Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

মানবদেহে প্রথম ডাবল ফুসফুস প্রতিস্থাপন করল রোবট

ফুসফুস প্রতিস্থাপন
সম্পূর্ণভাবে রোবটের সাহায্যে ডাবল ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয় রোগী চেরিল মেহরকারের দেহে।
[publishpress_authors_box]

চিকিৎসাশাস্ত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতাল। তারা মানবদেহে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণরূপে রোবটের সাহায্যে ডাবল ফুসফুস প্রতিস্থাপন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ইউএস টুডে জানিয়েছে, নিউইয়র্কের ইস্ট সাইডের এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন হেলথ সেন্টারে গত ২২ অক্টোবর চেরিল মেহরকার নামে ৫৭ বছর বয়সী এক নারীর দেহে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ রোবটের সাহায্যে ডাবল ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এই পদ্ধতির লক্ষ্য হলো রোগীর সুস্থতার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা এবং তার হাসপাতালে থাকার সময়কাল কমিয়ে আনা।

এর আগে ২০২২ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডার্স সিনাই হাসপাতালে আংশিক রোবটিক পদ্ধতিতে একজনের দেহে একটি ফুসফুস (সিঙ্গেল লাং) প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।

এরপর গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের ইস্ট সাইডের এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন হেলথ সেন্টারের চিকিৎসকরা সম্পূর্ণ রোবটিক পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো মানবদেহে একটি ফুসফুস প্রতিস্থাপন করেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তারা ডাবল ফুসফুস প্রতিস্থাপনের নজির গড়লেন।

মানবদেহে হৃৎপিণ্ডের দুই পাশে দুটি ফুসফুস থাকে। এগুলো স্পঞ্জের মতো নরম ও কোমল এবং হালকা লালচে রঙের হয়। ডানপাশের ফুসফুস বাম পাশেরটির চেয়ে কিছুটা বড় হয়। একজন স্বাভাবিক পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে থাকা দুটি ফুসফুসের ওজন একসঙ্গে প্রায় ১ কেজি ৩০০ গ্রামের মতো হয়।

হাসপাতালের বিছানায় চেরিল মেহরকার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠছেন।

যে নারীর দেহে রোবটের সাহায্যে ডাবল ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, সেই চেরিল মেহরকার নিউইয়র্কেরই বাসিন্দা। গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজে (সিওপিডি) ভুগছিলেন। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের পর তার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

মেহরকারের দেহে ফুসফুস প্রতিস্থাপনে অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন এনওয়াইইউ ল্যাংগোন হেলথ সেন্টারের ফুসফুস প্রতিস্থাপন প্রোগ্রামের সার্জিক্যাল ডিরেক্টর ড. স্টেফানি এইচ. চ্যাং।

তিনি বলেন, “এই প্রযুক্তির সাহায্যে বড় ধরনের কাটাকাটির প্রয়োজন হয় না। সাধারণত যেখানে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত কাটার প্রয়োজন হয়, সেখানে এই অস্ত্রোপচারে ২ ইঞ্চির ছোট ইনসিশন দিয়েই কাজ শেষ করা সম্ভব। ফলে বুকে আঘাত অনেক কম হয়।”

চেরিল মেহরকার ইতোমধ্যে হাসপাতালের ভেতরে হাঁটাচলা শুরু করেছেন এবং শিগগিরই তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি অস্ত্রোপচারের আগে তার শারীরিক কষ্টের কথা জানিয়েছেন।

মেহরকার বলেন, “আমার মনে আছে, একবার আমাকে ইএমটি (জরুরি মেডিকেল টেকনিশিয়ান) হিসেবে একটি নার্সিং হোমে যেতে হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ৮৫ বছর বয়সী এক নিরাপত্তা রক্ষী আমার চেয়ে ভালোভাবে সিঁড়ি বেড়ে উঠছিল। তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এটা ভালো লক্ষণ নয়।”

দাতার কাছ থেকে পাওয়া এই ফুসফুসটিই প্রতিস্থাপন করা হয় চেরিল মেহরকারের দেহে।

তিনি জানান, ফুসফুসের চিকিৎসার জন্য বছরের পর বছর ঘুরেছেন। অবশেষে এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন তাকে জানায় যে, তিনি ফুসফুস প্রতিস্থাপনের যোগ্য।

“তারা যখন আমাকে তালিকায় যুক্ত করল, আমি ভাবলাম, ঠিক আছে, আরও কয়েক মাস লাগবে। আর পাঁচ দিন পরে আমি তাদের কাছ থেকে ফোন পাই। তারা বলল, তারা এমন একজনের খোঁজ পেয়েছেন যার ফুসফুসের সঙ্গে আমার ফুসফুসের ৯৮ শতাংশ মিল পাওয়া গেছে।

“তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, আপনি কত তাড়াতাড়ি আসতে পারবেন? জবাবে আমি জানাই, আমি দুই ঘণ্টার মধ্যে সেখানে থাকব।”

মেহরকারের ডাবল ফুসফুস প্রতিস্থাপনে এই সাফল্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তার অঙ্গদানকারী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি শুধু জানি এটি একজন তরুণের ফুসফুস। এটুকুই। তার পরিবার শোকাহত, আর আমি এখন তার ফুসফুসে শ্বাস নিচ্ছি। এটি ভাবতেই অবিশ্বাস্য মনে হয়।”

এই পদ্ধতি সার্জারির জগতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও উন্নত এবং সহজলভ্য হবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত