Beta
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

রাশিয়ায় ইউক্রেনের পাল্টা হামলা : পুতিন কি আলোচনায় বাধ্য হবেন

Putin_Ukrain
[publishpress_authors_box]

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ও প্রতিরোধ যোদ্ধারা গত তিন সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার ভেতরে ঢুকে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে।

গত ৬ আগস্ট ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান নিয়ে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ঢুকে পড়া ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে প্রায় ১ হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখলের পাশাপাশি তাদের সামরিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার দাবিও করছে।

রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর দেশটির ভেতরে এই হামলাই ইউক্রেনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আন্তঃসীমান্ত আক্রমণ।

একে ইউক্রেনের জন্য এখন পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবেও দেখা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনও রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডেরও এভাবে আক্রান্ত হওয়ার নজির নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন যদি রাশিয়ার ভেতরে তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারে তাহলে তারা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে শান্তি আলোচনায় বাধ্য করতে পারবে।

ইউক্রেনও বলছে, কুরস্ক অঞ্চলে তাদের সামরিক অভিযানের লক্ষ্য ওই অঞ্চলটি দীর্ঘমেয়াদে দখলে রাখা নয়, রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করাই তাদের এই অভিযানের লক্ষ্য। তাছাড়া কুরস্কে দখল করে নেওয়া রাশিয়ার ভূমির বিনিময়ে তারা নিজেদের ভূমি রাশিয়ার দখলমুক্ত করার লক্ষ্যের কথাও জানিয়েছে।

তবে ইউক্রেনের হামলা প্রতিরোধে রাশিয়াও সর্বশক্তি নিয়ে পাল্টা হামলা করেছে। কুরস্কে ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রতিরোধের পাশাপাশি ইউক্রেনের ভেতরেও হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া।

এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের অনেক সেনা কুরস্কে পাঠানোর কারণে দেশটির অভ্যন্তরে যুদ্ধের ময়দান অরক্ষিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে রাশিয়া ইউক্রেনের আরও অঞ্চল দখল করে নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রাশিয়ার মানচিত্রে নীল রঙ দিয়ে চিহ্নিত অঞ্চল দখল করে নিয়েছে ইউক্রেন।

এ ছাড়া রাশিয়া ইউক্রেনের বাহিনীকে চারদিক থেকে ঘেরাও করার চেষ্টা করতে পারে- এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে ইউক্রেনীয় সেনারা পিছু হটতেও বাধ্য হতে পারে।

ফলে প্রশ্ন উঠেছে শান্তি আলোচনায় ইউক্রেন আসলেই রাশিয়াকে বাধ্য করতে পারবে কিনা বা রাশিয়া আলোচনায় বসতে রাজি হবে কিনা।

এই বিষয়ে রাশিয়ান টাইমসের (আরটি) একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার আলোচনায় বসার সম্ভাবনা খুবই কম। এর পেছনে সম্ভাব্য কিছু কারণও তুলে ধরা হয়েছে ওই বিশ্লেষণে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া মনে করে- ইউক্রেন নিজের স্বার্থে নয়, পশ্চিমাদের স্বার্থে কাজ করছে। তাই এই ধরনের একটি ভূখণ্ডের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনাসহ কোনও মিথষ্ক্রিয়া স্বাভাবিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্কের যে রীতিনীতি আছে তার বিরুদ্ধাচরণ হবে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি, এমনকি যুদ্ধও, সবসময়ই আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু রাশিয়ার দৃষ্টিতে, ইউক্রেন স্পষ্টতই এমন কাজ করছে যা আত্মঘাতী, যার ফলে রাষ্ট্র হিসেবে তার নিজের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটতে পারে। তাদের আচরণ এবং কৌশল নির্ধারণ করে দিচ্ছে অন্য কেউ। ফলে তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা হতে পারে না।

দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও জার্মানির মতো দেশগুলোর কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দেশগুলোর মতো যারা এমনকি ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের দখলদারিত্বের অধীনে রয়েছে, তাদেরও একটি স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, তারা প্রায়ই এর জন্য চেষ্টাও করে, যা তাদের রাশিয়া বা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার অসংখ্য প্রচেষ্টা থেকেই প্রমাণিত।

এক ইউক্রেনীয় সেনা গত ১৬ আগস্ট রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের সুদঝা শহরের সিটি হলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।

কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ ও শান্তির বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্য দেশের আদেশ পালন করছে বিধায় রাশিয়া তাদেরকে কোনও রাষ্ট্র হিসেবেই গণ্য করে না উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে রাশিয়ার অনেকটা সন্ত্রাসী সংগঠন, একটি বিদ্রোহী আন্দোলন বা একটি ব্যক্তিগত সামরিক কোম্পানি বলে মনে করে। ফলে তাদের ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়ম-রীতি প্রযোজ্য না, যে কারণে আলোচনায় বসারও সুযোগ নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের এই অবস্থা এবং বর্তমান রক্তপাতের পেছনে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর একটি সঠিক রাষ্ট্র গঠনে ব্যর্থতাকেই দায়ী মনে করে রাশিয়া। রুশ প্রশাসনের মতে, কিয়েভের কৌশলগত সিদ্ধান্তসহ সবকিছুই একটি কার্যকর রাষ্ট্র গড়ে তোলার ব্যর্থ প্রচেষ্টার পরিণতি।

ইউক্রেনের ক্ষেত্রে, রাশিয়া মনে করে, তারা একটি দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রের মোকাবেলা করছে, যেটি তার নিয়ন্ত্রণাধীন জনগণের স্বার্থে কাজ করছে না। তাই তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেও রাজি নয় রুশ প্রশাসন।

তবে লন্ডন ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউজের বিশ্লেষণ বলছে, রাশিয়ায় হামলার মধ্য দিয়ে ইউক্রেন পুতিনকে আলোচনায় বাধ্য না করতে পারলেও পশ্চিমাদের মনোযোগ ফেরাতে পেরেছে।

চ্যাথাম হাউজের মতে, রাশিয়ার কুরস্কে ইউক্রেনের সামরিক অভিযান পশ্চিমাদের মনে এই বিশ্বাস জন্মাচ্ছে যে, ইউক্রেন হয়ত জিততে পারবে। ফলে ইউক্রেনের প্রতি তারা সহায়তাও বাড়াবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত