Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

ভারতের সিদ্ধান্তে কি দেশে পেঁয়াজের ঝাঁজ কমবে

ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসে পেঁয়াজ।
ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসে পেঁয়াজ।
[publishpress_authors_box]

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য (এমইপি) প্রত্যাহার করে নিয়েছে ভারত। শুক্রবার দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিজিএফটি এক প্রজ্ঞাপনে এই ঘোষণা দেয়।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি টন পেঁয়াজ কমপক্ষে ৫৫০ ডলার দামে শুল্কায়নের যে বিধান ছিল, সেটি আর থাকছে না।  এতে ভারত থেকে বাংলাদেশে কম দামে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ তৈরি হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২৪ সালের মে মাস থেকে প্রতি টন পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম দাম ৫৫০ ডলার এবং সেই দামের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল ভারত সরকার। এতে ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানিমূল্য অনেক বেড়ে যায়। দাম বাড়তে বাড়তে জুলাই নাগাদ দেশের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকা ছাড়ায়।

দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় বাংলাদেশের আমদানিকারকরা ভারতের বদলে বিকল্প দেশ চীন, পাকিস্তান, মিশর থেকে সমুদ্রপথে জাহাজে করে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সেই সরবরাহ ছিল একেবারেই কম। এতে মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা কমলেও দাম ক্রেতার নাগালের মধ্যে আসেনি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতায় আমদানি আরও কমে যায়। সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় বাড়তে শুরু করে দামও। এই অবস্থায় দাম কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ৬ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এরপরও পেঁয়াজের দাম খুচরায় প্রতি কেজি ১২০ টাকার নিচে নামেনি।

এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিল ভারত। এতে আগের চেয়ে কম দামে আগামী সপ্তাহ থেকেই ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।

তারা বলছেন, পেঁয়াজ আমদানিতে জুলাই-আগস্ট দুই মাসেই ২ লাখ ৮০ হাজার টন আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) নেওয়া আছে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে দ্রুত ঋণপত্র খুলে পেঁয়াজ দেশে আনা হলে দাম কমবে।

ভারত ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য প্রত্যাহার করায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কতটা কমতে পারে জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আগামী সপ্তাহে যে পেঁয়াজ দেশে আসবে তার দমা পড়বে ৮৫ টাকা কেজি। দেশের বাজারে সেই নাসিক জাতের পেঁয়াজ ৯০ টাকায় বিক্রি হবে। কিন্তু ১৫ দিন পর নাসিকের নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হবে। তখন দাম কমে কেজি ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হবে। কম দামে পেঁয়াজ পেতে ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।”

এখন ভারত থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানিতে ৮৫ টাকা লাগার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “দুইদিন আগে থেকেই মহারাষ্ট্রের নাসিক পেঁয়াজ ৪৫ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল কেজি ৩০-৩৫ রুপি। ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য প্রত্যাহারের আগাম খবরে ভারতীয়রা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

“বর্তমান দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৪৫ রুপি ও শুল্ক ৯ রুপির সঙ্গে নাসিক থেকে হিলি পর্যন্ত গাড়ি ভাড়া ৬ রুপি যোগ করলে দাঁড়ায় ৬০ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৫ টাকা। বাংলাদেশে পণ্য ওঠানামা, সিঅ্যান্ডএফ কমিশন ও মুনাফা যোগ করলে কেজি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে হবে।”

তবে একাধিক আমদানিকারক বলছেন, ভারতের বাজারে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়, রপ্তানিমূল্য তার চেয়ে অনেক কম। মূলত ব্যাংকে একটি মূল্য ঘোষণা দেয় আমদানিকারক, কিন্তু কেনা দাম তার চেয়ে অনেক কম। ফলে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্যের শর্ত প্রত্যাহারের পর ভারতের বাজারে কত দামে বিক্রি হচ্ছে সেটি মুখ্য নয়। অর্থাৎ ভারত থেকে আমদানির প্রতিযোগিতা দিয়েই দেশের বাজারে কম দামে পেঁয়াজ আসবে।

রপ্তানি শুল্ক ২০ শতাংশ কমাল ভারত

ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে গত ৪ মে। তবে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক বহাল রাখে। একইসঙ্গে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য (এমইপি) টনপ্রতি ৫৫০ ডলারে বেঁধে দেয়।

ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহ বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছিল। কিন্তু সেটি স্থায়ী হয়নি। মূলত ৪০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখায় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে উৎসাহ হারান দেশের ব্যবসায়ীরা। ভারতীয় পেঁয়াজ না আসায় কেবল দেশি পেঁয়াজ দিয়েই বাজার সামাল দিতে গিয়ে দাম বাড়তে বাড়তে ৬৫ টাকার পেঁয়াজ জুনে ৯০ টাকায় উঠে যায়। পরে দাম আরও বেড়ে ১২০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম বলেন, আমদানির পর শুল্কবাবদ বাংলাদেশ সরকার ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। আর ভারত সরকার রপ্তানি শুল্ক ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়েছে। ফলে সেই খরচ এখন লাগছে না। এখন সরকার আগ্রহী সবাইকে ঋণপত্র খুলতে সহযোগিতা দিলে দেশের বাজারে দ্রুতই সুফল মিলবে।

বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ এসেছে সামান্য

দেশের খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর থেকেই বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। দেশে জুলাই-আগস্ট দুই মাসে বিকল্প দেশ হিসেবে চীন, পাকিস্তান, মিশর থেকে পেঁয়াজ এসেছে সোয়া ৫ হাজার টন। সবগুলো এসেছে জাহাজে করে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে।

ভারতের বিকল্প দেশ হিসেবে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ভালো পরিমাণ পেঁয়াজ আসার কথা থাকলেও সীমান্তে অস্থিরতার কারণে আসেনি। ফলে বিকল্প দেশের পেঁয়াজ দিয়ে বাজারের চাহিদা সামাল দেওয়া যায়নি।

এই কারণে বাজারে চীনের পেঁয়াজ ৭৫ টাকা, পাকিস্তানের পেঁয়াজ ৯০ টাকা, মিশরের পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

এমন প্রেক্ষাপটে অন্তবর্তীকালীন সরকার রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে বৈঠকে বসে নিয় নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়। শুল্ক কমানোর পর অবশ্য পেঁয়াজের নতুন চালান এখনও দেশে পৌঁছেনি।

খাতুনগঞ্জের আড়তদার মোহাম্মদ ইদ্রিছ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ভারত যেহেতু ন্যুনতম রপ্তানিমূল্য প্রত্যাহার করেছে, তাতে বিকল্প দেশের পেঁয়াজ প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। কারণ অন্য দেশের পেঁয়াজের পড়তা বা খরচ বেশি।”

তার মতে, “এখন আমদানি করে সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলেই বাজারে সুফল মিলবে।”

তবে বাজারে বিকল্প দেশের পেঁয়াজ থাকলে দেশের জন্য তা ভালো বলে মনে করেন ইদ্রিছ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “তখন প্রতিযোগিতা থাকায় একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ থাকে না।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত