চার দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। লন্ডনে তার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক হবে বলে খবর দিয়েছে বিএনপি।
নির্বাচনের সময় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের মতবিরোধ যখন তুঙ্গে; তখন এই বৈঠক রাজনীতির ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হবে বলে মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ড. ইউনূসের ফ্লাইট মঙ্গলবার লন্ডনে নামার পরপরই ঢাকায় মির্জা ফখরুল গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয় সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার তারেক রহমানের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক হচ্ছে।
ড. ইউনূসের লন্ডন সফরের তোড়জোড় শুরুর পরপরই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে আলোচনা চলছিল। তবে কোনও তরফেই কিছু বলা হচ্ছিল না।
অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে এখনও কিছু বলা না হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে ফখরুল জানালেন, ড. ইউনূসের আগ্রহেই এই বৈঠক হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি যে হোটেলে উঠেছেন, সেখানেই বৈঠক হবে।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতার ঘোষণা তখন দিয়েছিলেন তারেক।
এরপর নানা বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়তে থাকে। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় নিয়ে দুই পক্ষের মতবিরোধ এখন তুঙ্গে।
ড. ইউনূস বলে আসছিলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন। তখন বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জোর দাবি তোলে। শেষে ড. ইউনূস আগামী বছরের এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বললেও বিএনপি এখনও ডিসেম্বরের দাবি থেকে সরেনি।
২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময় দেশ ছেড়ে যাওয়া তারেক এখনও দেশে ফেরেননি। মামলাগুলা থেকে খালাস পেলেও তার ফেরার পরিবেশ এখনও হয়নি বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
তারেক রহমান সম্প্রতি এক সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের কারও কারও ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকার কথাও বলেছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক বাংলাদেশের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট হবে বলে সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেন ফখরুল।
চার দিনের সফরে সোমবার সন্ধ্যায় লন্ডনের উদ্দেশে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে রওনা হন ড. ইউনূস।
লন্ডন সময় মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ফ্লাইটটি হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছায় বলে বাসস জানিয়েছে। তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার আবিদা ইসলাম।
সরকারপ্রধান হিসাবে এই প্রথম যুক্তরাজ্য সফর করছেন নোবেলজয়ী ড. ইউনূস। সফরে তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করার পাশাপাশি রাজার দেওয়া একটি পুরস্কার নেবেন।
বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ড. ইউনূসকে রাজা তৃতীয় চার্লস ‘কিং চার্লস তৃতীয় হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’র জন্য মনোনীত করেছেন। জনগণ এবং পরিবেশের মধ্যে শান্তি, স্থায়িত্ব এবং সম্প্রীতি প্রচারে তার আজীবন কাজের সম্মানার্থে তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হবে।
১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত দ্য কিংস ফাউন্ডেশন তৎকালীন প্রিন্স অব ওয়েলসের প্রতিষ্ঠিত একটি যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা। প্রতি বছর টেকসই উন্নয়ন এবং মানবিক কারণে অনুকরণীয় সাফল্য অর্জনকারী ব্যক্তিদের এই মর্যাদাপূর্ণ পুরষ্কার প্রদান করে দ্য কিংস ফাউন্ডেশন।
১২ জুন লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে এক অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার নেবেন ড. ইউনূস।
এই সফর নিয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক এর আগে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, অন্যান্য মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের সঙ্গেও প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হবে।
সফরকালে ড. ইউনূস কমনওয়েলথ এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থার (আইএমও) মহাসচিবদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
১১ জুন রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, চ্যাথাম হাউসে একটি বিশেষ ভাষণ দেবেন তিনি।