বাংলাদেশের অনুশীলন শেষে একে একে রেখা পাওডেল, সাবিত্রা ভান্ডারিরা ঢুকলেন কাঠমান্ডুর আর্মি হেড কোয়ার্টার মাঠে। রেখার হাতে ছিল ব্লুটুথ সাউন্ড সিস্টেম। ফুল ভলিউমে গান শুনতে শুনতে মাঠে ঢুকলেন সব নেপালি ফুটবলার।
সাফের ৭ আসরের ৬ বারই রানার্স আপ নেপাল। সর্বশেষ ২০২২ সালে কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। আরেকটি সাফের ফাইনালে বুধবার নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
২৩ সদস্যের এই দলে এবার নতুন মুখ ৯ জন। কিন্তু গত আসরের চ্যাম্পিয়ন দলের অনেকেই নেই এবারের দলে। কোচিং স্টাফ, টেকনিক্যাল ডিরেক্টর, ফুটবলারসহ চ্যাম্পিয়নদের অনেকে হয়তো দূরে বসেই উপভোগ করবেন এবারের সাফ। জেনে নেওয়া যাক চ্যাম্পিয়নদের কে কে নেই এবারের দলে।
পল স্মলি
বাফুফের সাবেক এই টেকনিক্যাল ডিরেক্টর অনেক নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হলেও নারী ফুটবলের উন্নতিতে বেশ কাজ করেছিলেন। গত বছর জুলাইয়ে বাংলাদেশ ছাড়ার আগ পর্যন্ত নারী ফুটবল নিয়ে কাজ করে গেছেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ফাইনালে উঠলে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু এসে দলের সঙ্গে যোগ দেন।
গোলাম রব্বানী ছোটন
জাতীয় নারী দলের সমার্থক হয়ে যাওয়া ছোটন বাফুফের চাকরি ছাড়েন গত বছর মে মাসে। বাংলাদেশের মেয়েদের সাফ জয়ে যার সবচেয়ে বড় অবদান সেই কোচ ছোটন অবশ্য না থেকেও আছেন এই দলে। প্রতিটি ফুটবলার প্রতিটি ক্ষণ তাকে স্মরণ করছেন। তহুরা খাতুন ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচ সেরার পুরস্কার উৎসর্গ করেছেন। সাবিনা খাতুন ম্যাচের আগে পরামর্শ নিচ্ছেন ছোটনের কাছ থেকে। এমনকি ঋতুপর্ণা চাকমাও ফাইনালের আগের দিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমার প্রিয় কোচ ছোটন স্যার। তাকে মিস করছি।”
আঁখি খাতুন
জাতীয় নারী ফুটবল দলে চীনের প্রাচীরের মত রক্ষণ পাহারা দিতেন আঁখি। কিন্তু গত বছর আঁখি ফুটবল ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন চীনে। বর্তমানে চীনে ব্যস্ত রয়েছেন আঁখি। কিন্তু আঁখির বদলি হিসেবে তার জায়গা নিয়েছেন আফঈদা খন্দকার।
সিরাত জাহান স্বপ্না
বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে গতিময় স্ট্রাইকার। রংপুরের পালিচড়ার এই ফুটবল কন্যা অনেকটা অভিমানে অবসরে চলে যান গত বছর। অথচ গত সাফে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন স্বপ্না। তিনি গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে করেন ১টি গোল। এরপর ভারতের বিপক্ষে করেন জোড়া গোল। ভুটানের বিপক্ষেও সেমিফাইনালে ১টি গোল এসেছিল স্বপ্নার পা থেকে। চোটে পড়ে ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে মাত্র ১১ মিনিট খেলতে পেরেছিলেন তিনি। কিন্তু তার বদলি নেমেই ১৩ মিনিটে বাংলাদেশের প্রথম গোলটি পেয়ে যান শামসুন্নাহার জুনিয়র।
কোন দলটি সেরা
গত আসরের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ সেরা, নাকি এবারের দলটি? কাঠমান্ডু দশরথ রঙ্গশালায় ফাইনাল পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন করা হয় সাবিনাকে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সাবিনা বলেন, “কঠিন প্রশ্ন। গতবারের দলটি একটু অভিজ্ঞতায় ভরা ছিল। গতবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। এখন যদি বলি আমার কাছে এই দলটা সেরা তাহলে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে দোষের হবে। আমার কাছে মনে হয়েছে গতবারের প্রত্যেকটা ফুটবলারের পারফরম্যান্সই ছিল অসাধারণ। প্রত্যেকটি ফুটবলার জান দিয়ে খেলেছে। ওই দলের সঙ্গে যদি এবারের দলের তুলনা করেন দুটি দলকেই এগিয়ে রাখব।”
তিনি এরপর যোগ করেন, “যদি দেখেন যে কটি ম্যাচ খেলেছি আমরা, সবাই বলেছে দারুণ ফুটবল খেলেছি। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে ম্যাচের পর বাংলাদেশ থেকে অনেকে ফোন করে বলেছে, আমাদের খেলা দেখে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। মেয়েরা গুছিয়ে এত সুন্দর ফুটবল খেলে। এবারের টুর্নামেন্টেও মনে হয়েছে মেয়েরা এমন সুন্দর ফুটবল খেলছে। মেয়েদের ফুটবলটা ভালো হচ্ছে সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে ভালো বলে মনে হয়।”