শীতের সবজির ভরা মৌসুমেও ঢাকার বাজারে দাম চড়া। বাজার ভেদে দামে ফারাক ১০-১৫ টাকা। নতুন আলুর দাম প্রায় সব বাজারেই এক থাকলেও মৌসুমি পেঁয়াজের দাম লাগামছাড়া। বারোমাসি সবজি লাউ ও কাঁচামরিচের দাম অন্য সবজির চেয়ে অনেক বেশি।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও বাজারভেদে শীতের সবজির দামে ভিন্নতা রয়েছে। কৃষকের কাছ থেকে কেনা সবজি শহরে বিক্রি হচ্ছে অনেক বেশি দামে।
খিলগাঁও রেলগেট
ঢাকার খিলগাঁও রেলগেট কাঁচাবাজারে মঙ্গলবার একটি মাঝারি আকারের লাউয়ের দাম ৭০-৯০ টাকা। নতুন আলু আকার ভেদে ৫৫-৬০ টাকা কেজি। টমেটোর কেজি ৪০-৫০ টাকা। প্রতিটি ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকা। কাঁচামরিচের কেজি ১০০-১২০ টাকা। নতুন দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা, বিদেশিটা ৮০-৯০ টাকা।
শান্তিনগর
শান্তিনগরের কাঁচাবাজারে একই আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮৫-১০০ টাকায়। আলুর দামে তেমন পার্থক্য নেই। টমেটো, ফুলকপি, কাঁচামরিচ, দেশি পেঁয়াজের দামও অন্যান্য বাজারের মতোই। বাঁধাকপির দাম এই বাজারে একটু বেশি, প্রতিটি ৫০-৫৫ টাকা।
সবজি বিক্রেতা সুজন মিয়া বলেন, ‘‘আমরা যেখান থেকে কিনি, ওইখানেই দাম বেশি। ফুলকপি আজকে (মঙ্গলবার) কিনছি ৪৫ টাকা দিয়ে, এখন বলেন কয় টাকায় বেচব? ৫৫-৬০ টাকায় না বেচলে তো কোনও লাভ থাকে না।’’
হাতিরপুল
হাতিরপুল কাঁচাবাজারে একটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। আলুর দাম অন্যান্য কাঁচাবাজারের মতোই, কেজি ৬০ টাকা। তবে এই বাজারের শীতের অন্যতম সবজি টমোটো ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এই বাজারের খুব কাছেই রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ানবাজার। হাতিরপুল বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম অন্যান্য বাজারের মতোই ৫০-৬০ টাকার মধ্যে। পেঁয়াজের দামও অন্যান্য বাজারের মতো ৯০- ১০০ টাকা কেজি। তবে কাঁচামরিচের ঝাঁজ অনেক বেশি। এই বাজারে কাঁচামরিচ ১৫০-১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এই বাজারের মো. বশির আহমেদ বলেন, ‘‘দাম তো আমাদের হাতে নাই। আমরা পাইকারিতে যে দামে কিনি, সেই দামের সঙ্গে ভ্যান ভাড়া, দোকানের খরচ মিলিয়ে ৫-১০ টাকা বেশি হলেই বেচে দেই।
‘‘আমরাও তো বিপদে। রাতে একটা হিসাব করে বাজারে যাই সবজি কিনতে, গিয়ে দেখি আগের দিনের থেকেও দাম বেড়ে গেছে। যতটুকু কিনব ভেবে গেছি, তার থেকে কিনতে হচ্ছে কম। আবার মানুষ কেনার সময় দাম বেশি নিয়া ঝগড়া করে।’’
মহাখালী
মহাখালী কাঁচাবাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। আলু ৫৫ টাকা কেজি। লাউ ১০০ টাকা প্রতিটি। বড় আকারের ফুলকপি ৫০ টাকা প্রতিটি। বাঁধাকপি ৪০ টাকা প্রতিটি। শিম ধরনভেদে ৫০-৯০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচ ১০০ টাকা কেজি। টমেটো ৬০-৭০ টাকা প্রতিকেজি।
শেখেরটেক
শেখেরটেক ৭ নম্বরের কাঁচাবাজারে নতুন দেশি পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকা কেজি। একই পেঁয়াজ ভ্যানে করে বিক্রি হচ্ছে ২ কেজি ১৫০ টাকায়। আলু ৬০ টাকা কেজি। লাউ ৮০ টাকা প্রতিটি। বড় আকারের ফুলকপি ৫০ টাকা প্রতিটি। বাঁধাকপি ৪০ টাকা প্রতিটি। শিম ধরনভেদে ৬০-৮০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচ ১২০ টাকা কেজি। টমেটো ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
টাউন হল
মোহাম্মাদপুরের টাউনহল বাজারে মঙ্গলবার দেশি পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আলু ৬০ টাকা কেজি, ২ কেজি একসঙ্গে নিলে ১১০ টাকা। লাউয়ের আকারভেদে ৮০-১২০ টাকা প্রতিটি। আকারভেদে ফুলকপি ৪০-৭০ টাকা প্রতিটি। বাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকা প্রতিটি। শিম ধরনভেদে ৫০-১০০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচ ১০০ টাকা কেজি। টমেটো ধরনভেদে ৩০-৬০ টাকা কেজি।
কারওয়ান বাজার
সবজির পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি লাউ ৬০-৭০ টাকা, আলুর ৫০ টাকা ও টমেটো ৫০ টাকা কেজি। বড় আকারের ফুলকপি প্রতিটি ৪০-৪৫ টাকা। বাঁধাকপি ২০-৩০ টাকা প্রতিটি। কাঁচামরিচ ৮০-৯০ টাকা কেজি। দেশি পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকা কেজি।
কাওরানবাজারের এক আড়তদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ‘‘পরিবহন খরচ গত কয়েকদিনে বেড়ে গেছে। ট্রাক নিয়ে ঢাকায় আসলে জায়গায় জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। এরপর দাম কমাই কীভাবে।
‘‘সবজি তো মজুদ রাখা যায় না। তাই মাঠ থেকে সরাসরি আমরা আনি। এসময় সবাই জানে আমাদের চাপ দিলে চাঁদা দিতে আমরা বাধ্য।’’
‘‘মানুষ দাম বেশি দেখে কম কিনে, আমাদের অনেক ব্যবসায়ী সবজি এনে এবার লোকসান করছে। তাই আমরাও সবজি আনা কমিয়েছি।’’
ঢাকার বাইরের চিত্র
বগুড়া
মঙ্গলবার জেলা শহরের পাইকারি বাজার রাজাবাজারে কার্ডিনাল আলু ৪৮ টাকা ও পাকড়ি আলু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি ফুলকপি ৪০ টাকা, শিম ৪০-৮০ টাকা কেজি। টমেটো ৪০-৩০ টাকা কেজি। বেগুন ৪০-৬০ টাকা কেজি। গাজর ৪০ টাকা, মটরশুটি ১৪০ টাকা কেজি। পাইকারিতে মরিচ ৫০ টাকা কেজি।
সেখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার আলুর সংকট আছে। আলু আক্রান্ত হয়েছে। আলু নষ্ট হচ্ছে। আগে এক বিঘায় আলু পাওয়া যেত ৬০ বস্তা, এখন কৃষক পাচ্ছে ৫০-৫৫ বস্তা। এখন কৃষক দাম পাচ্ছে তাই বিক্রি করে দিচ্ছে।
পেঁয়াজ-রসুনের পাইকার জিল্লাল হোসেন বলেন, আড়তে আঁদা-রসুনের দাম একটু বেশি। রসুন ২৪০ টাকা কেজি। আঁদা ২০০-১৮০ টাকা কেজি। আর পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজাবাজারে পাশের খুচরা বাজার ফতেহ আলী বাজারের ব্যবসায়ী মো. শামিম। তিনি জানান, খুচরায় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৭৫-৮০ টাকা কেজি দরে। আলু ৫০ টাকা ও টমেটো ৩৫-৪০ টাকা কেজি। শশা ৪০ টাকা, ফুলকপি ৪০-৪৫ ও বাঁধাকপি ২০-২৫ টাকা কেজি। কয়েকদিন আগে আলু ছিল ৬০-৬৫ টাকা কেজি, এটার দাম ১০ টাকা কমেছে। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৮০-৮৫ টাকায়, কেজিতে দাম কমেছে ৫-১০ টাকা। কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজি, সপ্তাহখানেক আগে ছিল ৮০ টাকা।
রংপুর
সিটি বাজারে কাঁচামরিচ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলু ৫০-৬০ টাকা কেজি। পেঁয়াজ ৮০-৮৫ টাকা কেজি। টমেটো ৪০-৫০ টাকা কেজি। লাউ প্রতিটি ৪০-৫০ টাকা। ফুলকপি ৫০ টাকা। শিম ৪০ টাকা কেজি।
বরিশাল
পাইকারি সিটি মার্কেট থেকে জানা যায়, জেলা শহরে পাইকারিতে কাঁচামরিচ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাইকারিতে টমেটো ৩৫ টাকা কেজি, ফুলকপি ৪০ টাকা প্রতিটি, লাউ ৩৫-৪৫ টাকা প্রতিটি, কালো শিম ৪০ টাকা ও সবুজ সিম ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে আলু ৪২ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৫৫-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি সবজি বিক্রেতা দুলাল বাণিজ্যালয়ের মালিক আমিনুল ইসলাম শুভ বলেন, খুচরায় কাঁচামরিচ ৮০-১০০ টাকা, টমেটো ৫৫ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, লাউ ৫০-৬০ টাকা, শিম ৫০-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আলু ৬০ টাকা ও পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
মাদারীপুর
জেলা শহরের পুরোনো কাঁচাবাজারে খুচরায় আলু ৪৫ টাকা, কাঁচামচির ৮০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শিম ৬০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। গাজর ৪০ টাকা ও বাঁধাকপি ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুলনা
জেলা শহরের বাজারে কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, টমেটো, আলুর দাম কমলেও বেড়েছে ফুলকপি ও লাউয়ের দাম। শেখ পাড়া কাঁচাবাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। সপ্তাহ খানেক আগে দাম ছিল ৬০-৭০ টাকা। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়, গত সপ্তাহে ছিল ৭০-৮০ টাকা। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। লাউ প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৫০ টাকা। শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০-৮০ টাকায়। ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০-৪০ টাকা।
একই অবস্থা গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ি, ফরিদপুর অঞ্চলের বাজারগুলোতে। একই রকম দামে বিক্রি হচ্ছে শাক-সবজি।
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে সবজি চাষ ব্যাহত হচ্ছে বলে সরবরাহ কম, দাম একটু বেশি—এই দাবি পাইকারদের। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। আর ভোক্তারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তারা বিপাকে।
কী বললেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
শীতের সবজির দামও কেন চড়া—এ প্রশ্নের জবাবে নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ‘‘তরি-তরকারির দাম যদি একটু বেশি হয়, তাতে যদি কৃষকের কাছে কিছু বেশি টাকা যায়, তাতে তো সমস্যা নাই।’’
ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রসঙ্গ টানলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা পুরো বিষয়টি মনিটর করছি। আমরা সাপ্লাই চেইনটি ঠিক করে ফেলতে চাই।
‘‘কোথায় কোথায় প্রতিবন্ধতা আছে, তা চিহ্নিত করছি আমরা। মাত্র ৪৮ ঘণ্টা সময় হলো মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব নিয়ে বসেছি। কিছুটা সময় দেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা আমাদের বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার।’’