বগুড়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে বন্ধের ঘোষণাটি জানতেন না শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ফলে সকাল থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় গিয়ে ফিরে এসেছেন। আবার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানও হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে কি না তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
একই রকম অবস্থা পাওয়া গেছে পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ জেলায়। বেলা ১২টার দিকে সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় জেলার শিক্ষা প্রশাসন।
বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, সোমবার বগুড়ায় সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চলতি মৌসুমের বগুড়ায় এটিই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। রবিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাপমাত্রার পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, “এই তাপমাত্রা আগামীকাল (মঙ্গলবার) বাড়বে কি কমবে তা আগে থেকে জানার উপায় নেই। আগামীকাল সকাল ৬টার দিকে তাপমাত্রা পরিমাপ করে দেখতে হবে।”
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়ার প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিনের মতো সকালে উপস্থিত হয় শিক্ষার্থীরা। অনেক স্থানে নিয়মিত কার্যক্রমও চলে। পরে বন্ধের বিষয়টি জানার পর পাঠদান থামিয়ে ছুটি দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের।
বগুড়া শহরের জিলা স্কুল, বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দি সিটি গার্লস হাইস্কুলসহ আরও বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে প্রতিটি স্কুলেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখা গেছে। তারা স্কুলে আসার পর বন্ধের কথা জানতে পেরে ফিরে যায়। এতে ভোগান্তির শিকার হয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
কয়েকজন অভিভাবক জানান, তীব্র শীতের কারণে স্বাস্থ্য বিবেচনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। এটা ঠিক আছে। কিন্তু বিষয়টি জানানোর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যে কারণে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আবার শৈত্যপ্রবাহ কতদিন চলবে, কতদিন স্কুল বন্ধ থাকবে— এটাও জানার কোনও উপায় নেই।
সকালে পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তুবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন মা বুলি বেগম। তিনি বলেন, “সকাল ১০টার দিকে এসে শুনি স্কুল বন্ধ। কিন্তু আমাদের আগে কিছু জানানো হয়নি। এখন মেয়েকে নিয়ে ফিরে যাচ্ছি।”
সুলতানগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিব জানায়, “স্কুলে যাওয়ার পর স্যারেরা আমাদের বাসায় চলে আসতে বলছে। শীতের জন্য নাকি স্কুল বন্ধ হয়েছে।”
বন্ধের নির্দেশনা সময়মতো না পাওয়ায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকাল থেকে পাঠদান করেছেন বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষকেরা। সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জোবায়ের আহমেদ বলেন, “আমাদের স্কুলে সকাল থেকে পাঠদান হয়েছে। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে একটা চিঠি আসে। চিঠিতে স্কুল বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর কর্তৃপক্ষ স্কুল বন্ধ ঘোষণা করে।”
বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মুস্তফী বলেন, “জেলা শিক্ষা অফিস থেকে স্কুল ছুটির নির্দেশনা আমাদের আজকে সকালে জানানো হয়েছে। এরপর আমরা স্কুল ছুটি দিয়েছি।”
কতদিন পর্যন্ত ছুটি দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ছুটি তো আমাদের হাতে নেই। এটি শিক্ষা অফিসের কাছে। আগামীকালের তাপমাত্রা কী হবে… এরপর শিক্ষা অফিস থেকে আমাদের ছুটির বিষয়ে বললে আমরা আবার নোটিশ করে দেব।”
সকালে বন্ধের নির্দেশনার নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, শুধুমাত্র আজকের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
আগামীকালের জন্য কী ব্যবস্থা হবে এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “আবহাওয়া অফিস থেকে তথ্য নিয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আজকে যেমন শিক্ষার্থীরা আসার পর ফিরে গেছে এ রকম যেন না হয় সেজন্য আমরা চেষ্টা করব। কীভাবে এটা করা যায় বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।”
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী বলেন, “আজ সকালে আবহাওয়া অফিসে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস জানার পর স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই নির্দেশনা সব স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি রাজশাহীতে যাচ্ছি। সেখানে আমাদের মিটিংয়ে শৈতপ্রবাহের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কতদিন বন্ধ থাকবে, কবে খোলা হবে এসব নিয়ে আলোচনা করা হবে।”
জেলার শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১ হাজার ৬০৩টি। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ৪৪৯টি, মাদ্রাসা ৩০৭টি, কলেজ আছে ৩১টি।
এদিকে, সোমবার বেলা ১২টার দিকে বাঘাবাড়ি আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে সিরাজগঞ্জের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
সিরাজগঞ্জের প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজি সলিম উল্লাহ বিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশনা দেন। কিন্তু এর আগে জেলার অনেক বিদ্যালয়ে পাঠদান চলেছে বলে জানা গেছে।
সিরাজগঞ্জে ১ হাজার ৬৭৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৫৪৪টি মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা রয়েছে।
বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা সোমবার জানালেও পাবনা জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয় রবিবার রাতেই।
সোমবার পাবনার ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রবিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পাবনার মতো নওগাঁর প্রাথমিক পর্যায়ের ১ হাজার ৩৭৪টি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪৪৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয় রবিবার। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান রবিবার সন্ধ্যায় এই বন্ধের নির্দেশনা দেন। নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারাদেশেও এদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
রংপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩ দিন বন্ধ ঘোষণা
তীব্র শীতের কারণে রংপুর জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম তিনদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার সকালে সকাল সন্ধ্যাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুরের প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সোমবার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পত্র মোতাবেক এবং বিভাগীয় উপ-পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা, রংপুর বিভাগের পরামর্শক্রমে ২২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনদিনের জন্য রংপুর জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে তিনদিনের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেরিতে জানায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু ছিল। পরে সাংবাদিক ও অন্য সহকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক ছুটি দিতে দেখা গেছে।
রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা সকালেই উপপরিচালক স্যারের ম্যাসেজ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিয়ে দিয়েছি। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এই ম্যাসেজ দেরিতে দেখেছেন। যার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সবাইকে এ বিষয়ে আগে থেকেই অ্যালার্ট করে দেওয়া হয়েছিল। আমরা বিষয়গুলো দেখছি গুরুত্ব সহকারে।”
একই কথা জানান প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, “সবাইকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সজাগ থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রথম দিনের জন্য এরকম হয়েছে, পরবর্তী সময়ে আর এমন হবে না।”
এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এক নির্দেশনায় জানায়, তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হলে স্কুল-কলেজের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয়ও বন্ধ থাকবে। কোনও জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যদি ১০ ডিগ্রির নিচে নামে, সেক্ষেত্রে সেই জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হবে।
রংপুরে সোমবার সকাল ৬টায় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বলে জানান আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান।