ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান প্রথমবারের মতো শনিবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় পা রাখেন। অল্প সময়ে যা কিছু দেখার দেখেছেন। বসুন্ধরা কিংস ও বাংলাদেশ পুলিশের ম্যাচের শেষাংশ উপভোগ করেছেন। এরপর পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়ার আগে দেখেছেন মাঠ ভর্তি দর্শক।
এটা নিশ্চয় তার ভাল লাগার ছবির একটি। তবে পিছিয়ে যাওয়া ফুটবল নিয়ে তার কিছু আত্মপলব্ধি আছে। খেলাটিকে পুরনো জৌলুসের জায়গায় ফেরাতে নতুন করে চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন দেখছেন মন্ত্রী।
চ্যাম্পিয়নদের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়ার পর ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, “ফুটবল ক্রিকেট সম্পূর্ণ দুই খেলা। দুটোকে এক কাতারে নেওয়ার চিন্তা করা ঠিক হবে না। একটা জিনিস বলতে পারি বাংলাদেশে এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। এই ব্যাপারে আমার কোনও সন্দেহ নেই।”
তবে তার সংশয় অন্য জায়গায়। মন্ত্রী নিজে হয়তো কিছু সমস্যা দেখেছেন যা তিনি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, “ফুটবলে সমস্যাটা কোথায়? যে সমস্যা আমি মনে করছি তা সবটা আপনাদের বলব না। আমার কাছে মনে হয়েছে জনপ্রিয়তার পেছনে যে কারণগুলো ছিল ফুটবল ওই কারণগুলোর অনেক কিছুই এখন অনুপস্থিত। অনুপস্থিত থাকলে তো জনপ্রিয়তা আস্তে আস্তে কমবেই। ক্রিকেট বা অন্য খেলাগুলো ওরা ,তো এগিয়ে যাচ্ছে। ফুটবলকে আবার নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। সেটা করতে হবে ফুটবল ফেডারেশনকে।”
মন্ত্রী গতকাল বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে গেলেও পুরোটা ঘুরে দেখার সময় পাননি। তবে যেটুকু দেখেছেন সেটাও এদেশে নতুন। তাই নাজমুল হাসান বলেছেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনও আমাদের দেশের ক্লাবগুলো নিজেদের স্টেডিয়াম তৈরি বা খেলার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে এগিয়ে আসেনি। বসুন্ধরা যেমন কমপ্লেক্স করেছে, তাদের যে এতগুলো মাঠ আছে সেটা দেখে নিশ্চিতভাবে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে।”
এরপর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট যোগ করে তিনি বলেছেন, “ যে কোনও দেশের খেলাধুলার উন্নয়নের জন্য সরকারি যে স্টেডিয়ামগুলো আছে এগুলো দিয়ে সব কিছু হয় না। বেসরকারি পর্যায়ে ক্লাবগুলোকেও নিজস্ব সুযোগ সুবিধা তৈরি করতে হবে। যেসব দেশ উন্নতি করেছে সেটা ক্রিকেট ফুটবল যাই বলুন সব ক্ষেত্রেই ক্লাবগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ছাড়া সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না।“
দেশের খেলাধুলায় বড় দুই নাম আবাহনী ও মোহামেডান। কিন্তু এত ঐতিহ্যবাহী দুটো দলের নেই কোনও নিজস্ব ভেন্যু।
আমাদের দেশের ঐতিহাসিক মাঠ হলো বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। সেখানে একটা ভাল কমপ্লেক্স হতে পারতো। সেটা হয়নি। এটা নিয়ে মন্ত্রী কোনো রাখঢাক না রেখেই বলেন, “বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গন্ডিতে ঢুকলেই এটার পরিবেশ খেলাধুলার মনে হয় না। কিন্তু এটাকে (ক্রীড়াবান্ধব) করতে গেলে যা করা উচিত সেটা সম্ভব কিনা আমি জানি না। অবশ্যই কিছু পরিবর্তন তো করা যায়।”
ইতিমধ্যে ৪০ টি ফেডারেশনের সঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রী আলোচনা করছেন। এই মাসের মধ্যে সবার সঙ্গে তার আলোচনা শেষ হবে। এরপর মন্ত্রণালয় নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা করবে। “কোন ফেডারেশনকে কি ধরনের সহায়তা করা যায় এবং কতটুকু করার সামর্থ্য আমাদের আছে সেটা প্রথমে দেখব তারপর সেই অনুযায়ী একটা বাজেট তৈরি করে জমা দিব। বেশ কিছু ফেডারেশনের ভালো করার সম্ভাবনা আছে। ভালো করা মানেই যে বিশ্বকাপ খেলতে হবে, অলিম্পিকে পদক জিততে হবে তা না। এখন যে অবস্থা আছে এর চেয়ে ভালো করতে হবে। অনেক ফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে তাদের চিন্তা ভাবনায়ও পরিবর্তন করা দরকার। ওরা যেভাবে চালাচ্ছে তাতে বেশি দূর এগুনো যাবে না”- বলেছেন ক্রীড়ামন্ত্রী।
তিনি আসলে প্রত্যেক ফেডারেশনের পরিকল্পনা চান কাগজে-কলমে, সঙ্গে জানতে চান তারা কতদূর যেতে চায়। সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তার বিরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছে, “বিভিন্ন ফেডারেশনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তোমাদের বার্ষিক বাজেট কত? বলতে পারে না। আজ একটা টুর্নামেন্ট করতে হবে দেখে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিচ্ছে, সহযোগিতা নিচ্ছে। এভাবে তো হবে না। আমাদের একটা সামগ্রিক চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন দরকার। এটা সম্ভব কিনা জানিনা। তবে কিছু তো বদল হবে আশা করছি।”