Beta
শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৫

ট্রাম্প শুল্ক কি চামড়া খাতে সুদিন ফিরিয়ে আনবে

রপ্তানিযোগ্য চামড়াপণ্য তৈরি করা হচ্ছে দেশের একটি কারখানায়।
রপ্তানিযোগ্য চামড়াপণ্য তৈরি করা হচ্ছে দেশের একটি কারখানায়।
[publishpress_authors_box]

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে এই খাত থেকে। এর বাইরে যে দু-তিনটি খাত থেকে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি আয় দেশে আসে, তার মধ্যে একটি চামড়া খাত।

কিন্তু এই খাতের উত্থান-পতন চলছে কয়েক বছর ধরে। করোনা মহামারীর পর সারা বিশ্বে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২০২১-২২ অর্থ বছরে এই খাত থেকে ১২৪ কোটি ৫২ লাখ (১.২৪ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ; যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২০-২১) চেয়ে ৩২ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।

কিন্তু পরের দুই অর্থ বছরে কমে যায়। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ১১৭ কোটি ৫৫ লাখ (১.১৭ বিলিয়ন) ডলারের বিদেশি মুদ্রা আয় করেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা; ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে আসে ১০৩ কোটি ৯১ লাখ (১.০৪ বিলিয়ন) ডলার।

গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে আবার ঘুরে দাঁড়ায়। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন, তার জের ধরে জ্বালাও-পোড়াও, সহিংস ঘটনার পর গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও গত অর্থ বছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১১৪ কোটি ৫১ লাখ (১.১৪ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়; প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ২০ শতাংশ।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। আর এটা হচ্ছে মূলত বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলোচিত পাল্টা শুল্কের কারণে। বলা যায়, ট্রাম্প শুল্ক চামড়া খাতের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, এই অর্থিক বছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) চামড়া ও চামড়াজাত বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪১ কোটি ৩৫ লাখ ডলার আয় করেছেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেশি। প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে ১০ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার ডলার।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের একই সময়ে আয়ের অঙ্ক ছিল ৩৭ কোটি ২২ লাখ ডলার।

অর্থ বছরের বাকি আট মাসে (নভেম্বর-জুন) এই হারে এলে অর্থ বছর শেষে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় ১২৪ কোটি (১.২৪ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে যাবে; যা হবে এতদিন এই খাত থেকে আসা (২০২১-২২ অর্থ বছরে ১.২৪ বিলিয়ন ডলার) সর্বোচ্চ আয়ের সমান।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে চামড়া খাত থেকে ৪১ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের যে বিদেশি মুদ্রা এসেছে, তার মধ্যে কাঁচাচামড়া রপ্তানি থেকে এসেছে ৪ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার, যা গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি।

চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে ১৩ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।

আর লেদার ফুটওয়্যার বা চামড়ার জুতা রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। জুলাই-অক্টোবর সময়ে জুতা রপ্তনি থেকে ২৩ কোটি ৯৮ লাখ ৬০ হাজার ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে; গত অর্থ বছরের একই সময়ে এসেছিল ২২ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

ইপিবির এই তথ্যই বলছে— রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা আর বাণিজ্যযুদ্ধের চাপের মধ্যেও দেশের চামড়াশিল্প আবার সুদিন ফিরে আসতে শুরু করেছে। পরিবেশগত দুর্বলতার কারণে একসময় অবহেলায় ঢেকে থাকা খাতটি এখন আবার আলোয় ফিরছে।

কারখানার উৎপাদন পরিবেশে উন্নয়ন এনে কিছু উদ্যোক্তা আন্তর্জাতিক লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ অর্জন করেছেন, যা কঠিন পথকে অনেকটা সহজ করেছে।

তা ছাড়া স্থানীয় কাঁচা চামড়ার রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববাজার থেকে চামড়া আমদানির মাধ্যমে দেশে মানসম্মত পণ্য তৈরি এবং মূল্য সংযোজনের প্রবণতা বেড়েছে। এভাবে ধীরে ধীরে বিশ্ববাজারে শক্ত জায়গা করে নিচ্ছে বাংলাদেশের চামড়াশিল্প।

চামড়া খাত থেকে রপ্তানি আয় বাড়ছে কেন— জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মূলত তিনটি কারণে চামড়া খাত থেকে আয় বাড়ছে। প্রথমত এর পেছনে কাজ করেছে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের ভূরাজনীতি। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার পর চীনের ওপর পাল্টা শুল্ক বসানোয় মার্কিন আমদানিকারকেরা বিকল্প উৎস খুঁজতে শুরু করেছেন।

“চীন থেকে সরে আসা অর্ডারের একাংশ এখন বাংলাদেশে ঢুকছে। আর এখানেই সুযোগ তৈরি হচ্ছে দেশের চামড়া ও জুতাশিল্পের জন্য। দ্বিতীয়ত ইউরোপ ও আমেরিকা মূল্যস্ফীতির ধাক্কা কাটিয়ে আমদানি বাড়িয়েছে। এবং তৃতীয়ত রপ্তানির বেস তুলনামূলক ছোট হওয়ায় সামান্য অগ্রগতিও শতাংশের হিসাবে বড় হয়ে ধরা দিচ্ছে।”

“তবে এই ইতিবাচক ধারা টেকসই করতে হলে অবকাঠামো ও বন্দর সুবিধা বাড়াতে হবে, দ্রুত পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করতে হবে এবং পরিবেশ সনদ অর্জনে মনোযোগ দিতে হবে,” বলেন আব্দুর রাজ্জাক।

রাজধানী ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তরিত হয়েছে ট্যানারিগুলো; সেখানে গড়ে উঠেছে চামড়াশিল্প নগরী। কিন্তু তার কোনও সুফল আসেনি এ খাতে।

বিভিন্ন দেশ থেকে মাঝে যে অর্ডারগুলো আসে, সেই সুযোগ ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিফলে গেছে। আর চামড়াশিল্প নগরী পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুত না হওয়ায়, কারখানার মানসনদ না মেলাসহ বিভিন্ন কারণে এখনও নতুন বাজারও সৃষ্টি করা যায়নি।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশের তৈরি চামড়ার জুতার সবচেয়ে বড় বাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এখন চামড়া খাত থেকে যে বেশি আয় দেশে আসছে, সেটা মূলত ট্রাম্প শুল্কের কারণেই বাড়ছে। বলা যায়, ট্রাম্প শুল্ক বাংলাদেশের চামড়া খাতের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কোভিডের মধ্যেও চামড়া রপ্তানিতে সুদিন ফিরে এসেছিল। চীন থেকে অনেক অর্ডার বাংলাদেশে আসছিল। সবকিছু মিলিয়ে চামড়া খাতে আমরা আশার আলো দেখছিলাম।

“কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সব তছনছ করে দিয়েছিল। এখন আবার সেই আলো দেখা দিয়েছে। আমাদের চামড়াজাত পণ্যের প্রধান বাজার হচ্ছে ইউরোপ। যুদ্ধের প্রভাব ইউরোপের দেশগুলোতেই বেশি পড়েছিল। এসব দেশের মানুষকে খাদ্যের পেছনেই অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছিল। সে কারণে তারা জুতাসহ অন্যান্য পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছিল। সে কারণেই মাঝে দুই বছর রপ্তানি কমে গিয়েছিল।”

তিনি বলেন, “এখন যে সম্ভবানা দেখা দিয়েছে, সেটা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের শুল্ক প্রতিযোগী দেশ ভারত, ভিয়েতনাম কিংবা ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে তুলনামুলক বেশি না হওয়ায়। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আমাদের এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়েছে।

“বিশেষত চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসতে পারেন। আমেরিকায় রপ্তানির ক্ষেত্রে চীন ও ভারতের শুল্ক বাংলাদেশে চেয়ে অনেক বেশি। মূলত এই সুবিধাই পাচ্ছে বাংলাদেশ।” 

এই ব্যবসায়ী নেতা জানান, সাভার চামড়াশিল্প নগরীর পরিবেশ নিয়ে মোটেই খুশি নন ক্রেতারা। ওখানকার চামড়া দিয়ে কোনও পণ্য উৎপাদন করলে ক্রেতারা কেনেন না। তাই বাধ্য হয়ে শিল্পনগরীর বাইরে তৃতীয় কোনও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাঁচামাল কিনে পণ্য উৎপন্ন করে থাকেন রপ্তানিকারকরা। কোভিডের পর চামড়া রপ্তানিতে নতুন করে যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, সেটা ধরে রাখতে সাভার শিল্পনগরীর পরিবেশ উন্নয়নে সরকার ও ট্যানারি শিল্পমালিকদের জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান এই শিল্পোদ্যোক্তা।

১০ বছরে রপ্তানির চিত্র

ইপিবির তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ১১৩ কোটি ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে ১১৬ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে আয় আরও বেড়ে হয় ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

এরপর থেকে এ খাতের রপ্তানি কমতে থাকে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে তা ১০৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলারে নেমে আসে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে তা আরও কমে ১০২ কোটি ডলারে নামে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে তা নামে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারে।

২০২০-২১ অর্থ বছর থেকে তা ফের বাড়তে থাকে; ওই অর্থ বছরে ৯৪ কোটি ১৭ লাখ ডলার আসে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে আবার ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে এক লাফে ১ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।

তখন সরকার, ট্যানারি মালিক ও রপ্তানিকারকরা আশা করেছিলেন চামড়াশিল্প খাতে সুদিন ফিরবে। কিন্তু পরের দুই অর্থ বছরের (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) সেই আশা ফিকে হয়ে যায়। এখন আবার সেই সুদিন ফেরার আশা দেখা দিয়েছে।

যুদ্ধের ধাক্কায় হোঁচট খেয়েছিল

বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রধান বাজার হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয় চামড়াজাত বিভিন্ন পণ্য।

কোভিড মহামারীর কারণে প্রায় দুই বছর স্থবিরতা চলার পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করে এই দেশগুলো। ছোট-বড় সব ধরনের শপিং মল খুলে যায়। পুরোদমে কেনাকাটা শুরু হয়। অর্থনীতিতে আবার গতি ফিরে আসে। অন্যান্য পণ্যের মতো চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদাও বাড়তে থাকে। সে কারণে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিও বাড়ছিল।

লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে জুতার মোট বাজারের ৫৫ শতাংশ চীনের দখলে। ভারত ও ভিয়েতনামেরও ভালো অবস্থান আছে। বিশ্বে জুতার বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮তম। বিশ্বে এ খাতে বাংলাদেশের অবদান মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ।

কোভিডের পর তৈরি পোশাকের মতো চামড়া খাতের রপ্তানিতেও নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। প্রধান রপ্তানিকারক দেশ চীনের কিছু অর্ডার বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছিল। ভিয়েতনাম থেকেও অর্ডার আসছিল।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সেসব দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। তারা অন্যান্য পণ্যের মতো চামড়া দিয়ে তৈরি জুতাসহ অন্য পণ্যও কেনা কমিয়ে দেয়। সে কারণেই এ খাতের রপ্তানি কমে গিয়েছিল বলে জানান বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা।

প্রতি বছর চামড়া খাত থেকে যে বিদেশি মুদ্রা দেশে আসে, তার প্রায় ১৫ শতাংশ রপ্তানি করে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। প্রতিষ্ঠানটি জার্মানি, ইতালিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে জুতা রপ্তানি করে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়ও জুতা রপ্তানি শুরু করেছে অ্যাপেক্স।

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সবকিছু মিলিয়ে চামড়া খাতে আমরা আবার আশার আলো দেখছি। নির্বাচিত সরকার আসলে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে এই খাত থেকে আয় ২০২১-২২ অর্থ বছরের চেয়ে বেশি আসবে।”

আগামী দিনগুলোতেও এ খাতের রপ্তানি আয় আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।

সম্ভাবনা হাতছাড়া হয়েছে যে কারণে

চামড়া খাতকে একসময় সম্ভাবনাময় মনে করা হলেও এটি ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছিল। দ্বিতীয় শীর্ষ এই রপ্তানি খাত চতুর্থ-পঞ্চম স্থানে নেমে গিয়েছিল। তবে ২০২১-২২ অর্থ বছরে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছিল। ঢাকার হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্প নগরী সাভারে স্থানান্তর নিয়ে দীর্ঘ জটিলতার কারণেই এ শিল্পের এই হাল বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে ২০০৩ সালে হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্প নগরী সাভারে স্থানান্তরে প্রকল্প গ্রহণ করে তৎকালীন সরকার। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্প শেষের কথা ছিল। তবে দেড় যুগ শেষ হলেও এই শিল্পনগরী এখনও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠেনি।

প্রকল্প শেষ না হলেও ২০১৭ সালে উচ্চ আদালত হাজারীবাগের চামড়া কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। ফলে সব কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে বেশ কিছু চামড়া কারখানার বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ ছিল। এ সনদের সুবাদে তারা জাপান, কোরিয়াসহ ইউরোপ-আমেরিকায় চামড়া রপ্তানি করতে পারত। হাজারীবাগে কারখানা বন্ধ হওয়ায় সেই সনদ ও বায়ার (বিদেশি ক্রেতা) হারায় চামড়াশিল্প কারখানাগুলো।

এত দীর্ঘ সময়েও সাভারের চামড়াশিল্প নগরী পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুত না হওয়ায় এখনও এলডব্লিউজির সনদ ফিরে পায়নি কারখানাগুলো। একইসঙ্গে নতুন বাজার সৃষ্টি হয়নি। সনদ না থাকায় জাপান, কোরিয়াসহ ইউরোপ-আমেরিকায় এলডব্লিউজির আওতায় চামড়া রপ্তানি করতে পারছে না কারখানাগুলো। আর এ বিধিনিষেধের কারণে এসব কারখানা থেকে কাঁচামাল নিয়ে পণ্য উৎপন্ন করে সে পণ্য রপ্তানিও করতে পারছে না রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।

এলডব্লিউজি সনদ পেতে বাধা কোথায়

বিসিক ও বিডার এক গবেষণায় দেখা গেছে, এলডব্লিউজি পেতে হলে চামড়াশিল্পের পরিবেশগত মান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ১৭টি বিষয়ে ১ হাজার ৭১০ নম্বর পেতে হয়। যার মধ্যে ৩০০ নম্বর রয়েছে সিইটিপিসংক্রান্ত। বাকি ১ হাজার ৪১০ নম্বর রয়েছে জ্বালানি খরচ, পানির ব্যবহার, রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, চামড়ার উৎস শনাক্তকরণ, দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার মান ইত্যাদি বিষয়। এসব মানদণ্ড পূরণের দায়িত্ব ট্যানারি মালিকদের।

জানা গেছে, বর্তমানে ১৫ থেকে ২০টি ট্যানারির এলডব্লিউজি সনদের শর্ত পূরণ করার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু তারা অন্যান্য মানদণ্ডে ভালো নম্বর পেলেও সিইটিপিসংক্রান্ত নম্বরে পিছিয়ে রয়েছে, ফলে সনদও মিলছে না। কারণ তরল বর্জ্য, রাসায়নিক ঠিকমতো পরিশোধন হচ্ছে না, যা দূষিত করছে আশপাশের নদী ও পরিবেশ।

এখন পর্যন্ত এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে মাত্র সাতটি প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হচ্ছে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, রিফ লেদার, এবিসি লেদার, সুপারেক্স লেদার, সাফ লেদার, সিমোনা ট্যানিং এবং অস্টান লিমিটেড। এগুলোর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান ফিনিশড লেদার উৎপাদন করে।

তবে সাভারের ট্যানারি পল্লীতে এই সনদ পেয়েছে একমাত্র সিমোনা ট্যানিং। প্রতিষ্ঠানটি ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার উৎপাদন করে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত