভীষণ কাঠখোট্টা লাগবে। ক্লপ যেখানে সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষ, সেখানে স্লটের গম্ভীরতা প্রথমেই নেতিবাচক মানসিকতা তৈরি করে লিভারপুল সমর্থকদের মনে। তাছাড়া ক্লপের সঙ্গে তার সামর্থ্য ও সাফল্যের যোগসূত্রও ঠিক মেলানো যাচ্ছিল না।

সেই স্লট এখন লিভারপুলের প্রাণ। ক্লপের বিদায়ে হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হয়েছিল সমর্থকদের মনে, সেখানে বিশ্বাস ও ভালোবাসার প্রলেপে নয়নের মণি হয়ে উঠেছেন ডাচ কোচ। তার অধীনে আরও দুর্বার লিভারপুল। প্রিমিয়ার লিগে ১৩ ম্যাচে ১১ জয় অলরেডদের। হেরেছে মাত্র একটিতে। শুধু জয় নয়, তার ট্যাকটিকসে ধরাশয়ী প্রতিপক্ষরা। ম্যান সিটিই যেমন মাত্র দুটি শট লক্ষ্যে রাখতে পেরেছিল।

স্লট তার দলের পারফরম্যান্স উল্লেখ করেন ‘নিখুঁত’ বলে। ম্যান সিটির বিপক্ষে সেটিরই প্রতিফলন। লিভারপুল আক্রমণের পর আক্রমণ শাণাচ্ছে, অন্যদিকে ম্যান সিটির খেলোয়াড়রা তাদের আটকাতে হিমশিম খাচ্ছে। ম্যান সিটিকে ২০১৮ সালে প্রথম শিরোপার জেতানোর পর গার্দিওলার দলের এমন দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়েনি।

কঠিন সময়ে গার্দিওলা

লিভারপুলের ম্যাচটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল ম্যান সিটির। টানা হারের ধাক্কা কাটিয়ে আত্মবিশ্বাস ফেরাতে প্রয়োজন ছিল জয়। গার্দিওলা পারেননি তার দলকে পথে ফেরাতে। সেকারণেই অ্যানফিল্ডের লিভারপুল সমর্থকরা গলা মিলিয়ে গাইতে থাকে “সকালেই চাকরি যাচ্ছে”। তাদের জবাব দিতে গার্দিওলা ৬ আঙুল উঁচিয়ে ধরে বোঝাতে চাইলেন- তিনি প্রিমিয়ার লিগের ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন।

ম্যাচ শেষেও এটার রেশ থেকে যায়। গার্দিওলা বলেন, “লিভারপুলের মানুষজনের কাছ থেকে আমি এমনটা আশা করিনি।” কিন্তু ইংলিশ ফুটবলে “সকালেই চাকরি যাচ্ছে”- এমন স্লোগান নতুন নয়। এর ওপর যে কোচ সাত ম্যাচের ছয়টিতে হেরেছেন, তার দিকে এমন কথা ধেঁয়ে আসা অস্বাভাবিক নয়।

গার্দিওলা ছয়বার প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছেন। ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাসও তার আছে। কিন্তু এবারের মৌসুমে শিরোপা সংখ্যা সাতে নিয়ে যাওয়ার পথ থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছেন। বতর্মান পরিস্থিতিতে এটাই বাস্তবতা। গার্দিওলার এই অবস্থায় তাদেই পোগাতার কথাটা মনে পড়তে পারে আপনার। স্লোভেনিয়ান এই সাইক্লিস্ট ২০২৩ সালের ট্যুর ডি ফ্রান্স হেরে এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে বলেছিলেন, “আমি মৃত।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত