জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অতন্ত্রপ্রহরী হিসেবে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের নতুন প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মো. আসাদুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে জনগণের অধিকার সংরক্ষণে কাজ করা।”
মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করে আসাদুজ্জামান বলেন, “দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মুগ্ধ, আবু সাঈদসহ এ আন্দোলনের যারা শহীদ হয়েছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। তারা এ জাতির সূর্য সন্তান।”
তিনি বলেন, “আমি মানবাধিকার কর্মী। প্রজাতন্ত্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে আমার চেষ্টা থাকবে দেশের আপামর জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এ অফিস যেন অতন্ত্রপ্রহরী হিসেবে কাজ করে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যারা জীবন দিয়েছিলেন, একইভাবে ২০২৪ সালেও এসে যারা জীবন দিয়েছেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে তাদের রক্তের দিন শোধ করার দিন। দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস সে লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।”
আগের অ্যাটর্নি জেনারেলরা দলীয় হয়ে কাজ করেছেন, আপনিও কি তাই করবেন– এমন প্রশ্নের জবাবে নতুন আসাদুজ্জামান বলেন, “প্রথম কথা হলো অ্যাটর্নি জেনারেল কোনও দলের না। অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রের। নির্দিষ্ট একটা দল সরকার পরিচালনা করে থাকে। সেই সরকারের কিছু এজেন্ডা থাকে। সেই গুলো যখন আদালতে আসে তখন সরকার আমার মক্কেল। আমাদের কাজ হচ্ছে মক্কেলের অর্ডার ক্যারি (বহন) করা।”
এ সময় তিনি সদ্য সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের প্রশংসা করে বলেন, “তিনি একজন সজ্জন ব্যক্তি, বিনয়ী, ভালো মানুষ। তিনি যেটা করেছেন, আমি মনে করি, সরকার ওনার মক্কেল, সেই মক্কেলের পক্ষে কাজ করেছেন।
“হ্যাঁ, অনেক সময় দেখা গেছে সরকারের কিছু অবৈধ আদেশ বহন করতে হয়েছে। সেটা মক্কেল আর আইনজীবীর সম্পর্ক। আমার প্রধান আর প্রথম কাজ হচ্ছে– এ রাষ্ট্রের জনগণের পক্ষে অবস্থান নেওয়া। জনগণের অধিকার সংরক্ষণ করা। একইভাবে যারা সরকারে থাকবেন তাদেরও কিন্তু লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের জন্য কাজ করা। এখন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে সরকার আসছে তারা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে এসেছে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের রক্ষক। সংবিধানকে সম্মুন্নত রাখার জন্য, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অনতিবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট খুলে দেওয়া উচিত। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের পর যারা দেশের দায়িত্ব নেবেন, তারাই নির্ধারণ করবেন বিচারপতি কারা থাকবেন, কারা থাকবে না। এই ক্ষেত্রে আমার যদি কোনও পরামর্শ দেওয়ার থাকে দেব। দুর্নীতি ও দলকানা বিচারপতিদের ব্যাপারে রাষ্ট্রের দায়িত্বে যারা থাকবেন, তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।”
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “একজন আইনজীবী ও মানবাধিকার হিসেবে আমি বলব– প্রতিটি মিথ্যা মামলা সরকারের প্রত্যাহার করা উচিত। বাকি সিদ্ধান্ত রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা থাকবেন তাদের সিদ্ধান্ত।”
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “স্বাধীনতার চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে হলে যত অসংবিধানিক, যত মানবাধিকারবিরোধী পদক্ষেপ আছে, অবশ্যই সংশোধন করা হবে।”
তা না করা হলে স্বাধীনতা ও মুক্তিযোদ্ধা এবং দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে বলেও মনে করেন এ আইন কর্মকর্তা।
দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্যে এ এম আমিন উদ্দিন অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করার পর বৃহস্পতিবার বিকালে সুপ্রিম কোর্টের জ্যৈষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৪(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামানকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ প্রদান করিলেন। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হইবে।”