পুনর্বহালের দাবি তুলেছে অপসারিত নারী ভাইস চেয়ারম্যানরা। দাবি মানা না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে তারা।
নতুন অন্তর্বর্তী সরকার স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধিদের সরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুমকি দেওয়া হয়।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা বানু নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের পক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে গত সোমবার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনগুলো সংশোধনের পর জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নির্বাচিত সব চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মেয়রদের অপসারণ করে।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর এই পদগুলোর প্রায় সবকটিতে আওয়ামী লীগ নেতারা ছিলেন। তারা ভোটে নির্বাচিত হলেও আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সংবাদ সম্মেলনে লায়লা বানু বলেন, “নারীর ক্ষমতায়নের পথ আরও মসৃণ করতে স্বতন্ত্র মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।”
সরকার তাদের দাবি বিবেচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “তবে আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে আমরা বিষয়টি নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি।”
তাদের দাবির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে লায়লা বলেন, “এই নারী জনপ্রতিনিধিরা কোনও দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেন না। বরং স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেন। কিন্তু এই স্বতন্ত্র পদটি অপসারণ করায় আমরা যখন পরবর্তীতে নির্বাচন করতে যাব, তখন বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হব। এতে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এই পদটি বহাল থাকলে নারীদের জীবনমান উন্নয়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করতে পারব।”
গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণের আগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
লায়লা বলেন, “ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে এ দেশের নারীরা আজ স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় সংসদ, সব ক্ষেত্রেই অংশগ্রহণ এবং দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সরকারের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিধান তৃণমূলের নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক সিদ্ধান্ত।
“২০০৯ সালে প্রথমবারে মতো বাংলাদেশে উপজেলা পরিষদে একটি আসন মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়, যা কি না রাষ্ট্র পরিচালনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আর এক ধাপ অগ্রগতি।”
তিনি বলেন, নারী ভাইস চেয়ারম্যানরা এক বা একাধিক কমিটির সভাপতি হওয়া ছাড়াও চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী চেয়ারম্যান, উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা প্রসার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম তদারকি করেন। সমাজকল্যাণ ও জনহিতকর কার্যক্রম, নারী শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, যৌতুক ও বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করেন।