সুপ্রাচীনকাল থেকে প্রাচুর্য প্রদর্শনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক লেনদেনেও গুরুত্ব বহন করে চলেছে স্বর্ণ বা সোনা। স্বর্ণকে বলা হয় অর্থের সবচেয়ে স্থায়ী রূপ। সোনার চোখ ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য, অনন্যসাধারণ দীপ্তি, চাকচিক্য ও রঙের তীব্রতা মানুষকে অভিভূত করে চলেছে হাজার হাজার বছর ধরে; আর সে কারণেই এর মূল্য কখনো শূন্যতে নামেনি।
কখনও কখনও একটু-আধটু কমলেও সারা বিশ্বে মূল্যবান এই ধাতুর দাম বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশেও তার ব্যত্যয় হয়নি। বেড়েই চলেছে সোনার দাম; রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে।
সবশেষ বৃহস্পতিবার দেশের বাজারে সোনার দাম খানিকটা কমেছে। সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা কমেছে। একদিন আগে বুধবার এই মানের সোনার দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা বাড়িয়েছিল দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
শুক্রবার থেকে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনা কিনতে এক লাখ ১০ হাজার ৬৯১ টাকা দিতে হবে। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার জন্য দিতে হবে ১ লাখ ৫ হাজার ৬৭৬ টাকা। ১৮ ক্যারেটের ৯০ হাজার ৫৭১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার জন্য লাগবে ৭৫ হাজার ৪৬৬ টাকা।
বাজুসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালে ২৯ বার সোনার দাম সমন্বয় করা হয়। এর মধ্যে দাম কমানো হয় ১১ বার, বাড়ানো হয় ১৮ বার। গত বছরের শুরুতে (জানুয়ারি) ভালো মানের অর্থাৎ হলমার্ক করা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ছিল ৮৮ হাজার ৪১৩ টাকা। ২০২২ সালের শুরুতে ২২ ক্যারেট মানের প্রতি ভরি সোনা বিক্রি হয় ৭৩ হাজার ১৩৩ টাকায়। ২০২১ সালের জানুয়ারির শুরুতে এই মানের প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ৭২ হাজার ৬৬৭ টাকা। এছাড়া ২০২০ সালের জানুয়ারির শুরুতে ছিল ৫৯ হাজার ১৯৫ টাকা এবং ২০১৯ সালের জানুয়ারির শুরুতে দাম ছিল ৪৭ হাজার ৪৭২ টাকা।
হিসাব করে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়েছে ৬৩ হাজার ২১৯ টাকা।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত বছরের জুলাইয়ের শেষের দিকে প্রথমবারের মতো সোনার ভরি লাখ টাকা ছাড়ায়। মাঝে অবশ্য একবার লাখের নিচে নেমেছিল। এর পর থেকে বাড়ছেই। অথচ বাংলাদেশ যে বছর স্বাধীন হয়, তার আগের বছর সোনার ভরি ছিল ১৫৪ টাকা। ১৯৭৩ সালে ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
২০০০ সালে সোনার ভরি বেড়ে ৬ হাজার ৯০০ টাকায় দাঁড়ায়। ২০১০ সালে এই ধাতুর দাম বেড়ে ভরি ৪২ হাজার ১৬৫ টাকা হয়। ২০২০ সালে সোনার ভরি ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকায় পৌঁছায়।
বাজুসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০ বছর আগে ২০০২ সালে বাংলাদেশে প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ৬ হাজার টাকা। বর্তমানে ১ লাখ ১০ হাজার ৬৯১ টাকা। হিসাব বলছে, এই দুই দশকে সাড়ে ১৮ গুণ বেড়েছে এই ধাতুর দাম।
মূলত করোনা মহামারির পর বিশ্বব্যাপী সোনার দামে অস্থিরতা দেখা দেয়। তখন নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য সোনাকেই বেছে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এতে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর সোনার দাম কিছুটা কমলেও গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আবার বাড়তে থাকে। গত বছরের শেষ দিকে অবশ্য সোনার দাম কিছুটা কমেছিল।
মূলত টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই দেশের বাজারে সোনার দাম লাখ টাকা ছাড়িয়েছে বলে মনে করছেন দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামের ওপর আমাদের এখানে সোনার দামের উঠা-নামা হয়। আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করি। বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ববাজারে সোনার দাম ওঠা-নামা করছে। এই বাড়ছে তো, ওই কমছে।”
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “বুধবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেশ বেড়ে গিয়েছিল। আমরাও বাড়িয়েছিলাম। কিন্তু এক দিন যেতে না যেতেই বৃহস্পতিবার বাজার কমে যায়। সে কারণে আমরাও সমন্বয় করে ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা কমিয়েছি।”
মাসুদুর বলেন, “আমাদের দেশে এখন বৈধভাবে আমদানি করা কোনও গোল্ড আসে না। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে আমাদের স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য ওঠানামা করে। যখন আমাদের এখানে পিওর গোল্ডের দাম বাড়ে, তখন আমরা বাড়াই। আবার যখন কমে যায়, তখন কমিয়ে দেই।”
ডলারের দামের ওপরেও সোনার দাম নির্ভর করে জানিয়ে তিনি বলেন, “গত দুই বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দর ৩২ শতাংশের মত বেড়েছে। ৮৫ টাকার ডলার এখন ১২০ টাকা। সব মিলিয়ে স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের দাম বেড়েছে।”
আন্তর্জাতিক বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম, ২.৬৫ ভরি) স্বর্ণ ২ হাজার ১৩ ডলার ৫৩ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগে ২৪ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৫২ ডলার ৯৯ সেন্ট।
দুই মাস আগে ২২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৯৮০ ডলার।
বিশ্বে সোনাকেই সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য পণ্য হিসেবে ধরা হয়। বলা হয়, একমাত্র এই পণ্যটির দরেই সাধারণত বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা যায় না। এটি কিনে রাখলে লোকসানের ভয় নেই। এ কারণেই সোনার প্রতি সবার এত আকর্ষণ। ৫০ বছর আগে কেউ সোনা কিনে রাখলেও তা ভালো বিনিয়োগ হিসেবেই বিবেচিত। শেয়ারবাজার, ডলার বা অন্য কিছু- এই নিশ্চয়তা দেয় না।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে সোনার কেনাকাটা হয় গহনাসামগ্রীতে। এই শ্রেণির ক্রেতার কাছে গহনার চাহিদা ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে কমেছে ১৫ শতাংশেরও বেশি। কিন্তু এর পরও আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়ছে।
কেন দাম বাড়ছে
সোনার দামের সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির একটি সম্পর্ক আছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে আগামী দিনগুলোতেও অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকি থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন। করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ইসরায়েল–ফিলিস্তিন যুদ্ধ সেই অনিশ্চয়তার পালে কিছুটা হলেও হাওয়া দিয়েছে। যত বেশি অনিশ্চয়তা, তত বেশি সোনা বিক্রি। যত বেশি মূল্যস্ফীতি, তত বেশি সোনার মূল্যবৃদ্ধি। ঐতিহাসিকভাবেও দেখা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়েই সোনার দাম সবচেয়ে বেশি বাড়ে।
এমন নয় যে, সোনার দাম কেবল লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছেই। মাঝেমধ্যে কমছেও। এটাও অনিশ্চয়তার ফল। সুদের হার বাড়ানো নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা বা অর্থনীতি মন্দায় আক্রান্ত হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার ওপরও নির্ভর করছে সোনার দামের ওঠানামা।
এই দাম আপাতত কমবে, এমন পূর্বাভাসও কেউ দিচ্ছেন না। যখনই মনে হয় অর্থনীতির সঙ্কট হয়তো কেটে যাচ্ছে, তখনই সোনার দাম খানিকটা পড়ে যায়। আবার যখন মনে হয় সুদহার বাড়িয়েও কাজ হচ্ছে না, তখনই দাম বাড়ে সোনার।
অর্থনীতির গবেষক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অর্থনৈতিক সংকট দীর্ঘ হলে এবং এর থেকে মূল্যস্ফীতি বাড়ার ভয় তীব্র হলে সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখতে আর্থিক কর্তৃপক্ষের কাছে অর্থের চেয়ে ক্ষয়হীন সোনার মজুদের প্রতি ঝোঁক বাড়ে। কারণ অর্থের (টাকা বা ডলার) মান যেকোনো সময় অবনমন হতে পারে, কিন্তু সেই অর্থে মজুত সোনার কোনো ক্ষয় হয় না।”
দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “সংকটকালে সোনার মজুত বাড়াতে পারলে সংশ্লিষ্ট দেশ অর্থনৈতিকভাবেও অন্যের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। কেননা, পরে দাম বেশি পেলে ওই সোনা বিক্রি করেও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। তবে কোনও কোনও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী পরিমাণ সোনা কিনছে বা বিক্রি করছে তা খুব একটা বাইরে প্রকাশ পায় না।”
আহসান মনসুর বলেন, “স্বর্ণ কিনে কারও লোকসান হয়েছে বা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এমন নজির বিশ্বে নেই। একই কথা সাধারণ ভোক্তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ কারণে করোনা মহামারি ও যুদ্ধের কারণে মানুষের আয় ও স্বাভাবিক বিনিয়োগ কমে গেলেও সামর্থ্যবানরা সোনা বা স্বর্ণালঙ্কার মজুতে বিনিয়োগ করছেন।”
শুধু বাংলাদেশে নয়, প্রায় সব দেশে বহুকাল ধরেই মানুষ নিরাপদ ভেবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করছেন, বলেন এই অর্থনীতিবিদ।
সোনার দাম ও ভোক্তার আচরণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দুজন অর্থনীতিবিদ গবেষণা করেছেন। ‘গোল্ডেন ডিলেমা’ নামে ওই গবেষণায়ও দাবি করা হয়, ‘সঙ্কটকালে সোনার দাম বাড়ে। ভয় বা আতঙ্কের কারণেই এটা হয়, যা ১৯৩০ সালের মহামন্দার পর থেকে দৃশ্যমান হতে দেখা গেছে।’
সোনার কেনাকাটায় স্থানীয় বাজারে নিয়ন্ত্রণ খুব একটা না থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে যাতে কোনো ‘বাবল’ তৈরি হতে না পারে সেজন্য সিলিং বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ১৯৯৯ সালে ওয়াশিংটন চুক্তি নামে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিও রয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, কোনও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক বছরে ৪০০ টনের বেশি সোনা বিক্রি করতে পারবে না।
বাংলাদেশে এ খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ী ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের স্বত্বাধিকারী বাজুসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, “সোনার বাজারটি অন্যসব পণ্যের মতো নয়। বিশ্বে বিভিন্ন দেশের দায়িত্বশীল এজেন্ট ও বায়াররাই সোনার বাজারের মূল নিয়ন্ত্রক। বিশ্ব যখন স্থিতিশীল থাকে তখন সোনা কেনার প্রতি এদের চাহিদা কম থাকে।”
“যখনই বিশ্ব সংকটের মুখোমুখি হয় তখন নিজ নিজ দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অনুমোদিত লোকাল এজেন্টরা ক্রেতা সেজে হাজার হাজার কেজি সোনা কিনে মজুত রাখেন। এভাবে সব দেশ যখন একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ সোনা কেনার তৎপরতা চালায়, তখন চাহিদা ও জোগানের ফর্মুলা অনুযায়ীই সোনার দাম বাড়তে থাকে।”
তিনি বলেন, “সোনার মজুত দেশকে নিরাপদ রাখে। ফলে এই ভয়-আতঙ্ক সামাল দিতেই যেকোনো সংকটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একটি অংশ সংরক্ষণ করে বলে সার্বিকভাবে সোনা কেনার প্রবণতা বাড়ে। আবার যাদের মজুত বেশি আছে তারা এই সময়ে বাড়তি দামে বিক্রিও করেন। করোনার পর যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও এখন তাই ঘটতে দেখা যাচ্ছে। যার প্রভাব দেশেও পড়েছে।”
ডলারের মূল্যবৃদ্ধিও দাম বাড়াচ্ছে
দুই বছর আগে বাংলাদেশে ১ ডলারের জন্য গুনতে হতো ৮৫ টাকা। এখন লাগে ১১০ টাকা। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপীই ডলারের রমরমা অবস্থা। বিশ্বের বেশিরভাগ প্রধান মুদ্রা ডলারের বিপরীতে মূল্যমান হারিয়েছে। ফলে চাঙা ডলার অনেক দেশের জন্যই বিপদের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে স্বল্প আয়ের দেশগুলো আছে বেশি বিপদে। তাদের আমদানি বেশি, রপ্তানি কম। আর সিংহভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যেহেতু ডলারে করতে হয়, তাই এসব দেশকে টিকে থাকতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করতে হচ্ছে।
ডলারের ওপর অতিনির্ভরশীলতা থেকে বাঁচতে রাশিয়া ও চীনসহ বিভিন্ন দেশ বহু আগে থেকেই সোচ্চার। ভবিষ্যতেও হয়তো এ নিয়ে নানা উদ্যোগ থাকবে। এতে ডলারের ওপরে আস্থা কমে গেলে অনেকেই সোনার দিকে ঝুঁকে পড়বে।
জ্বালানি তেলের কেনাবেচার সঙ্গেও সোনার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সোনার দামও বেড়ে যায়। কারণ, তখন অনেক দেশই সোনার বিনিময়ে জ্বালানি তেল বিক্রি করে থাকে। আর যেহেতু এখন ডলারের কারণে বিশ্বের মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা চলছে, ফলে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে সোনার চাহিদাও বাড়ছে।
বাংলাদেশে চাহিদা কত?
বাংলাদেশের সোনার চাহিদা কত, এ নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোনও তথ্য নেই। স্বর্ণ নীতিমালায় বলা আছে, দেশে প্রতিবছর ২০ থেকে ৪০ মেট্রিক টন সোনার চাহিদা তৈরি হচ্ছে। আবার বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বলছে, প্রতিবছর সোনা চোরাচালানের আর্থিক পরিমাণ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। মূলত সোনা চোরাচালানের অর্থ লেনদেন হয় হুন্ডিতে।
আবার গহনা বানানো ছাড়া দেশে সোনার তেমন কোনো চাহিদাও নেই। অন্যান্য দেশের মতো সোনায় বিনিয়োগ করার মতো কোনো বন্ড বা আর্থিক উপাদানও গড়ে ওঠেনি।
ফলে গহনা বানানো বা সোনার বার কিনে রাখাই এখন একমাত্র বিনিয়োগ। অথচ সোনায় বিনিময়যোগ্য আর্থিক কোনো উপাদান থাকলে তাতে দেশই লাভবান হতে পারত, যা পাশের দেশ ভারতেও রয়েছে।
‘সবাই যদি স্বর্ণকে সম্পদ হিসেবে চিন্তা করেন, তাহলে আগামী ২০ বছরে কী হতে পারে?’ এই প্রশ্ন করে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাজুসের সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, “এখন ভরি এক লাখ টাকার কিছু বেশি; ২০ বছর পর ১০ লাখও হতে পারে এটা। এভাবে চিন্তা করতে হবে। শুধু দাম বাড়ল সেটা নিয়ে হতাশ হলে চলবে না। যারা আগে কিনেছেন, তারা কত লাভবান হয়েছেন, সেটা তো চিন্তা করতে হবে।”
তিনি বলেন, “স্বর্ণের দাম আমরা নির্ধারণ করি না, আন্তর্জাতিক বাজারে নির্ধারণ হয়। সেটার আঙ্গিকে দেশে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়।”
বাজুসের তথ্য বলছে, মাত্র তিন বছরের ব্যবধানেই দেশের বাজারে সোনার দাম বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। ২০২০ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে ভালো মানের সোনার ভরি ছিল ৭০ হাজার টাকার সামান্য কম। এখন বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার বেশি।