ভারতের সঙ্গে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পর্ক তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ভারতের সঙ্গে এক ধরনের অস্বস্তির সম্পর্ক তৈরি হয় বাংলাদেশের।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বিষয়ে শুরু থেকেই উদ্বেগ জানিয়েছিল ভারত। বাংলাদেশিদের ভারতে ভ্রমণ ভিসা দেওয়াও বন্ধ রাখা হয়।
সবশেষ গত ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার, তাকে কারাগারে পাঠানোর দিন পুলিশের সঙ্গে তার অনুসারীদের সংঘর্ষ, এক আইনজীবীর মৃত্যু, এই ঘটনা ঘিরে গ্রেপ্তার, চট্টগ্রামের ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশন অভিমুখে হেফাজতের লংমার্চ কর্মসূচি, বাংলাদেশের বেশ কিছু স্থানে ভারতীয় পতাকার পদদলন, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা ও বাংলাদেশের পতাকা পোড়ানোর ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্কে আরও তিক্ততা তৈরি হয়।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সুতো যখন টানটান অবস্থায় তখন হাসনাত আবদুল্লাহ বললেন, এখন থেকে ভারতের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলবে বাংলাদেশ। দুই দেশের সম্পর্ক ন্যায্যতার ভিত্তিতে চলবে, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক জোট আয়োজিত ‘বিপ্লবোত্তর ছাত্র ঐক্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন এই ছাত্র নেতা।
জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও প্রেস ক্লাব সভাপতি সুবর্ণ আসসাইফের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল হাসান তানভীর।
সভায় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “ফ্যাসিস্টদের আর কোন ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া যাবে না। এবার যদি আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে বাংলাদেশ আর কোনোদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।”
জুলাইয়ে শুরু হওয়া সংগ্রাম এখনও অব্যাহত জানিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের মধ্যে নীতিগত মতপার্থক্য থাকবে, এটা হলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু এই দেশের অখণ্ডতা, বিদেশি আগ্রাসন, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনও আপস চলবে না।”
আওয়ামী সরকার বছরের পর বছর ‘দিল্লিকে কেবলা’ বানিয়ে রেখেছিল, এমন অভিযোগও করেন হাসনাত।
তিনি বলেন, “যতদিন আমাদের মনে সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধ, সাজিদের রক্ত আছে, তদদিন ভারত আমাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে না। ভারতের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা হবে, সম্পর্ক হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে। আমাদের মধ্যে যতদিন ঐক্য আছে, ততদিন কেউ বিভেদ তৈরি করতে পারবে না।
“আমাদের সামনে অনেক রাস্তা অতিক্রম করতে হবে, সেই পথ অনেক বেশি কণ্টকাকীর্ণ। আমাদের মধ্যে ঐক্য রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য যেন পরমতসহিষ্ণুতার পর্যায়ে থাকে, আওয়ামী লীগের মতো দমন নিপীড়নের পর্যায়ে যেন না যায়।”
আলোচনা সভার উদ্বোধন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. রেজাউল করিম। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, ছাত্র অধিকার পরিষদের বিন ইয়ামিন মোল্লা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদসহ অন্যরা।