Beta
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

যুব বিশ্বকাপই বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় ফাঁদ  

বাংলাদেশের স্মরণীয় অর্জন যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের প্রায় সবাই খেলেছেন জাতীয় দলে। ছবি : ক্রিকইনফো
বাংলাদেশের স্মরণীয় অর্জন যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের প্রায় সবাই খেলেছেন জাতীয় দলে। ছবি : ক্রিকইনফো
[publishpress_authors_box]

২০১২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপটা মাতিয়েছিলেন এনামুল হক বিজয়। বাংলাদেশের এই ব্যাটার ২টি সেঞ্চুরিসহ করেছিলেন সর্বোচ্চ ৩৬৫ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮৭ রান পাকিস্তানের বাবর আজমের।

সেই বিশ্বকাপ শেষের তিন মাস না যেতেই জাতীয় দলে অভিষেক হয় এনামুলের। বাবর আজমের পাকিস্তানের জার্সি পড়তে লেগে যায় আরও তিন বছর। এই তিন বছরে ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও পরিণত হয়েছেন বাবর।

এরপর বিশ্ব ক্রিকেট দেখেছে পরিণত বাবর আজমের ব্যাটিং আর অপরিণত এনামুলের পরিণতি-যা হওয়ার তাই হয়েছে। ওই পাকিস্তানীকে এখন মানা হয় অন্যতম সেরা ব্যাটারদের একজন। আর এনামুল হকের ক্যারিয়ার থমকে যেতে বসেছে ৫ টেস্ট ও ৪৯ ওয়ানডে খেলে!

যুব দল আর সিনিয়র জাতীয় দলের পারফর্ম্যান্স যে এক নয়, এই দুজনের ক্যারিয়ারই তার আদর্শ উদাহরণ। যুব বিশ্বকাপ পুকুর হলে, মূল বিশ্বকাপ সমুদ্র। বাংলাদেশের নির্বাচকদের কাছে দুইয়ের কোনো তফাৎ নেই। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপটাই ভিত্তি ধরে দল নির্বাচন করেন তারা।

২০২৪ সালের বিশ্বকাপের আগে এজন্যই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা ৪৭.৮৫ শতাংশ সুযোগ পেয়েছেন সিনিয়র জাতীয় দলে। গত বিশ্বকাপের কেউ নতুন করে জাতীয় দলে না আসায় হারটা কমেছে ৪১ শতাংশে। দুটোই অন্য দলগুলোর তুলনায় সর্বোচ্চ!

যুব দল থেকে জাতীয় দলের আসার শতকরা হারটা অন্য দলগুলোর এরকম- আফগানিস্তান ৩৮, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩৬, জিম্বাবুয়ের ৩৪, পাকিস্তানের ৩৩, শ্রীলঙ্কার ৩৩, নিউজিল্যান্ডের ৩২, আয়ারল্যান্ডের ৩১, ইংল্যান্ডের ২৮, ভারতের ২৭, অস্ট্রেলিয়ার ২০ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ১৮ শতাংশ। পরিসংখ্যানই বলছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করা দলগুলো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে খেলোয়াড় নেয়নি খুব বেশি।

নিজেদের ঘরোয়া ক্রিকেটের উপরই বেশি আস্থা তাদের। সেখানে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে চট্টগ্রাম টেস্ট শেষে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক।

২০০৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ভারতীয় দলে ছিলেন দুই কোহলি। একজন বিরাট কোহলি আরেকজন সুশীল কোহলি। এই দুজনের সঙ্গে খেলেছেন তন্ময় মনোজ শ্রীবাস্তব। পুরো বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন তন্ময় মনোজ শ্রীবাস্তব। বিরাট কোহলির রান ছিল ২৩৫ ও সুশীল কোহলির ২১৮। অথচ ভারতীয় জাতীয় দলে সুযোগই হয়নি সর্বোচ্চ রান করা শ্রীবাস্তবের! হারিয়ে গেছেন সুশীল কোহলিও।

ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন শুধু বিরাট কোহলি। এজন্যই যুব বিশ্বকাপ থেকে জাতীয় দলে আসা ভারতীয় ক্রিকেটারের হার কেবল ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ৪ জনে মাত্র ১ জনেরই কপাল খুলেছে মূল দলের। এবারের বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশে সংখ্যাটা ছিল প্রায় অর্ধেক!

২০২২ পর্যন্ত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন বাংলাদেশের ১৬৩ জন। তাদের ৭৮ জন সুযোগ পেয়েছেন জাতীয় দলে। ভারতের হয়ে এই সময়ে যুব বিশ্বকাপ খেলা ১৬২ জনের শুধু ৪১ জন ডাক পান জাতীয় দলে।

তাও বিশ্বকাপ শেষেই অমিত প্রতিভার কোহলির মত ডাক পেয়েছেন হাতে গোনা কজন। বেশির ভাগই বিশ্বকাপ শেষে ৪-৫ বছর ঘরোয়া লিগে পরিণত হওয়ার পর। বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটছে না বলে এখনও শক্তিশালী টেস্ট দল হয়ে উঠতে পারেনি। ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোনও আসরে পায় না তিনটার বেশি জয়। টি-টোয়েন্টিতেও নেই বিগ হিটার।

এর অন্যতম কারণ যুব বিশ্বকাপ শেষ হতে না হতেই ১৯-২০ বছর বয়সে ক্রিকেটারদের জাতীয় দলে অভিষেক হয়ে যাওয়া। বর্তমান দলের দুই একজন বাদ দিয়ে প্রায় সবারই অভিষেক হয়েছে পরিণত হওয়ার আগে। বিকশিত হওয়ার আগে ফুরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন তারা।

২০২০ অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সফল্যের একটা। ফাইনালের একাদশে থাকা সেই দলের অভিষেক দাস ও আকবর আলী ছাড়া জাতীয় দলে খেলেছেন বাকি ৯ জন। অথচ ভারতীয় একাদশের যশস্বী জয়সওয়াল, তিলক ভার্মা, ধ্রুব জুরেল, রবি বিষ্ণু ছাড়া জাতীয় দলে ডাক পাননি কেউ। বিশ্বকাপ শেষে আইপিএল, রঞ্জি ট্রফি, ইরানি ট্রফি, দুলীপ ট্রফি, সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফিতে নিজেদের প্রমাণ করেই তারা এসেছেন জাতীয় দলে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কিছুদিন আগে শেষ হওয়া সিরিজটার কথাই ধরা যাক। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে দলে খেলা ১৭ ক্রিকেটারের ১৫ জনই এসেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে। আর টেস্ট দলের কেবল তিন জনের অভিজ্ঞতা ছিল না যুব বিশ্বকাপ খেলার।

সবমিলিয়ে সাদা ও লাল বলের তিন সিরিজের ক্রিকেটারদের মধ্যে যুব বিশ্বকাপ খেলেননি শুধু তাইজুল ইসলাম, নাহিদ রানা, খালেদ আহমেদ ও রিশাদ হোসেন। খালেদ আহমেদ টেপ টেনিস খেলতেন সিলেটে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে পেস বোলিং হান্টে তিনি নজরে পড়েন বিসিবির কর্তাদের।

তাইজুল ইসলাম হয়তো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেননি তবে তিনিও ছিলেন ২০০৯ সালের যুব দলের খেলোয়াড়। নীলফামারির রিশাদ হোসেন উঠে এসেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে উত্তরাঞ্চলের হয়ে খেলে। এরপর বিপিএল ও প্রিমিয়ার লিগে আলো ছড়িয়ে নজরে পড়েন বিসিবির।

চাপাই নবাবগঞ্জের নাহিদ রানা উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন রাজশাহীর একটি ক্রিকেট একাডেমিতে। জাতীয় লিগে রাজশাহীর হয়ে ২০২১ সালে অভিষেকের পর গতি দিয়ে নজরে আসেন নির্বাচকদের।

প্রশ্ন হচ্ছে, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে এত বেশি খেলোয়াড় জাতীয় দলে ডাক দেওয়ার পেছনের কারণটা কি? বিশেষ করে তাদের বেশির ভাগই যখন মেলে ধরতে পারছেন না নিজেদের।

পরিসংখ্যান বলছে, যুব বিশ্বকাপই হয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় ফাঁদ। এই টুর্নামেন্টে একটু খেললেই হয়, তাদের আর পরিণত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় না। নামিয়ে দেওয়া হয় বড়দের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। আর সেখানেই অপমৃত্যু হয় প্রতিভার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত