ভোটে জিতেছেন স্যাম কারলিং; বসতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে। তার বয়স মাত্র ২২ বছর। এবারই প্রথম নির্বাচনে প্রার্থী হন তিনি, প্রথম বারেই করেছেন বাজিমাত।
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের স্নাতকোত্তরের ছাত্র কারলিং লেবার পার্টির প্রার্থী হন ইংল্যান্ডের নর্থ ওয়েস্ট ক্যামব্রিজশায়ার আসনে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে হারিয়ে দেন কনজারভেটিভ পার্টির ঝানু রাজনীতিক ও এমপি শৈলেশ ভারাকে। তাদের ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র ৩৯।
যুক্তরাজ্যে ১৮ বছর বয়সেই পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যায়। তবে নতুন পার্লামেন্টে কারলিংয়ের চেয়ে কম বয়সী আর কেউ নেই।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পায় লেবার পার্টি। যুক্তরাজ্যের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৪১১টিতেই জয়ী হয় তারা। অন্যদিকে ১২১টি আসনে জিতে ক্ষমতাসীন দল থেকে বিরোধী দলে পরিণত হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি।
‘হাউজের শিশু’
হাউজ অব কমন্সে বর্তমানে লেবার পার্টির ৪১১ জন সদস্যের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ কারলিংয়ের উপাধি এখন ‘হাউজের শিশু’। নিম্ন কক্ষে সর্বকনিষ্ঠ সদস্যকে অনানুষ্ঠানিকভাবে এই উপাধি দেওয়ার চল দীর্ঘদিনের।
এর আগে নিম্নকক্ষে ‘হাউজের শিশু’ ছিলেন লেবার পার্টির আরেক সদস্য অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট কিয়ার ম্যাথার। ২০২৩ সালে সেলবি অ্যান্ড এইন্সটি আসনে উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন তিনি।
এবারের নির্বাচনে জয়ী হওয়াকে ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’ হিসেবে অভিহিত করে কারলিং বলেন, “আশা করি, আরও অনেক তরুণ সাংবিধানিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং পার্লামেন্ট ও স্থানীয় কাউন্সিলে প্রতিনিধিত্ব করবেন। এটি তরুণদের রাজনীতির প্রতি ঔদাসীন্য দূর করতে সহায়তা করবে।”
ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় শহর কেমব্রিজে এর আগে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন কারলিং। এবারের নির্বাচনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “অনেক ভোটার আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখে অবাক হয়েছিলেন। তবে আমার আসনের লোকজন আমার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবেই নেন। তারা আমাকে বলেন, ‘আমাদের আরও তরুণ প্রতিনিধি দরকার’।”
সর্বকনিষ্ঠ এমপি কারলিং চান না, তার বয়স মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হোক।
তিনি বলেন, “তরুণদের বয়স নিয়ে মানুষ অদ্ভূত দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে। সেখান থেকে তাদের আমি বের করতে চাই। আমরা মানে তরুণরা আর ১০ জনের মতোই-এমনটাই আমি মনে করি।”
হঠাৎই রাজনীতিতে
রাজনীতির প্রতি কারলিংয়ের আগ্রহ খুব বেশিদিন আগে সৃষ্টি হয়নি। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধঃপতনের মধ্যে যোগসূত্র দেখতে পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্বে এক মফস্বল শহরে ২০০২ সালে জন্ম হয় কারলিংয়ের। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। শহরটি তার দৃষ্টিতে ‘অনেক বেশি বঞ্চিত’।
কারলিং বলেন, “আমার চারপাশের অনেক কিছু দিনকে দিন খারাপ হতে দেখি। মহাসড়কের পাশে দোকানগুলো এক এক করে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। এসব দোকান একটা সময় অনেক প্রাণবন্ত ছিল। এসব ঘটনা আমাকে উদ্বিগ্ন করে।”
তিনি মনে করেন, তার নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত ইংল্যান্ডের পিটারবরো শহরে বিদ্যমান অনেক ইস্যু নিয়ে সদ্য ক্ষমতায় বসা লেবার পার্টির কাজ করার আছে।
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির এই ছাত্র চান, তার দল লেবার পার্টি যেন তার এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে মনোযোগ দেয়।
বিশেষ করে এলাকায় দন্ত চিকিৎসকের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (এনএইচএস) কর্মীদের ওপর বাড়তি কাজের চাপ লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপ যাতে নেওয়া হয়, সেদিকে লেবার পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কারলিং।
তথ্যসূত্র : বিবিসি