শেখ হাসিনার বিদায়ের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নিতে রাজি আছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শেখ হাসিনা পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে ইউনূসের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই দায়িত্ব নিতে ইউনূসের অমত নেই বলে মঙ্গলবার ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বিবিসি বাংলাকে।
ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোরশেদ ড. ইউনূসকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, “যে ছাত্ররা এত ত্যাগ স্বীকার করেছে, এই কঠিন সময়ে তারা যখন আমাকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছে, আমি কীভাবে তাদের প্রত্যাখ্যান করতে পারি?”
ড. ইউনূস এখন প্যারিসে রয়েছেন। তিনি শিগগিরই ঢাকায় ফিরবেন বলে জানিয়েছেন লামিয়া।
এর আগে এদিন ভোররাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তিনিও দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “তিনি ছাত্র-জনতার আহ্বানে বাংলাদেশকে রক্ষা করার স্বার্থে এই গুরু দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসে আন্দোলনে নামা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন-পীড়নের শিকার হওয়ার পর গত শনিবার সরকার পতনের এক দফা দাবি তোলে।
তার দুই দিনের মাথায় সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে বিদেশে চলে যান। এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে বলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানিয়েছেন।
সেই সরকারে ইউনূসকে প্রধান করার দাবি জানিয়ে নাহিদ বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সর্বজন গ্রহণযোগ্য, নোবেল পুরস্কারবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।”
ড. ইউনূস বারবার শেখ হাসিনার সরকারের রোষের শিকার হওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন। সম্প্রতি তাকে একটি মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়, সেই মামলাও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তার দাবি।
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ২০১১ সালে ইউনূসকে সরানোর পর থেকে তার সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধ চলছিল।
১৯৮৩ সালে সরকারের অংশীদারত্বে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে ছিলেন ইউনূস।
দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রেখে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য ২০০৬ সালে ব্যাংকটির সঙ্গে ইউনূসও যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি, যিনি মর্যাদার এই পুরস্কারে ভূষিত।
বয়সের কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে ইউনূসকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করে আওয়ামী লীগ সরকার। তার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েও হেরে যান তিনি। এরপর গ্রামীণ ব্যাংকের পাশাপাশি এর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বও হারাতে থাকেন এই নোবেলজয়ী।
সরকারের সঙ্গে ইউনূসের টানাপড়েনের মধ্যে শ্রম আইন লঙ্ঘন করে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করে।
সেই মামলায় এবছরের ২ জানুয়ারি দেওয়া রায়ে শ্রম আদালত ইউনূসসহ চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেয়, প্রত্যেককে জরিমানা করা হয় ২৫ হাজার টাকা। তবে আপিল করার শর্তে তারা কারাগারে যাওয়া থেকে নিষ্কৃতি পান। তবে তার বিরুদ্ধে আরও মামলাও হয়েছে।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায় নেমেছিলেন ড. ইউনূস। কিন্তু পরে পিছু হটেন।
তখন কারাবন্দি শেখ হাসিনা সেই ঘটনার জেরেই তার ওপর নাখোশ হন বলে ইউনূসের ধারণা। গত এক দশকে ইউনূসকে কটাক্ষ করে বিভিন্ন সময় শেখ হাসিনার নানা বক্তব্য ছিল আলোচিত।
ইউনূসও আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বলে আসছিলেন, তারা দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে।