Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আটকাতে হাই কোর্টে হাসনাতরা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
[publishpress_authors_box]

ক্ষমতা হারিয়ে ছন্নছাড়া আওয়ামী লীগের পুনরায় সংগঠিত হওয়া ঠেকাতে আদালতের আশ্রয় নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

শেখ হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এই প্ল্যাটফর্মের তিনজন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও হাসিব আল-ইসলাম সোমবার দুটি রিট আবেদন করেছেন হাই কোর্টে, সেখানেই আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পাঁচ দিন পর এই রিট আবেদন হলো।

তবে রিট আবেদনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনও কথা নেই বলে জানিয়েছেন আবেদনকারী সারজিস আলম।

তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, ১. আওয়ামীলীগের বিগত ৩টি নির্বাচনকে কেন অবৈধ ঘোষনা করা হবে না এবং অবৈধভাবে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো কেন ফিরিয়ে দিবে না সে বিষয়ে প্রথম রিট ৷ ২. এই মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কেন তাদেরকে পলিটিক্যাল সকল একটিভিটি থেকে বিরত রাখা হবে না সে বিষয়ে দ্বিতীয় রিট ৷

“দল হিসেবে নিষিদ্ধ কিংবা নিবন্ধন নিষিদ্ধের কোনও কথা রিটে নেই।”

আবেদনে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু), বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল (দিলীপ বড়ুয়া), বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলকেও (বাসদ) বিবাদী করা হয়েছে।

অর্থাৎ এই দলগুলোর কার্যক্রম চালানো বন্ধ রাখার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।

এর দলগুলোর অধিকাংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থাকলেও সিপিবি, বাসদ, এলডিপি সেই জোটে নেই। বরং এই তিনটি দল আওয়ামী লীগ সরকার হটানোর দাবিতে আন্দোলনে ছিল।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী বলেছেন, তারা বিবাদীদের তালিকা সংশোধন করবেন।

একটি রিট আবেদনে আওয়ামী লীগসহ দলগুলোকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা ও এসব দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সব ধরনের নির্বাচনে এসব দল যাতে অংশ নিতে না পারে, সে নির্দেশনাও চাওয়া হয়।

আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, নির্বাচন কমিশন, পুলিশের মহাপরিদর্শককেও (আইজি) রিট আবেদনে বিবাদী করে তাদের প্রতি এই রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে।

দ্বিতীয় রিট আবেদনে বিগত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের প্রাপ্ত সরকারি সুবিধা (প্লট, কর ও শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি, বেতন-ভাতা) পুনরুদ্ধারের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এই রিট আবেদনে আইন সচিব, নির্বাচন কমিশন (ইসি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) বিবাদী করে তাদের প্রতি রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র সমন্বয়করা। ফাইল ছবি

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ এবং গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এই রুলও চাওয়া হয়েছে আবেদনে।

সেই সঙ্গে গেজেট জারির মাধ্যমে এই তিনটি সংসদ নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে প্রশ্নেও রুল চাওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ আমলের ওই তিনটি নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে কেন রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হবে না, সে রুলও চেয়েছে রিট আবেদনকারীরা। ওই সংসদ সদস্যদের প্রাপ্ত সুবিধা (প্লট, কর ও শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি, বেতন-ভাতা) পুনরুদ্ধারের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, সেই রুলও চাওয়া হয়েছে।

আবেদন দুটি বিচারপতি ফাতেমা নজিব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী আহসানুল করিম। তিনি বলেন, “শুনানির আগে রিট আবেদনটির কিছু বিষয় সংশোধন করা হতে পারে।”

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজ বিন ইউসুফ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আজ (সোমবার) রিট আবেদন দুটি শুনানির জন্য বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চে (মেনশন) উত্থাপন করেছিল রিটকারী পক্ষ। তখন আদালত বলেন, রিট আবেদন দুটিতে বেশকিছু সাংবিধানিক বিষয় জড়িত। সিনিয়র অন্য কোনও বেঞ্চে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আদালত রিট আবেদন দুটি আউট অব লিস্ট (কার্যতালিকা থেকে বাদ) করে দেন।”

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগকে দল হিসাবে নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন বাতিল করতে গত ১ সেপ্টেম্বর একটি রিট আবেদন হলে তা সরাসরি খারিজ করে দিয়েছিল বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

ওই আবেদনে জুলাই ও আগস্টে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় নির্বিচারে ছাত্র-জনতাকে হত্যার অপরাধের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

গত ২৭ আগস্ট ওই আবেদনের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান হাইকোর্টকে আবেদনটি সরাসরি খারিজ করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছিলেন, “কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার ইচ্ছা বর্তমান সরকারের নেই।”

সোমবার নতুন রিট আবেদনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ছাত্রলীগকে সরকার নিষিদ্ধ করেছে। তবে কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত