Beta
বুধবার, ৮ মে, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

গণমাধ্যম এখন

ইউটিউব দেখে, টিভি দেখে না

নূর সাফা জুলহাজ। প্রতিকৃতি অঙ্কন: সব্যসাচী মজুমদার

প্রেম আর প্রযুক্তি দুটোই নিঃশ্বাসের মতো, কখন বদলে কিংবা বিগড়ে যায়, ভরসা নেই!

ধরে নিন আপনি রেডিও শুনছেন, গেল শতকের ষাট বা সত্তর দশক, অথবা দেখছেন টেলিভিশন আশি বা নব্বইয়ের দশক, তাতে চলছে গান—  

‘বাতাসের কথা সে তো কথা নয়/ রূপকথা ঝরে তার বাঁশিতে/ আমাদেরও মুখে কোনো কথা নেই/ দু’টি আঁখি ভরে রাখি হাসিতে’— ভাবুন, গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের এমন চিত্রকল্প, বাতাসের বাঁশি, সে বাঁশিতে আবার রূপকথা! অথবা ‘বনের মর্মরে বাতাস চুপিচুপি/ কি বাঁশি ফেলে রাখে হায়’ বিপুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন আলাপ, বা সেই রোমান্টিকতা মাত্র দুই দশক আগে, যেন ধুপ করে শেষ হয়ে গেছে, এই শতকের শুরুতে। তার লেশ আছে হয়ত প্রজন্মের কাছে কিন্তু বনের মতো সমাজের মর্মরে সে বাঁশি আর নেই। নেই সেই রোমান্টিকতা, নেই সেই আধুনিকতা।

আপনি কিংবা যারা ছিলেন টেলিভিশনের সন্তান তারা প্রায় এখন জাদুঘরে যাচ্ছেন। সবাই এখন নিউমিডিয়ার সন্তান, ইউটিউব, ফেইসবুক বা সামাজিকমাধ্যমের। টেলিভিশন বা দূরদর্শনে আপনার বা আমার যে বিস্ময় ছিল, ‘দুটি আঁখি ভরে’ উঠত হাসিতে সেই বিস্ময় বোকা বাক্সকে ঘিরে আর নেই। এখন সময় পোস্ট মর্ডান, পোস্ট রোমান্টিক, পোস্ট ট্রুথ- এর!

প্রযুক্তি এখন অনেকটাই প্রেমের মতো অথবা প্রেমও প্রযুক্তির মতো, কখন বদলে যায় ভরসা নেই। কিংবা দুটোই আপনার আমার নিঃশ্বাসের মতো, কখন বিগড়ে যায়, নেই সে ভরসাও। প্রেম বা প্রযুক্তির ক্রমাগত নতুন হয়ে ওঠার এটাও কি একটা কারণ? এটা হয়ত সমাজবিজ্ঞানের গবেষণার বিষয় হতে পারে। তবে গণমাধ্যমকে যদি আমরা বলি সমাজ ইতিহাসের প্রথম খসড়া বা ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ বা ‘প্রাইমারি সোর্স’, সেই সোর্স বলছে, কিছুই থাকছে না আগের মতো। সেই রাম, সেই অযোদ্ধা কিংবা সে মন-মান, সেই অভিমান, কিছুই না, আপনিও নন!

আগে ছিল ‘স্ট্যান্ডএলোন’ এর দুনিয়া, টেলিভিশন যেমন। এখন ইন্টারনেটের দুনিয়া, ইন্টারনেট অফ থিংস’র দুনিয়া, নিউ মিডিয়ার দুনিয়া। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা 4IR এর দুনিয়া। এই দুনিয়ায় টেলিভিশন এখন ওল্ড মিডিয়া, আপনি দেখছেন না, মানুষ দেখছে না। টেলিভিশন না দেখলেও অর্থাৎ সম্প্রচার প্রযুক্তির কাঠামোয় নির্দিষ্ট সময়ে বসে টিভিতে খবর বা কনটেন্ট না দেখলেও আপনি তো খবর-নাটক-সিনেমা-সিরিজ-গান বা তথ্য-বিনোদন কনটেন্ট দেখছেন। তাহলে কিভাবে দেখছেন?

এখানেই, আপনি এখন টিভি খুলে টিভিতে ইউটিউব দেখছেন অথবা ইউটিউবে টিভি দেখছেন। কখন আপনার স্বভাব বদলেছে, বদলেছে বিকালের চায়ের সাথে টিভি দেখার রোমান্টিকতা, মনে করতে পারেন? অথচ মাত্র এক যুগের গল্প।

উত্তরাধুনিক কালে আপনার-আমার ‌‌‌‌‘মাই টাইম, মাই স্পেস, মাই অ্যাটিটিউড’কে ধারণ করেই দাঁড়িয়েছে ইউটিউব বা সামাজিক মাধ্যম। ফলে আপনার দেখা বদলায়নি। বরং বদলে গেছে কোথায়, কোন সময়ে দেখবেন।

৮ বছর আগে একদিন কিংবা APP হচ্ছে নতুন টেলিভিশন!

২০১৫ সাল, ৮ বছর আগে একদিন, অ্যাপল-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক বলেছিলেন ‘দ্যা ফিউচার অফ টিভি ইজ অ্যাপ’!

এই যে উত্তরাধুনিক কালে আপনার-আমার ‌‌‌‌‘মাই টাইম, মাই স্পেস, মাই অ্যাটিটিউড’কে ধারণ করেই দাঁড়িয়েছে ইউটিউব বা সামাজিক মাধ্যম। ফলে আপনার দেখা বদলায়নি। বরং বদলে গেছে কোথায়, কোন সময়ে দেখবেন। কিন্তু এই যে বদলে যাওয়া টেকনোলজি, তার সাথে ‘পোস্ট ডেমোক্রেটিক’ সমাজ-রাজনীতি  হয়ে উঠছে ক্রমাগত কর্তৃত্ববাদী। আপাত সকল প্রতিষ্ঠান আছে বটে, কিন্তু জটিল চতুরতার সাথে একটা গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করছে ‘ক্ষমতা’। এবং যোগসাজশের ভিত্তিতে চলছে শাসন-দুর্নীতি পৃথিবীজুড়ে। ঠিক একই সময়ে আবার বাজার অর্থনীতি প্রযুক্তির গণতন্ত্রায়ন ঘটিয়ে চলছে। হাতে হাতে স্মার্ট ডিভাইস-ইন্টারনেট। ফলে ‘নিউজ’ বা ‘জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট’ টেলিভিশনের মতো প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন বা শিল্পের সাথে ইন্ডিভিজ্যুয়াল ক্রিয়েটারকে ঘিরেও চালু হয়েছে এক নয়া অর্থনীতি।

যদিও বলা হয় যুক্তরাজ্যে টেলিভিশন দেখার অভ্যাস এখনো অনেকটা বেশি। তবু পশ্চিমসহ পূবের প্রায় সবগুলো দেশের আলোচিত টিভি সংবাদ বা অনুষ্ঠানের ‘অডিয়েন্স বা ভিউয়ার’ ইউটিউবে বহুগুণ বেশি। ইউটিউব অডিয়েন্সকে ঘিরে এখন বদলে যাচ্ছে সংবাদসহ বিনোদন শিল্পের গল্প বলা, নির্মাণশৈলীর ভঙ্গি। টেলিভিশনগুলো স্বয়ং খুলে বসেছে সোশাল মিডিয়া চ্যানেল, এমনকি কোনও কোনও টেলিভিশন খুলেছে ওটিটি।

চলুন দেখি ডেটা কি বলছে? আপনাকে যদি এক এলেন ডিজেনেরেসের শো’র কথাই বলি, দেখা যাচ্ছে আমেরিকা-কানাডা-ইউকে তিন দেশ মিলে এই অনুষ্ঠানের টিভি দর্শক দিনে যদি ৩৭ লাখ হয়, তাহলে ইউটিউবে অনুষ্ঠানটির একেকটি ভিডিও’র দর্শক ১ কোটি ৪০ লাখের মতো, প্রায় ৪ গুণ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের অপরাহ্ শো, ভারতের কপিল শর্মা শো কিংবা বাংলাদেশের জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান, নাটক, মিউজিক ভিডিও ইউটিউবে দেখছে বেশি। নিউজ বা টকশো, শিক্ষামূলক কনটেন্টের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। এখানে আবার বাংলাদেশের টেলিভিশন দশা অন্য দেশের চেয়ে আলাদা। একে তো নিউমিডিয়ার বিস্তার, অন্যদিকে টিভি লাইসেন্স বা মালিকানা চরিত্র, সরকারের নীতি দুর্বলতা, মন্ত্রী-আমলা-ক্যাবল ব্যবসায়ীদের যোগসাজশের কারণেও আমাদের দেশের টেলিভিশনের মরণদশা। কারণ এটা ‘ফ্রি টু এয়ার’। ক্যাবল অপারেটররা দর্শক থেকে নেওয়া একটি টাকাও উৎপাদক বা টেলিভিশকে দেয় না। টেলিভিশনগুলোর আয়ের একমাত্র সোর্স বিজ্ঞাপন। এখন সে বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে নিউমিডিয়া, ইউটিউব বা সামাজিক মাধ্যমে। সে যেতেই পারে, টিম কুকদের  ফিউচার টিভি তো অ্যাপ। কিন্তু এই অ্যাপকে ঘিরে আমাদের দেশের গণমাধ্যমের বিজনেস মডেল কি? নিউজ বা কনটেন্ট প্রডিউসার হিসেবে ইউটিউব-ফেইসবুক-গুগল-এর সাথে রেভিনিউ শেয়ারের মাত্রা কি? বাংলা সংস্কৃতি বা কন্টেন্টের বাজার ভবিষ্যৎ কি?

প্রবৃত্তি নির্ভর প্রযুক্তি, কনটেন্ট ব্যবসায় আদিমতা যেখানে কাঁচামাল বা খাসামাল!

সম্পাদিত গণমাধ্যমের যেসব ‘কনটেন্ট’ ইউটিউবে যাচ্ছে, সেগুলোর চেয়েও ভিউয়ারের বেশি চাহিদা অসম্পাদিত কনটেন্টে। ফলে ইউটিউবে-ফেইসবুকে তৈরি হয়েছে নানা নতুন বিপদ। একদিকের বিপদ হলো গুজব, মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন, ম্যালইনফরমেশন। আবার আপনি বা আমি অর্থাৎ মানুষের যে ‘অ্যানিমেল’ দিক, যেটাকে বলি প্রবৃত্তি, মন্দ বা স্থূল দিক, সেটাকে স্যাটিসফাই করার কনটেন্ট বানানো বেড়ে চলছে। ফলে অ্যানিমিলিটিকে সুড়সুড়ি দেয়া কনটেন্ট জায়গা করে নিচ্ছে বেশি ।

‘মানুষ এটা খায়’ বলে আপনি-আমি-আমরা ক্রমাগত স্থূল কনটেন্ট নির্মাণ করে চলেছি। এতে করে স্থূলতার বাজারই বড় হচ্ছে, দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।

এটা সংবাদ কনটেন্টেও ঘটে চলছে। যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের সময়ও দেখা যাচ্ছে। নানা পক্ষের লোক কনটেন্ট নির্মাণে ধর্মীয় সুড়সুড়িকে ব্যবহার করছে, ব্যবহার করছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ, সহিংস উস্কানি। ন্যায্যতার প্রশ্ন যেখানে নেই বললেই চলে। যে ‘অ্যানিমিলিটি’, ‘স্থুলতা’  জয় করার জন্য মানুষের নানা লড়াই, সভ্যতার এত ব্যাকরণ, সেটাই আবার অধীন হয়ে পড়ছে ‘প্রবৃত্তি’র । প্রযুক্তিও এখন সে মুখো। ফলে সম্পাদিত মিডিয়ার প্রয়োজন আগের যেকোনও সময়ের তুলনায় জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হচ্ছে কোটি কোটি ইন্ডিভিজ্যুয়াল ক্রিয়েটারের নিউমিডিয়া কনটেন্ট সম্পাদিত হবে কিভাবে? এটি তো বৈশ্বিক ফেনোমেনা। এখানেই প্রশ্ন প্রগতিশীল নীতিমালার। এই নীতিমালা মানে নিয়ন্ত্রণমালা নয়, যেভাবে বোঝেন আমাদের সরকার বাহাদুর।

বিপদ তো শুধু  এক-দুইদিক থেকে আসছে না, আরও আছে। আপনি আছেন এক ‘পোস্ট ট্রুথ’ সমাজ-রাজনীতির বাস্তবতায়। অবজেক্টিভ ফ্যাক্টস যেখানে মানুষের কাছে আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। যতটা গুরুত্বপূর্ণ তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, আবেগ। আবার মানুষ তথ্যের প্রাচুর্যে আছে, বলা যায় মহামারিতে পড়ছে। মনোযোগের দারিদ্র্য তৈরি হচ্ছে। ফলে কোথাও কোথাও চিন্তার দুর্ভিক্ষ দেখা দিচ্ছে। এখানে তথ্যের প্রাচুর্য সমস্যা নয়, সমস্যা সেই প্রাচুর্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রশ্নে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ হচ্ছে, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে রাত গভীরে হেফাজতের আড়াই হাজার লোককে মেরে ফেলা একটা ‘পোস্ট ট্রুথ’ বাস্তবতা। কিংবা ২০১৮-এর  বিতর্কিত ‘রাতের ভোট’র আলোচনাও একটা ‘পোস্ট ট্রুথ’ বাস্তবতা। কারণ এখানে মানুষ ফ্যাক্টের চেয়ে ব্যক্তিগত, দলীয় ধারণা বা বিশ্বাস দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আরও বিপজ্জনক হলো এই দু’টি ঘটনার তদন্ত গণমাধ্যম বা কোনও সংস্থা কিংবা রাষ্ট্র করেনি, হয়নি বিচার বিভাগীয় তদন্ত। ফলে অবজেকটিভ চিন্তার পরিসরও বাড়েনি। বাড়ানোর রাজনীতিও কি দেখা যাচ্ছে?

বরং ভবিষ্যত মানুষ ক্রমশ APE থেকে APP হচ্ছে!

‘পোস্ট ট্রুথ’ দুনিয়ায় আপনি নিজের ভাবনা-বিশ্বাসকে বড় করে দেখতে পারেন, কিন্তু পৃথিবী তেমন নয় যেমন আপনি ভাবেন, বরং পৃথিবী তেমন যেমন আপনি আছেন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কালে AI বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যাপক আলোচনায়। মানুষ তার নানামুখী সেবার জন্য AI বানাচ্ছে। আমি মানুষকে দেখি OI মানে Organic Intelligence হিসেবে। কিন্তু সেই OI নিজেই নয়া AI প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জে পড়ছে কিনা! অধীন হয়ে পড়ছে কিনা তার স্বাধীনতা, মানবিক সত্তা?

ইতিহাসবিদ নোয়হা হারারি তার আলোচিত ‘সেপিয়েন্স’- এ লিখছেন, শিল্প বিপ্লব কিভাবে বাজারের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব হাজির করেছে, কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের মধ্য দিয়ে শিল্পায়ন ঘটিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাজারে হাজির করেছে। ঠিক তেমনি গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি ইত্যাদি প্রাণীকেও শিল্পায়নের মাধ্যমে তাদের সাধারণ প্রাকৃতিক জীবনের বিলুপ্তি ঘটিয়ে, খামারে বন্দি করে, শুধু ইনপুট-আউটপুটের মতো একদিকে মুখে খাবার দিয়ে অন্যদিকে বাচ্চা-ডিম কিংবা দুধ বা মাংস দেয়ার যন্ত্রে পরিণত করেছে। শিল্প বিপ্লব ওইসব প্রাণীদের সাথে যা করেছে আমি মনে করি, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মানুষের সাথে অনেকটা তাই করছে। মানুষের যান্ত্রিকীকরণ তো বটেই, প্রযুক্তিকরণ করছে। আপনাকে-আমাকে ফেলছে নজরদারির পুঁজিবাদ কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজারে। কী হতে যাচ্ছে তবে মানুষের নিকট ভবিষ্যত?

আজকে টিভি দেখছেন না আপনি, দেখছেন ইউটিউব! একদিন ইউটিউব থাকবে না, কিন্তু মানুষ দৃশ্য ‘এক্সপেরিয়েন্স’ করবে। সেই স্ক্রিন এক্সপেরিয়েন্স Virtual AI নির্ভর হয়ে পড়বে। তখন আমি-আপনি হয়ত কোনও স্ট্রিমিংয়ে এমবেডেড হয়ে যাব কিংবা শরীরে লাগানো কোনও ‘চিপ’ মগজে দৃশ্যমালা হাজির করবে। বিবর্তন বিজ্ঞান একদিন আমাদের বলেছিল APE থেকে এসেছে মানুষ। আমার প্রশ্ন, নয়া এই বাস্তবতায় APE থেকে আসা মানুষ কি ক্রমশ APP হয়ে উঠবে? আমরা কি সেই রূপান্তরের ইউটিউব কিংবা AI স্তরে আছি? সামাজিক মাধ্যম স্তরে আছি? 

শুরুতে বলেছিলাম, গৌরীপ্রসন্নের গানের কথা— ‘বাতাসের কথা সে তো কথা নয়/ রূপকথা ঝরে তার বাঁশিতে’। এবার বলি, এই সময়ের জেমস ইয়াং এর ‘ইনফিনিটি’ গানের কথা— ‘Meet me at the bottom of the ocean/ Where the time is frozen/ Where all the universe is open/
Love isn’t random, we are chosen’। গানটা যেমন বলছে মুক্ত মহাবিশ্বে দুজনের ভালোবাসা ‘রেন্ডম’ ঘটেনি বরং পরস্পরকে বেছে নিয়েছিল দুজনে, তেমনই একটু অন্যভাবে দেখলে,  ইউনিভার্সের মতো সম্প্রসারমাণ ভার্চুয়াল বা AI প্রযুক্তির জগৎ ‘রেন্ডম’ ঘটছে না। আমরাই এই নিয়তি নির্ধারণ করছি। এই আপনি, এই আমি!

মনে পড়ছে জীবনানন্দ—

‘আলো যেন কমিতেছে, বিস্ময় যেতেছে নিভে আরো

আকাশ কেমন নীল? আকাশ তেমন নীল নয়

মেয়ে মানুষের চোখে নেই যেন তেমন বিস্ময়

মাছরাঙা শিশুদের পাখি আজ; শিশুরা কারো

রেশমি-চুলের শিশু নয় আজ; ভাবিতে কি পারো’।

লেখক: সম্পাদকীয় প্রধান, একাত্তর টেলিভিশন।

ইমেইল: njulhaj@gmail.com