Beta
শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫

এনসিটি কি বিদেশি অপারেটরের হাতে যাবে

বাংলাদেশের মোট কন্টেইনার পণ্য উঠানামার ৫৫ শতাংশই হয় চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বাংলাদেশের মোট কন্টেইনার পণ্য উঠানামার ৫৫ শতাংশই হয় চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সেই সরকারের পতনের পর সেই উদ্যোগ যায় থেমে।

তবে সম্প্রতি তা আবার আলোচনায় আসে নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে ডিপি ওয়ার্ল্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর। এরপর আমিরাতের এই কোম্পানির প্রতিনিধিরা বন্দর পরিদর্শনে যায়, বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখাও করে।

দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ডকেই এনসিটি পরিচালনার ভার দিতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার; যদিও তার বিরোধিতা করে আসছিল স্থানীয় অপারেটররা।

এখন নতুন করে ডিপি ওয়ার্ল্ডের তোড়জোড় দেখে তারা মুখ খুলছেন; বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের প্রভাবে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। তাতে লাভ হতো সালমানের।

এনসিটির গুরুত্ব কোথায়?

বাংলাদেশের মোট কন্টেইনার পণ্য উঠানামার ৫৫ শতাংশই হয় চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে (এনসিটি)। পণ্য ওঠানামার সবচেয়ে আধুনিক সব যন্ত্রে সজ্জিত এই টার্মিনাল থেকে বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

দেশের সবচেয়ে দ্রুতগতিতে কন্টেইনার ওঠানামা হয় এই টার্মিনালেই, যা শুধু চট্টগ্রাম বন্দরই নয়; দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। শ্রমিক ধর্মঘটমুক্ত এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনার কারণে ২০০৯ সাল থেকেই এই একটি টার্মিনাল দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে অসাধারণ ভূমিকা রাখছে।

এনসিটিই চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে আধুনিক টার্মিনাল; যেখানে আছে মোট পাঁচটি টার্মিনাল। বর্তমানে এই কন্টেইনার টার্মিনাল দিয়েই সর্বোচ্চ সক্ষমতার পণ্য উঠানামা হচ্ছে।

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, ২০০৭ সালের আগে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভেড়ার আগে একটি কন্টেইনার জাহাজকে বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষায় থাকত গড়ে ১২ থেকে ১৫ দিন। ধর্মঘটে প্রায় সময়ই অচলাবস্থা তৈরি হতো এই বন্দরে। এই ধর্মঘটকে পুঁজি করে সরকারকে অচল করে দেওয়ার নজিরও ছিল। বাড়তি সময় বহির্নোঙরে বসে থাকায় প্রতিটি জাহাজকে দিনে ১২ থেকে ২০ হাজার ডলার মাশুল গুনতে হতো; আর এই মাশুল যোগ হতো পণ্যের দামে।

ধীরে ধীরে আধুনিক যন্ত্র এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনায় জাহাজের গড় অপেক্ষমাণ সময় ১২ দিন থেকে কমে নেমে এসেছে ২ থেকে আড়াই দিনে। এর ফলে বিপুল খরচ সাশ্রয় হয় পণ্য পরিবহনে। এর প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতিতে।

জেটিতে জাহাজ এসে পণ্য নামিয়ে আবার রপ্তানি পণ্য তুলে ৪৮ ঘণ্টায় ছেড়ে যাওয়ার নজির গড়ার সুফল বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কম সময়ে বেশি পণ্য ওঠানামার রেকর্ড গড়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যায়। এর ফলে বিশ্বের একশ শীর্ষ বন্দরের তালিকায় ৬১তম স্থানে পৌঁছে যায় এই বন্দর।

এর মূল কারণ এনসিটির গতিশীল ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ এর মধ্য দিয়েই এনসিটি দেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

এনসিটি এখন পরিচালনা করছে কারা?

২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে নির্মিত হলেও কে কীভাবে টার্মিনালটি পরিচালনা করবে সেই জটিলতায় আটকে ছিল। বিএনপি সরকারের আমলে এবং পরে সেনা সমর্থিত সরকার, এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও এনসিটি বিদেশি অপারেটর দিয়ে পরিচালনার চেষ্টা হয়, কিন্তু প্রতিবাদের মুখে সেটি সফল হয়নি।

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের আমূল সংস্কার করলে তাদের কল্যাণে এই টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক।

দায়িত্ব পেয়ে বিদেশি বন্দরে কর্মরত দক্ষ কর্মী এনে এনসিটি পরিচালনা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। নিজেদের কর্মীরা দক্ষ হওয়ার পর বিদেশিরা চলে যায়। এরপর থেকে দরপত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েই এনসিটি পরিচালনা করছিল সাইফ পাওয়ারটেক।

২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সাইফ পাওয়ারটেক এককভাবে এনসিটি পরিচালনা করে । ২০১৫ সালের জুনে এসে এনসিটি পরিচালনায় ভাগ বসায় দুটি প্রতিষ্ঠান; যারা রাজনৈতিকভাবে বেশ প্রভাবশালী।

প্রতিষ্ঠান দুটি হলো– চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের মালিকানাধীন এমএইচ চৌধুরী লিমিটেড এবং নোয়াখালীর সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিমের মালিকানাধীন এ অ্যান্ড জে ট্রেডার্স।

এই দুই প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই চট্টগ্রাম বন্দরের জিসিবির অন্য দুটি জেটি পরিচালনা করে আসছিল। ২০১৫ সালে এই প্রতিষ্ঠান দুটি এনসিটির দরপত্রে অংশ নিলে বিপত্তি ঘটে। পরে সমঝোতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান দুটিকে কো-পার্টনার নাম দিয়ে অংশীদার করে নেয় সাইফ পাওয়ারটেক।

জেটি পরিচালনা কাজে প্রতিষ্ঠান দুটি এখনও সাইফ পাওয়ারটেকের অংশীদার।

ডিপি ওয়ার্ল্ড কোন যুক্তিতে, নেপথ্যে কি সালমান?

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদেশি অপারেটর দিয়ে এনসিটি পরিচালনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। সংযুক্ত আরব-আমিরাতভিত্তিক বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’কে সামনে রেখে কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েও ছিল। এজন্য সরকারের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষ ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজর পর্যন্ত নিয়োগ করেছিল।

তখন বন্দর ব্যবহারকারীদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের একক আধিপত্যের কারণে সেই প্রতিবাদ হালে পানি পায়নি। এই অবস্থায় এনসিটি ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’কে দিয়ে পরিচালনার কাজ এগোতে থাকে।

তখন বিদেশি অপারেটর দিয়ে এনসিটি পরিচালনার পক্ষে যুক্তি ছিল, আর্ন্তজাতিক অপারেটর দিয়ে টার্মিনালটি পরিচালনা করা গেলে পণ্য ওঠানামার দক্ষতা বাড়বে, পণ্য ওঠানামা বাবদ বন্দর বাড়তি রাজস্ব আয় করবে। চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি বাড়বে এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গতিশীলতা তুলনা করার সুযোগ তৈরি হবে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এনসিটি বিদেশি অপারেটর দিয়ে পরিচালনার উদ্যোগে ভাটা পড়ে।

এই পরিস্থিতিতে ডিপি ওয়ার্ল্ডের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত গত ২৯ সেপ্টেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে দেখা করলে বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে।

জানা গেছে, আরব আমিরাতের প্রতিনিধি দলটি চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগের আগ্রহ নতুন করে প্রকাশ করেছে। নৌপরিবহন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তারা এনসিটি, বে টার্মিনালে বিনিয়োগ আগ্রহের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছে।

এরপর গত সপ্তাহে দলটি চট্টগ্রাম এসে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে, বন্দর পরিদর্শন করেছে। সেখানে বে টার্মিনাল এবং এনসিটি পরিচালনা নিয়ে তাদের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন অভিযোগ করেছেন, এনসিটি টার্মিনাল বিদেশি অপারেটর দিয়ে পরিচালনার সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে আসেনি। নতুন কৌশলে সেটি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি বলেন, “আগে সালমান এফ রহমান দাপট খাটিয়ে সেই কাজটি করেছেন। এখন অন্যরা করার চেষ্টা করছেন।

“বিগত সরকারের আমলে সালমান এফ রহমান এভাবে চাপ প্রয়োগ করেছিল, যাতে মন্ত্রণালয় বাধ্য হয় বিদেশিদের হাতে এনসিটি দিতে। তার কমিশন বাণিজ্য ছাড়াও পণ্য ওঠানামা বাবদ যে আয় করত, ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত দেশে রেখে বাকি টাকা বিদেশে নিয়ে যেত বিদেশি অপারেটর।”

কমিশন খাওয়ার উদ্দেশ্যেই বিদেশি অপারেটর দিয়ে এনসিটি পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালনা করলে দেশের আয় পুরোটাই দেশেই থাকছে।

বিরোধিতার পক্ষে কী যুক্তি?

বিদেশি অপারেটর দিয়ে এনসিটি পরিচালনার বিরোধিতা করছেন স্থানীয় অপারেটররা। তারা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর এলে বন্দরের রাজস্ব আয় এখনকার চেয়ে কিছুটা বাড়বে, তবে দেশের ৫৫ শতাংশ কন্টেইনার ওঠানামা করা বন্দরের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে যাবে।

তাদের মতে, এনসিটি এখন যেভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের একক নিয়ন্ত্রণে আছে, সেটি আর থাকবে না। ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ঝুঁকি তৈরি হবে। কারণ চট্টগ্রাম বন্দরের হাতে ৫৫ শতাংশ কন্টেইনার ওঠানামার জন্য বিকল্প কোনও টার্মিনাল নেই।
এছাড়া বিদেশি অপারেটর এলে এনসিটির পণ্য ওঠানামার খরচ বাড়বে বলে মনে করেন তারা। আর পণ্য পরিবহন ওঠানামার খরচ বাড়লে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’ বাড়লে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা পিছিয়ে পড়বে।

তাদের যুক্তি, বিদেশি অপারেটর হওয়ায় পণ্য ওঠানামা পরিচালন বাবদ আয়ের বিশাল অংশ দেশের বাইরে চলে যাবে। ফলে রাজস্ব আয়ের বিশাল অংশ জেনেশুনে কেন হাতছাড়া করার সুযোগ দেবেন।

দেশের বন্দর ব্যবহারকারীরা বলেছেন, আর্ন্তজাতিক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান দিয়ে দেশের টার্মিনাল পরিচালনায় দ্বিমত নেই। কিন্তু একটি রেডিমেড টার্মিনাল, যেখানে বন্দরের হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি যুক্ত আছে। যেটি শুধু চট্টগ্রাম বন্দরই নয়, পুরো দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, শ্রমিক ধর্মঘটমুক্ত এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনার কারণে ২০০৯ সাল থেকেই যে টার্মিনালটি দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে অসাধারণ ভূমিকা রাখছে, সেই সচল টার্মিনাল বিদেশি অপারেটর দিয়ে পরিচালনা করতে হবে কোন যুক্তিতে।

তাদের মতে, নতুন স্থানে একটি আধুনিক টার্মিনাল তৈরি করে সেটি পরিচালনার দায়িত্ব আর্ন্তজাতিক স্বনামধন্য অপারেটরদের দেওয়া যেতে পারে। চট্টগ্রামের বন্দরের চেয়ে চারগুণ বড় প্রস্তাবিত ‘বে টার্মিনাল’ কিংবা ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর’ এমনকি ‘পায়রা সমুদ্রবন্দরে’ নতুন টার্মিনাল নির্মাণে বিদেশিদের আগ্রহকে প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে। এতে বিশ্বের সব আধুনিক প্রযুক্তি যন্ত্রপাতি সংযোজন করেই তারা টার্মিনাল পরিচালনা করবে, আর্ন্তজাতিক বন্দরগুলোর সাথে সরাসরি সার্ভিস চালু করবে। নিজেদেরকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারবে। বন্দরের টাকায় গড়া, বন্দরের কেনা যন্ত্রপাতি দিয়ে বিদেশি অপারেটরদের টার্মিনাল পরিচালনায় সফলতার কিছুই নেই। ফলে এনসিটিতে বিদেশি অপারেটর কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

২০০৭ সালে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব বেসরকারি খাতের দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, এনসিটি সেই সময়ে বেসরকারি খাতে না দিলে বন্দরের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি আজকে পর্যন্ত সামাল দেওয়া সম্ভব হতো না।

সেই টার্মিনাল বিদেশি অপারেটর দিয়ে কেন চলবে– এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “দেশীয় অপারেটর ভালো না করলে বিদেশি অপারেটরকে দেওয়ার প্রশ্ন আসত।”

বন্দর কর্তৃপক্ষ কী ভাবছে?

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি অপারেটকে দেওয়ার উদ্যোগ থেমে গেলেও সম্প্রতি নৌপরিবহন উপদেষ্টার সঙ্গে ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’র কর্মকর্তাদের বৈঠক ঘিরে বিষয়টি আবার আলোচনায় আসায় এ নিয়ে

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুকের সঙ্গে কথা বলেছে সকাল সন্ধ্যা।

তিনি বলেন, “হ্যাঁ গত সপ্তাহে ডিপি ওয়ার্ল্ডের একটি প্রতিনিধি দল চেয়ারম্যান স্যারের সাথে দেখা করেছেন। তাদের বিনিয়োগ আগ্রহ নতুন করে প্রকাশ করেছেন। বন্দর পরিদর্শন করেছেন। এটা জাস্ট কার্টেসি ভিজিট ছিল।”
বিদেশি অপারেটর দিয়ে এনসিটি পরিচালনার বিষয়ে তিনি বলেন, “অন্তবর্তীকালীন সরকারের এই সময়ে মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। ট্রান্সজেকশন অ্যাডভাইজর নিয়োগ পর্যন্ত আমরা জানি।”

বিদেশি অপারেটর দিয়ে এনসিটি পরিচালনার বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক বোর্ড সদস্য জাফর আলম মনে করেন, এনসিটি দেশি বা বিদেশি অপারেটর দিয়ে চলবে কিনা সেটি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এখন যেভাবে দেশীয় অপারেটর দিয়ে চলছে তার চেয়ে বিদেশি অপারেটর ভালো হবে কিনা সেটা জাতীয় স্বার্থ, প্রতিযোগিতা ও দেশের অর্থনীতিসহ সবদিক থেকেই বিবেচনা করতে হবে।

“এজন্য প্রয়োজন বড় একটি স্টাডি। আর এই স্টাডি হুট করে এবং যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করলে হবে না। সময় নিয়ে অভিজ্ঞদের দিয়ে করতে হবে। তারপরই বিবেচনায় নিতে হবে কোনটা দেশের জন্য দেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে উত্তম।”
জাফর আলমের মতে, এনসিটি নিয়ে সিদ্ধান্ত ইমোশনালি নিলে হবে না। বাস্তবতা অনুধাবন করেই বিবেচনা করতে হবে।

“ডিপি ওয়ার্ল্ড যে প্রস্তাব দিয়েছে তার চেয়ে ভালো প্রস্তাব অন্যরা পিএসএ সিঙ্গাপুর, এপিএম টার্মিনালস বা রেড সি দেয় তাহলে সেই প্রস্তাব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম লোক লাগবে। ফলে আগেই আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। তা না হলে আমরা ঠকে যাব।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত