Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

সংস্কারে ৬ কমিশন : নেতৃত্বে যারা

বাঁ থেকে- বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, শাহদীন মালিক, আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান।
বাঁ থেকে- বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, শাহদীন মালিক, আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান।
[publishpress_authors_box]

গণআন্দোলনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় আসা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে কমিশনগুলো কার কার নেতৃত্বে চলবে, তাদের নামও প্রকাশ করেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজন থেকে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করা হচ্ছে।

এই ছয়টি কমিশনের প্রধান হচ্ছেন- বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, ইফতেখারুজ্জামান, আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী ও শাহদীন মালিক।

কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশন প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেছেন, কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শ সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র, শ্রমিক, জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবে।

নির্বাচন কমিশন

নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ড. বদিউল আলম মজুমদারকে। নাগরিক সংগঠন সুজনের সম্পাদক হিসাবে নির্বাচন নিয়ে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’র বাংলাদেশ শাখার পরিচালক ও বৈশ্বিক সহ-সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার পরে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন গড়ে তোলেন।

১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদে প্রভাষক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সিয়াটল ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি ও সেন্ট্রাল ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন তিনি। এছাড়া ১৯৮০ সালে কিছুকাল তিনি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় পরামর্শক হিসাবেও তিনি কাজ করেন।

নতুন দায়িত্বপাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বদিউল আলম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি সম্মানিত বোধ করছি। আমি (বর্তমান সরকারকে) সহায়তা করতে প্রস্তুত।”

তবে তিনি বলেন, “আমার সাথে কোনও আলাপ আলোচনা হয়নি, সম্মতিও নেওয়া হয়নি। একবার দেখা হয়েছে, তবে দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে কোনও আলাপ হয়নি।”

বিচার বিভাগ

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান নেতৃত্ব দেবেন বিচার বিভাগ সংস্কারে।

২০১১ সালে তাকে ডিঙিয়ে বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পর পদত্যাগ করেছিলেন বিচারপতি মোমিনুর রহমান।

বিএনপির প্রয়াত নেতা আ স ম হান্নান শাহর ভাই মোমিনুর রহমান পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। পরে আইন পড়ে ১৯৭২ সালে আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি।

১৯৭৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগে, পরে১৯৮০ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। এর পরপরই হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক হিসাবে যোগ দেন তিনি। ২০০৯ সালে তিনি আপিল বিভাগে বিচারক পদে নিয়োগ পান।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে প্রথমে তাকে ডিঙিয়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি, পরে আবার তাকে ডিঙিয়ে বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন প্রধান বিচারপতি হন।

সংবিধান

এই সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় সংবিধান সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পাচ্ছেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। তিনি ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ছিলেন।

আইনের ছাত্র শাহদীন মালিক ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন। ২০০৩ সাল থেকে উচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসাবে কাজ করছেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টেও কাজ করেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের (টিআইবি) নির্বাহী প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান হচ্ছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রিধারী ইফতেখারুজ্জামান পিএইচডি করেন এসজিএইচ ওয়ারশ স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে।

তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক এবং গবেষণা পরিচালক ছিলেন।

ইফতেখারুজ্জামান ২০০৮, ২০১২ এবং ২০১৫ সালে জার্মানভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক।

জনপ্রশাসন

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। তিনি ২০০১ সালে লতিফুর রহমান নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।

ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর মুয়ীদ চৌধুরীকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়।

আব্দুল মুয়ীদ ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক এবং পরের বছর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।

১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (বর্তমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) যোগ দেন মুয়ীদ চৌধুরী, ২০০০ সালে সচিব হিসাবে অবসরে যান তিনি।

পুলিশ

পুলিশ সংস্কার কমিশনের নেতৃত্বদাতা হিসাবে সফর রাজ হোসেনের নাম ঘোষিত হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত এই সরকারি কর্মকর্তা জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

ভাষণে ড. ইউনূস বলেছেন, কমিশন পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পর আগামী ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করতে পারবে। তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।

কমিশনের প্রতিবেদন পেয়ে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ সভার আয়োজন করবে জানিয়ে তিনি বলেন, চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্র সমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের  প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাতদিনব্যাপী একটি পরামর্শ সভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত