Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে অর্থবহ সংস্কার অসম্ভব : মাইকেল চাকমা

জাতীয় প্রেসক্লাবে ইউপিডিএফের সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন মাইকেল চাকমা। ছবি: সকাল সন্ধ্যা
জাতীয় প্রেসক্লাবে ইউপিডিএফের সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন মাইকেল চাকমা। ছবি: সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে দেশে প্রকৃত অর্থবহ সংস্কার সম্ভব নয় বলে মনে করছেন পাহাড়ি সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা।

তার মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা’ থেকে মুক্ত না করলে সমতলের জনগণও প্রকৃত মুক্তি পাবে না।

মঙ্গলবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দেশের রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংস্কারের লক্ষ্যে ৮ দফা দাবি জানান ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা।  

২০১৯ সালের ৯ই এপ্রিল নিখোঁজ হন মাইকেল চাকমা। সেসময় ইউপিডিএফ দাবি করে, নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে সাংগঠনিক কাজ শেষে ঢাকা ফেরার পথে রাষ্ট্রীয় সংস্থার হাতে গুম হন মাইকেল চাকমা। এরপর তার কোনও হদিস পাওয়া যায়নি।

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কথিত আয়নাঘরে মাইকেল চাকমাকে আটকে রাখা হয়েছে-ইউপিডিএফসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো এমন অভিযোগ করলেও তৎকালীন সরকারকে এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদলের ঠিক পরদিন চট্টগ্রামে একটি জায়গায় চোখ বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায় মাইকেল চাকমাকে।

দীর্ঘ পাঁচ বছর তিন মাস বন্দীদশা থেকে মুক্তির প্রায় তিন সপ্তাহ পর মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে হাজির হন মাইকেল চাকমা। এসময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন জানান তিনি।  

পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন বা নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা জারি রেখে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে গণতন্ত্র কায়েম সম্ভব নয় বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন মাইকেল চাকমা।

তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে দেশে প্রকৃত অর্থবহ সংস্কার সম্ভব নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুক্তি না দিয়ে সমতলের জনগণও প্রকৃত মুক্তি পেতে পারে না।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির সংস্কার চান কি না- এ প্রশ্নের জবাবে মাইকেল চাকমা বলেন, “যে শান্তিচুক্তি আছে, সেটি পরিপূর্ণ নয়। আমরা অবশ্যই এর পরিবর্তন চাই।”

ইউপিডিএফ ও তার সমর্থকদের ২৯ জন সদস্য বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন বলে জানান মাইকেল চাকমা।

এসময় আয়নাঘর নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, “আয়নাঘরে মানুষদের অমানবিকভাবে আটকে রাখা হতো। হিটলার যেভাবে তার কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে ধরে নিয়ে রাখত, আয়নাঘর ধরে নিতে পারেন ঠিক তেমন একটি জায়গা, যেখানে মানুষের সব অধিকার লঙ্ঘন করা হয়।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম সংস্কারে ইউপিডিএফের ৮ দফা

সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংস্কারে ইউপিডিএফ যে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে সেগুলো হচ্ছে

১. অবিলম্বে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদের নাম প্রকাশ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারপূর্বক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

২. খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলে আটক ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মুক্তি দিতে হবে। আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর জেল গেট থেকে পুনরায় গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে এবং শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নামে করা সব মিথ্যা মামলা ও হুলিয়া প্রত্যাহার করতে হবে।

৩. ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্য মুখোশ বাহিনী ও মগ লিবারেশন পার্টি ভেঙে দিতে হবে এবং তাদের মধ্যে যারা খুন, গুম, অপহরণ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারপূর্বক শাস্তি দিতে হবে।

৪. গণহত্যা ও পানছড়িতে চার যুব নেতা হত্যাসহ শেখ হাসিনার আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে এবং তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে যুক্ত করতে হবে।

৫. নির্দলীয়, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে।

৬. বান্দরবানে চলমান কেএনএফবিরোধী অভিযানের নামে বম জাতিগোষ্ঠীকে নিশানা করে জাতিনিধন অভিযান বন্ধ করতে হবে এবং শিশু, নারীসহ আটককৃত বমদের মুক্তি দিতে হবে।

৭. খাগড়াছড়ির রামগড়ে গৃহবধূকে ধর্ষণকারীদের গ্রেপ্তার এবং রাঙামাটি ও বান্দরবানে ধর্ষণচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে।

৮. পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ‘অপারেশন উত্তরণ’ বাতিলপূর্বক সেনাশাসন প্রত্যাহার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১ দফা নির্দেশনা বাতিল করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত