Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রথম কাজ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা : ইউনূস

দেশে ফেরার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : হারুন অর রশীদ রুবেল
দেশে ফেরার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : হারুন অর রশীদ রুবেল
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

নতুন সরকারের দায়িত্ব নিতে দেশে ফিরেই ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ রক্ষা করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে শৃঙ্খলা ফেরানোর ওপর জোর দিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমেই তিনি সাংবাদিকেদর বলেছেন, “আমার প্রথম কথা হলো বিশৃঙ্খলা থেকে দেশকে রক্ষা করেন।”

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা গত ৫ অগাস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার হচ্ছে, তার প্রধান হিসাবে ইউনূসকে মনোনীত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

প্যারিসে থাকা ড. ইউনূসও সেই ডাকে সাড়া দিয়ে রাজি হন দায়িত্ব নিতে। এরপর তিনি বুধবার দেশে রওনা হন দেশের উদ্দেশে। বৃহস্পতিবার তিনি দেশে পৌঁছান।

সরকার পতনের পর গত তিন দিনে দেশে যে অরাজকতা চলছে, হামলা-ভাংচুর-লুটপাট, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর, আহমদিয়াদের ওপর যে আক্রমণ চলছে, সেই খবর পেয়েছেন বলে জানান ইউনূস।

তিনি বলেন, “এগুলো হলো ষড়যন্ত্রের অংশ। আমাদের যে যাত্রা, তারা এর শত্রু। আমাদের কাজ রক্ষা করা। প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই।

“আমাদের কাজ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা আমাদের প্রথম কাজ। এটা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা অগ্রসর হতে পারব না।”

দেশবাসীর উদ্দেশে ইউনূস বলেন, “আপনারা আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন, ভরসা রাখেন, নিশ্চিত করেন যে দেশের কোনও জায়গায় কারও ওপর হামলা হবে না।

“আমার কথা যদি না শোনেন, তাহলে আমাকে বিদায় দেন। আমার প্রথম কথা হলো, বিশৃঙ্খলা থেকে দেশকে রক্ষা করেন।”

যে আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন হলো, সেই আন্দোলনে নিহত রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ইউনূস।

“আবু সাঈদের ছবি আমাদের সবার মনে গেঁথে আছে, তা কেউ ভুলতে পারবে না। বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে! তারপর যুবক-যুবতী সবাই দাঁড়িয়ে গেছে। যে তরুণ সমাজ দেশকে রক্ষা করেছে, তাদের প্রতি সমস্ত প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা।”

ইউনূসকে স্বাগত জানাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।

দেশে ফেরার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। ছবি : হারুন অর রশীদ রুবেল

তাদের নেতৃত্বে এই অর্জনকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ অভিহিত করে নোবেলজয়ী ইউনূস বলেন, “তারা এদেশকে রক্ষা করেছে, পুনর্জন্ম দিয়েছে দেশকে।

“দ্বিতীয় বার স্বাধীনতা, এই স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে, এই স্বাধীনতা সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। এই বাংলাদেশ যেন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে পারে, সেটা আমরা রক্ষা করতে চাই।”

সরকারকে গণমুখী করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “সরকার বলে একটা আছে, কিন্তু মানুষ মনে করে, এটা দমনপীড়নের একটি যন্ত্র। এটা সরকার হতে পারে না।

“যে সরকার হবে, সেই সরকার মানুষের আস্থাভাজন হবে। সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।”

অর্জনের কৃতিত্ব তরুণদের দিয়ে দেশ গড়ার কাজও তাদের মাধ্যমে করার কথা বলেন নতুন সরকারের সম্ভাব্য প্রধান ইউনূস।

“তারা এটা অর্জন করে নিয়ে এসেছে, তাদেরকে দিয়ে এটা করিয়ে নেওয়া। তরুণ সমাজকে বোঝাব, এই দেশ আজ তোমাদের হাতে, তোমারা যেভাবে স্বাধীন করেছ, গড়তেও পারবে”

“পুরনোদের বাদ দাও, তাদের চিন্তা দিয়ে হবে না। তোমাদের মধ্যে যে শক্তি আছে, যে সৃজনশীলতা আছে, তাকে কাজে লাগাতে হবে,’ বলেন , ৮৪ বছর বয়সী ইউনূস।

বিমানবন্দরে নামার পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিলেও সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্ন নেননি ইউনূস। তিনি বলেছেন, পরে কথা হবে।

বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে অধ্যাপক ইউনূসকে অভ্যর্থনা জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ও নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান, পুলিশ প্রধান ময়নুল ইসলাম এবং র‌্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান।

গ্রামীণ চেকের শার্ট ও কটি পরা ইউনূস সবার সঙ্গে হাত মেলান। তাকে শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত ছিলেন আরও অনেকে, তাদের সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।

বিমানবন্দর থেকে তিনি তার বাড়িতে গেছেন। রাতে বঙ্গভবনে নতুন সরকারের প্রধান হিসাবে তার শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত