Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

মিন অং হ্লাইং কি প্রাণ থাকতে ক্ষমতা ছাড়বেন

min
[publishpress_authors_box]

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং গত ৯ মে মস্কোতে রেড স্কয়ারে রাশিয়ার বিজয় দিবস প্যারেডে অংশ নেন; সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী এবং ঘনিষ্ঠ কিছু জেনারেলের স্ত্রীরা।

বিদ্রোহীদের ক্রমাগত চাপের মুখে থাকা মিন অং হ্লাইংয়ের জন্য রাশিয়া সফর ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই সফরে মিয়ানমারের পক্ষে একটি নতুন মুখ দেখা যায়। সেটি হলো চিফ অব জেনারেল স্টাফ (আর্মি, নেভি, এয়ার ফোর্স) জেনারেল কিয়াও স্বার লিনের স্ত্রী দাও খিন মে সো।

এছাড়া সফরে ছিলেন উপ প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল মং মং আয়ের স্ত্রী এবং জান্তার প্রধান প্রশাসনিক দপ্তরের যুগ্ম সচিব জেনারেল ইয়ি উইন উ’র স্ত্রী।

মিন অং হ্লাইংয়ের স্ত্রী দাও কিউ কিউ হ্লাকে মিয়ানমারে একজন চতুর নারী হিসেবে দেখা হয়। তিনি যেসব জেনারেলের স্ত্রীদের পছন্দ করেন, তাদের স্বামীদের দ্রুত পদোন্নতি হয়।

জেনারেল কিয়াও স্বার লিনকে এমন এক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যেখানে তাকে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিতে হয় না। তাকে মিন অং হ্লাইংয়ের পরবর্তী সেনাপ্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বর্তমানে ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল সো উইনকে আর এই পদে সম্ভাব্য উত্তরসূরি মনে করা হচ্ছে না।

মিন অং হ্লাইং ও তার স্ত্রী সব সময় তাদের ঘনিষ্ঠদের ঘিরেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করেন। এই কারণেই এখনকার মিয়ানমার সেনাবাহিনী মূলত মিন অং হ্লাইংয়ের ব্যক্তিগত বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তিনি নিজেই এর রূপকার।

মিয়ানমারে এটি অবশ্য নতুন নয়। সামরিক শাসক নে উইনের আমলেও সেনাবাহিনীকে তার ব্যক্তিগত বাহিনী বলা হত।

মিন অং হ্লাইং তার ঘনিষ্ঠ জেনারেলদের জানিয়েছেন, তিনি এ বছরের শেষ নাগাদ একটি নির্বাচন দেবেন এবং এরপর নিজে প্রেসিডেন্ট হবেন।

কিন্তু বাস্তবতা হলো—তার চারদিকে শত্রু। আর যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি ক্রমেই হেরে যাচ্ছেন।

যুদ্ধে পরাজিত একজন নেতা হয়ে রাশিয়ার বিজয় দিবসের মতো জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া স্পষ্টতই এক বেপরোয়া ও নির্লজ্জ আচরণ।

কারণ এদিকে বিদ্রোহী বাহিনী ক্রমে নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে। মিন অং হ্লাইং ভালো করেই জানেন, তিনি চরম বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে। বর্তমানে তার মন্ত্রীরা শুধু নামমাত্র দায়িত্বে রয়েছেন। প্রকৃত ক্ষমতা জান্তার গোপন মন্ত্রিসভার হাতে।

মিন অং হ্লাইং তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে, বিশেষত নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত জেনারেল ও লেফটেন্যান্ট কর্নেলদের সঙ্গে আলাপে যা বলেন, তা তার প্রকাশ্য ভাষণ থেকে একেবারেই আলাদা। এই তথ্য দিয়েছেন তার অভ্যন্তরীণ সূত্রের লোকজন।

তারা জানিয়েছেন, মিন অং হ্লাইং প্রায়ই বলেন, “আমরা হয় মৃত অবস্থায়, না হয় জীবিত অবস্থায় ক্ষমতা ছাড়ব। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

এই বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়—তিনি নিজেই মৃত্যু দিয়ে ক্ষমতা ত্যাগের সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তিত।

এই কথাগুলো সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠকে উচ্চারিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

মনে হচ্ছে তিনি ভাবছেন—তার পরিণতি হবে ফাঁসি, আততায়ীর গুলিতে মৃত্যু, নাকি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরা?

তিনি অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্ত নিলে জ্যোতিষী, ছদ্ম-বিশেষজ্ঞ এবং ব্যবসায়িক সহযোগীরা তাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। তারা সেনাপ্রধানের সফলতার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কিন্তু আজ মিয়ানমার একদম দারিদ্র্যপীড়িত। এই সত্যটি তার গোপন মন্ত্রিসভা ভালো করেই জানে।

তারপরও তারা ভুল পথে এগিয়ে চলেছে।

মিন অং হ্লাইংয়ের প্রকাশ্যভাবে নির্বাচনের ঘোষণা স্পষ্ট করে যে, তিনি প্রেসিডেন্ট হয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার পরিকল্পনা করছেন।

এটি নিঃসন্দেহে একটি নিশ্চিত বিষয়।

যে মানুষ বারবার বলতেন, দেশের শক্তি দেশের ভেতরেই নিহিত, সেই মানুষ রাশিয়া সফরে গিয়ে পুতিনের এক ‘পুতুলে’ পরিণত হলেন।

এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে বাইরের সাহায্য কে দিচ্ছে? উত্তরও স্পষ্ট।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মিন অং হ্লাইং তার ভুলপথে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়বেন পুতিনের সহায়তায়। পুতিনকে তিনি নিজের ভাষায় ‘কিং অব র‌্যাটস’ বা ইঁদুরদের রাজা বলে উল্লেখ করেছেন—যা একটি পুরনো বার্মিজ ঐতিহাসিক রেফারেন্স।

হ্লাইংয়ের সঙ্গে থাকবে একদল দুর্নীতিগ্রস্ত সামরিক কর্মকর্তা ও ধনিক গোষ্ঠী। তারা নিজেদের স্বার্থেই ক্ষমতা চায়। কিন্তু এই অবস্থা আর কতদিন চলবে?

এখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভেতরেও আলোচনা চলছে—মিন অং হ্লাইং কি জীবিত অবস্থায় ক্ষমতা ছাড়বেন, না মৃত্যুর মাধ্যমেই তার বিদায় হবে?

এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান বারবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে গত ফেব্রুয়ারিতে মিন অং হ্লাইং সেনাবাহিনী ও মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের পুনর্বিন্যাস করেন।

এই পদক্ষেপ ছিল অনেকটাই পূর্ববর্তী সামরিক শাসক থান শোয়ের কৌশলের মতো। শোয়ে ২০১০ সালের দিকে ধাপে ধাপে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এতে প্রশ্ন উঠেছে—মিন অং হ্লাইং কি থান শোয়ের মতোই অবসরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন?

হ্লাইং অপেক্ষাকৃত কমবয়সী কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদে উন্নীত করেছেন এবং সিনিয়র অফিসারদের অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রশাসনে নতুন দায়িত্বে নিয়োগ দিয়েছেন।

এই কৌশল থান শোয়ের উত্তরসূরি নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে বর্তমান সময়ে সেনাবাহিনীর নজিরবিহীন পরাজয় এবং গণতান্ত্রিক বিরোধীদের শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় মিন অং হ্লাইংয়ের জন্য একতরফা রূপান্তর চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে হচ্ছে।

সাবেক জ্যেষ্ঠ জেনারেল থান শোয়ে খুব হিসেব করে তার অবসরের পথ তৈরি করেন। তিনি নিজের ও ডেপুটি কমান্ডারের উত্তরসূরি হিসাবে দুজন অপেক্ষাকৃত কমবয়সী কর্মকর্তাকে বেছে নেন। তিনি মিন অং হ্লাইংকে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেন। পাশাপাশি তিনি সোয়ে উইনকে ডেপুটি পদে নিযুক্ত করেন। তিনি ছিলেন কট্টরপন্থী ও বলপ্রয়োগে বিশ্বাসী।

এই রূপান্তরের আগে থান শোয়ে ১৯৯২ সালে আঞ্চলিক ক্ষমতাধর সেনা কমান্ডারদের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন এবং ১৯৯৭ সালে তাদের অবসর দেন।

২০০৪ সালে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল খিন নিউন্টকে গ্রেপ্তার করেন। এরপর সেনাবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তিনি ২০০৮ সালের সংবিধান প্রবর্তন করেন, যা একটি পরিকল্পিত রূপান্তরের ভিত্তি তৈরি করে।

অভ্যুত্থানের পাঁচ বছর পর মিন অং হ্লাইংকেও একই রকম কৌশল অনুসরণ করতে দেখা যাচ্ছে। তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও স্বার লিনকে জেনারেল স্টাফ প্রধান (থল, নৌ ও বিমান বাহিনী)—সেনাবাহিনীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পদে উন্নীত করেন। 

কিয়াও স্বার লিন মিন অং হ্লাইংয়ের চেয়ে ১৬ ব্যাচ জুনিয়র, তারও যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা সীমিত। তবে তিনি সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। এটি প্রমাণ করে, দুই নেতাই যুদ্ধ অভিজ্ঞতার চেয়ে প্রশাসনিক দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

স্পেশাল অপারেশন্স ব্যুরো-১ এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল কো কো উ’কেও উন্নীত করে জান্তার প্রধান মধ্যস্থতাকারী নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ নামে পরিচিত জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগেুলোর জোটের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই জোট ২০২৪ সালে সেনাবাহিনীর দুটি আঞ্চলিক সদর দপ্তর দখল করে।

পাশাপাশি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সামরিক কমান্ডার থান হ্টাইককে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কো কো উ এবং থান হ্টাইক দুজনেই সাগাইং অঞ্চলে ২০২৪ সালের অক্টোবরে চালানো বর্বর হামলার জন্য দায়ী, যেখানে অসংখ্য বেসামরিক নাগরিক নিহত ও বিকৃতভাবে নিহত হন।

এই পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়া ইঙ্গিত দেয় যে, মিন অং হ্লাইং কিয়াও স্বার লিনকে তার উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তুত করছেন। পাশাপাশি কো কো উ বা থান হ্টাইককে ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ ও যৌথ চিফ অব স্টাফ পদে উন্নীত করার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। থান শোয়ের কৌশলের সঙ্গে এই প্রক্রিয়া হুবহু মিলে যায়। এটি আরও জোরালোভাবে এই জল্পনা তৈরি করছে যে, মিন অং হ্লাইং পরিকল্পিত অবসরের পথ তৈরি করছেন।

যেসব জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা তার পছন্দের উত্তরসূরির পথে প্রতিবন্ধক হতে পারেন, হ্লাইং তাদের প্রশাসনিক পদে সরিয়ে দিয়েছেন। থান শোয়ে যেমন ১৯৯০-এর দশকে সামরিক কমান্ডারদের প্রভাবহীন মন্ত্রীত্বে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, তেমনটাই ঘটছে এখন। এরা এখন সামরিক অনুষ্ঠানেও অংশ নেন না, বা ইউনিফর্ম পরে প্রকাশ্যে আসেন না। এতে বোঝা যায়, তাদের সামরিক ভূমিকাও ক্ষীণ হয়ে গেছে। এই শূন্যস্থানেই মিন অং হ্লাইং আরও জুনিয়র কাউকে সেনাপ্রধান পদে বসানোর সুযোগ খুঁজছেন।

তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোয়ে মিয়ান্ত তুন এবং সোয়ে হ্টুটকে গ্রেপ্তার করেছেন। মোয়ে মিয়ান্ত তুন অভ্যুত্থানের পর বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন। তিনি গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ইয়ি উইন উ’কে এখনও সমর্থন দিয়ে চলেছেন। তবে সাধারণত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সেনাপ্রধান হন না। ইয়ি উইন উ’র অধীনে গোয়েন্দা বিভাগ যত শক্তিশালী হচ্ছে, ততই যুদ্ধক্ষেত্রের কমান্ডারদের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ছে। এটি খিন নিউন্ট আমলের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্বের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

থান শোয়ে তার রূপান্তরের শর্ত নির্ধারণ করতে পেরেছিলেন কারণ ১৯৮৮ সালের গণ-আন্দোলনের পর উল্লেখযোগ্য কোনো গণ-বিদ্রোহ ছিল না। ব্যতিক্রম ২০০৭ সালের স্যাফরন বিপ্লব, যা মাত্র দুই মাস স্থায়ী হয়েছিল। তখনকার শাসকগোষ্ঠী জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে ‘সিজফায়ার ক্যাপিটালিজম’ নীতির মাধ্যমে সমঝোতা করেছিল। ফলে শক্তিশালী বিরোধিতা গঠিত হতে পারেনি।

অন্যদিকে অপারেশন ১০২৭-পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর অসংখ্য পরাজয় এবং জনতার বিরোধিতার বিস্তার মিন অং হ্লাইংয়ের ক্ষমতা সীমিত করে ফেলেছে। 

২০২৪ সালে সরকার ৩৩০টির মধ্যে মাত্র ১৪৫টি টাউনশিপে আদমশুমারি চালাতে পেরেছে, যা তাদের নিয়ন্ত্রণহীনতার প্রমাণ। এখনও সব জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তিচুক্তি হয়নি। ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’-এর সঙ্গে এখনও আলোচনা চলছে। তাই কোনও রূপান্তর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিদ্রোহী শক্তিগুলোর সম্মতি প্রয়োজন।

মিন অং হ্লাইং এখন নিজের অনুগত তরুণ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিচ্ছেন, প্রবীণদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন, এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে দিচ্ছেন। এতে স্পষ্ট হয়, তিনি পরিকল্পিত প্রস্থানের জন্য মঞ্চ তৈরি করছেন। তবে থান শোয়ের মতো নিজের শর্তে রূপান্তর চাপিয়ে দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব হবে না। যুদ্ধক্ষেত্রে হারে, গণপ্রতিরোধের বিস্তারে এবং জান্তার নিয়ন্ত্রণহীনতা তাকে দুর্বল করে তুলেছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত