Beta
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪

কক্সবাজার সৈকতে বিষধর ইয়েলো-বেলিড সাপ

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে বুধবার দেখা মেলে ইয়েলো-বেলিড সাপের।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে বুধবার দেখা মেলে ইয়েলো-বেলিড সাপের।
Picture of আঞ্চলিক প্রতিবেদক, কক্সবাজার

আঞ্চলিক প্রতিবেদক, কক্সবাজার

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার পর এবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এক সপ্তাহে দেখা মিলেছে তিনটি বিষধর ইয়েলো-বেলিড সামুদ্রিক সাপের। অবশ্য হাতিয়ার মতো সৈকতে ভেসে আসা সাপগুলো সুস্থ ছিল না। প্রতিটিই অসুস্থ ছিল। তিনটির মধ্যে একটিকে পর্যটকরা মেরে ফেলেছে। বাকি দুটি উদ্ধার করে সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাইফ গার্ড কর্মী জয়নাল আবেদীন বলেন, “২৯ মে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ভেসে আসে একটি ইয়েলো-বেলিড সামুদ্রিক সাপ। সেটি উদ্ধার করে সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর সোমবার এ ধরনের আরেকটি সাপ এলে পর্যটকরা সেটিকে পিটিয়ে মারে।

“সর্বশেষ বুধবার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে পাওয়া ইয়েলো-বেলিড সামুদ্রিক সাপ উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছি। প্রতি বর্ষা মৌসুমে এখন এই সাপের দেখা মিলছে। খুব বিষাক্ত এই সাপের বিষয়ে পর্যটকদের সতর্ক করা হয়েছে।”

গত বছর কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে ইয়েলো-বেলিড সাপ দেখা গিয়েছিল। এরপর এ বছরের এপ্রিলের শেষে হাতিয়ায় এ ধরনের সাপ দেখেছিলেন এক পর্যটক।   

বিষধর ইয়েলো-বেলিড সাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।

তিনি বলেন, “হলুদ পেটযুক্ত সামুদ্রিক সাপ প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং ভারত মহাসাগরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ১৮-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বসবাস করে। এরা সারা বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত সাপ। স্বাভাবিকভাবে আমাদের সাগরেও এটির বিস্তৃতি রয়েছে।

“এই সাপ সাধারণত সৈকত থেকে দূরে সাগরের মুক্ত জলে সাঁতার কাটে। এরা সাগরের ওপরের স্তর অর্থাৎ পেলাজিক স্তরে বসবাস করে এবং সাগর তলে এদের দেখা পাওয়া যায় না।”

তিনি জানান, ইয়েলো-বেলিড হাইড্রোফিনি গোত্রের বিষধর সাপ। এদের মাথা লম্বা। শরীরের ওপরের দিক অর্ধেক কালো থেকে গাঢ় নীলাভ-বাদামী রঙের, আর নীচের দিক অর্ধেক হলুদাভ থেকে তীব্রভাবে চিত্রিত।

ইয়েলো-বেলিড সাপের লেজ প্যাডেল আকৃতির এবং গাঢ় দাগসহ হলুদ। দেহের নিচের এই হলুদ রংয়ের জন্যই এদের ইয়েলো-বেলিড ডাকা হয়।

এই সাপের দৈহিক আঁশ ছোট, মসৃণ এবং ষড়ভুজ আকারের; মাথার আঁশ বড় এবং নিয়মিত। চোখে নীলচে-কালো আইরিস আছে।

উপকূল এবং প্রবাল প্রাচীর থেকে দূরে খোলা সমুদ্র এদের আবাসস্থল। ফলে উপকূলের লোকজন সচরাচর এদের দেখতে পায় না বলে অনেকে এটিকে বিরল প্রজাতির মনে করেন।

সাগরের প্রাকৃতিক পরিবেশে ইয়েলো-বেলিড সাপের প্রধান খাদ্য মাছ। সাগরের ওপরের স্তরে এরা চুপচাপ শিকারের জন্য অপেক্ষা করে এবং নিচ থেকে কোনও মাছ কাছাকাছি এলে হঠাৎ আক্রমণ করে।

ইয়েলো-বেলিড সাপ দেহের পার্শ্বীয় ভারসাম্যের মাধ্যমে সাঁতার কাটে এবং সামনে-পেছনে উভয় দিকে যেতে পারে।

পানিতে ডুব দেওয়ার সময়, পালানো ও খাওয়ার সময় তারা সেকেন্ডে এক মিটার পর্যন্ত গতিতে ছুটতে পারে।

দ্রুত সাঁতার কাটার সময় কখনও কখনও এই সাপ মাথা জল থেকে বের করে দেয়। স্থলভাগে তারা সোজা থাকতে পারে না এবং ঠিকভাবে চলতে পারে না। সারা বছরই এই সাপ বাচ্চা দিতে পারে। স্ত্রী ইয়েলো-বেলিড একসঙ্গে ২-৬টি বাচ্চার জন্ম দেয়। এক একটি বাচ্চার দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫০ মিলিমিটার।

অল্পবয়সীরা যথেষ্ট চর্বিযুক্ত দেহ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং জন্মের প্রথম দিন থেকেই শিকার করতে পারে।

কেবল অসুস্থ বা আহত হয়ে উপকূলে ভেসে এলেই এই সামুদ্রিক সাপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে জানান সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।

তবে এপ্রিলে হাতিয়ায় দেখতে পাওয়া ইয়েলো-বেলিড সাপটি জোয়ারে উপকূলের কাছে চলে এসেছিল বলে জানিয়েছিলেন নোয়াখালীর বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা ইব্রাহীম খলিল।

সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার জানান, উপকূলে ভেসে আসা এ ধরনের সাপ সতর্কতার সঙ্গে নাড়াচাড়া না করলে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হতে পারে এবং কামড়ের সম্ভাবনা থাকে। এদের বিষদাঁত বা ফ্যাংগুলি বেশ ছোট (১ দশমিক ৫ মিলিমিটার) এবং খুব সামান্য পরিমাণে বিষ ঢালতে পারে।

সামুদ্রিক সাপের মধ্যে হলুদ পেটের সামুদ্রিক সাপ সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর। অত্যন্ত বিষধর এই সাপে শক্তিশালী নিউরোটক্সিন এবং মায়োটক্সিন থাকে।

বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে পেশী ব্যথা ও শক্ত হয়ে যাওয়া, চোখের পাতা ঝুলে যাওয়া, তন্দ্রা, বমি হওয়া ইত্যাদি। এ সাপের একটি গুরুতর কামড় সম্পূর্ণ পক্ষাঘাত বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

হলুদ পেটের সামুদ্রিক সাপে কামড়ানোর সন্দেহ হলে এমনকি কামড়টি তুচ্ছ মনে হলেও যে কারোরই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই সমুদ্রবিজ্ঞানী।

তিনি জানান, সামুদ্রিক এই সাপের কামড় প্রাথমিকভাবে ব্যথাহীন এবং কামড়ের স্থানে ফোলাভাব বা বিবর্ণতার কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। এই সাপের কামড়ে প্রাণহানির ঘটনা খুবই বিরল।

কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে এক সপ্তাহে তিনবার ইয়েলো-বেলিড সাপ দেখা যাওয়ায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ‍নিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।     

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, যেহেতু বর্ষা মৌসুমে ইয়েলো-বেলিড সাপের দেখা মিলছে, তাই এ বিষয়ে মাইকিং করে পর্যটকদের সতর্ক করা হয়েছে।

এছাড়া হোটেল ও সৈকতের প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত