যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলার শিকার হয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় পেনসিলভেনিয়ায় নির্বাচনী প্রচারে বক্তব্য দেওয়ার সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। এতে কানে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এ ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র ট্রাম্পের ওপর গুলির ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন এবং এই ঘটনাকে “একটি রাজনৈতিক সহিংসতা” বলে অভিহিত করেছেন।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, “গণতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করে– এমন যেকোনো ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলা দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত বোধ করেছেন জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, “আমাদের সমাজে কোনও ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনও স্থান নেই এবং এই হামলার শিকার সবার প্রতি আমার সমবেদনা।”
নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানোর ঘটনাকে “উদ্বেগজনক” বলে উল্লেখ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ।
অন্যদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, এই ঘটনায় তিনি অসুস্থবোধ করছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “রাজনৈতিক সহিংসতা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।”
থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, নিউজিল্যান্ড ও ফিলিপাইনের নেতারাও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বন্ধু হিসেবে সম্বোধন করে তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। রাজনীতি ও গণতন্ত্রে সহিংসতার কোনও জায়গা নেই।”
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা গুলির ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলাকে গণতন্ত্রের রক্ষকদের অবশ্যই কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করা উচিত। আজ আমরা যা দেখলাম তা অগ্রহণযোগ্য।”
ট্রাম্পের ওপর হামলায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও। এই ঘটনাকে তাকে হতবাক করেছে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সময় ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল জানিয়ে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বলেছেন, ‘এই কঠিন অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে’ তার প্রার্থনা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যার হামলায় ৭৮ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্প কানে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হলেও তার সমাবেশে আসা এক ব্যক্তি নিহত ও দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছেন হামলাকারীও।
যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) জানিয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানো ব্যক্তির নাম টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস। ২০ বছর বয়সী এই তরুণের বাড়ি পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের বেথেল পার্ক এলাকায়।
সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া হামলার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ট্রাম্প মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার মধ্যেই হঠাৎ গুলির শব্দ হয়। সঙ্গে সঙ্গে কানে হাত দিয়ে নিচে বসে পড়েন ট্রাম্প। এরপর নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত তাকে ঘিরে ফেলেন। কিছুক্ষণ পর ট্রাম্প উঠে দাঁড়ান। সে সময় ট্রাম্পের ডান কান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল। রক্ত লেগেছিল তার মুখেও।
মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্লোগান দিতে শুরু করেন ট্রাম্প। ডান হাতের মুঠি শক্ত করে উপরের দিকে ছুড়ে দিয়ে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘ফাইট, ফাইট, ফাইট।’
যু্ক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি এ ঘটনাকে ‘জঘন্য’ আখ্যায়িত করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের সহিংসতার কোনও জায়গা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের মুখপাত্র অ্যান্থনি গুগলিয়েলমি জানিয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন নিরাপদ আছেন। ঘটনাটি সিক্রেট সার্ভিস তদন্ত করছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন ‘ভালো আছেন’ বলে জানিয়েছে তার প্রচার দলও। ইতোমধ্যে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন তিনি।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স ও বিবিসি