নিউজিল্যান্ডের বিলুপ্ত হুইয়া পাখির একটি পালক নিলামে ২৮ হাজার ৩৬৫ মার্কিন ডলারে (৪৬ হাজার ৫২১ নিউজিল্যান্ড ডলার) বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩৩ লাখ ১৮ হাজার ৭০৫ টাকা (১ ডলার = ১১৭ টাকা হিসাবে)।
এর মধ্য দিয়ে একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত বিক্রি হওয়া সবচেয়ে দামি পাখির পালক। পালকটি বিক্রি হয়েছে সোনার চেয়ে প্রায় ৫৭ গুণ বেশি দামে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পালকটির ওজন ৯ গ্রাম। অর্থাৎ প্রতি গ্রাম হুইয়া পাখির পালকের দাম পড়েছে ৬ লাখ ৫ হাজার ৮৬৯ টাকা (৫ হাজার ১৬৯ মার্কিন ডলার)। যেখানে বর্তমানে প্রতি গ্রাম সোনার দাম ১০ হাজার ৬৪৯ টাকা।
গত সোমবার পালকটি নিলামে তোলার আগে ধারণা করা হয়েছিল পালকটির দাম ৩ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে। কিন্তু এই দামে বিক্রি হওয়ার পর তা আগের রেকর্ডটি ভেঙে দিয়েছে বলে জানিয়েছে নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ‘ওয়েব’স।
একই প্রজাতির পাখির আগের পালকটির চেয়ে এটি ৪৫০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। ২০১০ সালে নিলামে বিক্রি হওয়া হুইয়া পাখির আগের পালকটির দাম উঠেছিল ৮ হাজার ৪০০ ডলার।
হুইয়া পাখি দেশটির আদিবাসী জনগোষ্ঠী মাওরিদের কাছে একটি পবিত্র পাখি। এই পাখির পালক প্রায়ই তাদের জনগোষ্ঠীর প্রধানরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মাথায় পরতেন। এই পাখির পালক উপহার হিসেবে বা ব্যবসার জন্যও ব্যবহার করা হতো।
নিউজিল্যান্ডের জাদুঘরের তথ্য মতে, হুইয়া পাখি সর্বশেষ নিশ্চিতভাবে দেখা যায় ১৯০৭ সালে। তার পরের ২০ থেকে ৩০ বছর ধরেও এই পাখির দেখা পাওয়ার খবর মিললেও তা নিশ্চিত নয়।
নিউজিল্যান্ডের ‘ওয়াটলবার্ড’ গোত্রের একটি ছোট গানের পাখি ছিল হুইয়া। এই পাখি লাফানোর সক্ষমতা এবং সুন্দর পালকের জন্য পরিচিত ছিল।
সোমবার বিক্রি হওয়া পালকটি খুবই অক্ষত অবস্থায় ছিল বলে দাবি করেছেন নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েব’স-এর ডেকোরেটিভ আর্টসের প্রধান লেয়া মরিস।
তিনি বিবিসিকে বলেন, “এখনও পালকটি এর অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে চকচকে অবস্থায় আছে এবং কোনও পোকামাকড় এর ক্ষতি করেনি।”
তিনি আরও বলেন, “নিলামকারী প্রতিষ্ঠান পালকটি অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধক কাচের বাক্সের ভেতর আর্কাইভাল কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। এতে এটি দীর্ঘদিন অক্ষত থাকবে।
পালকটি অবশষ্য যে কেউ চাইলেই কিনতে পারবে না। নিউজিল্যান্ডের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় পালকটিকে একটি ‘তাওঙ্গা তুতুরু’ হিসেবে নিবন্ধিত করেছে। তাওঙ্গা তুতুরু মাউরিদের ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি। এর অর্থ হল খাঁটি সম্পদ।
শুধুমাত্র লাইসেন্সিধারী সংগ্রাহকরা এই পালক কেনার অনুমতি পাবেন এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া তারা এই পালক দেশের বাইরে নিতে পারবেন না।
মিসেস মরিসের মতে, পালকটি নিয়ে নিউজিল্যান্ডবাসীদের অতি আগ্রহ এর দাম বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা রেকর্ড সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে আবেদন পেয়েছি, যারা পালকটি সংগ্রহ করার জন্য নিবন্ধিত সংগ্রাহক হতে চেয়েছে।”
মরিস বলেন, “আমরা (নিউজিল্যান্ডবাসী) আমাদের ভূমি, পরিবেশ, উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের প্রতি খুব যত্নশীল।”
তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি, যেহেতু এই পাখিটি এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে, আমরা নিউজিল্যান্ডের অন্যান্য পাখির দিকে তাকাব এবং বলব, আমরা চাই না আর কোনও পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাক।”
অতীতে হুইয়া পাখির পালক মাওরিদের কাছে একটি মর্যাদাকর চিহ্ন ছিল। ইউরোপীয়দের আগমনের আগে থেকেই এটি একটি বিরল পাখি। নিউজিল্যান্ডের জাদুঘরের তথ্য মতে, ইউরোপীয়দের কাছেও পাখিটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এরপর সংগ্রাহক এবং ফ্যাশন ব্যবসায়ীরা পাখিটি ধরতে শুরু করলে তা বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যায়।
ইউরোপীয়রা এখনও হুইয়া পাখির জন্য ব্যাকুল। ২০২৩ সালে ব্রিটেনে মৃত এক জোড়া হুইয়া পাখির জীবাশ্ম ৪ লাখ ৬৬ হাজার নিউজিল্যান্ড ডলারে বিক্রি হয়।