Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

‘প্রত্যাশা পূরণ করলে ড. ইউনূসকে মনে রাখবে মানুষ’

শপথ নিচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
Picture of শেখ শাফায়াত হোসেন

শেখ শাফায়াত হোসেন

ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজ করেন হোসনে বেগম। গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রৌমারী। বয়স চল্লিশের বেশি। দুই হাতে দুটি ব্যাগ নিয়ে কারওয়ান বাজার থেকে হেঁটে যাচ্ছিলেন বাংলামোটরের দিকে। ব্যাগের ভেতর টিফিন বাটিসহ আরও কিছু সরঞ্জাম।

পথেই দেখা হলো তার সঙ্গে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চেনে কিনা জানতে চাইলে বললেন, তার সম্পর্কে শুনেছেন।

বৃহষ্পতিবার রাতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছে ড. ইউনূস। হোসনে বেগম অবশ্য পদের বিষয়টা বোঝেন না। তিনি মনে করছেন ড. ‍মুহাম্মাদ ইউনূস প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।

কীভাবে ড. ইউনূস সম্পর্কে জানেন তা জানতে চাইলে এই নারী বলেন, ড. ইউনূসকে ‘ভালো লোক’। তার এক বোনকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। সেই বোন মিরপুরের কোনও একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা মেডিকেল কলেজ থেকে লেখাপড়া করে এখন ভালো উপার্জন করছেন।

কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেই বোন লেখাপড়া করেছেন বলতে না পারলেও হোসনে আরা জানেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস মানুষকে সাহায্য করেন। আর এটাই তার জন্য যথেষ্ট।

ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সেদিনই দেশ ছাড়েন তিনি। এরপর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে ঘোষণা দেওয়া হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের।

বৃহষ্পতিবার শপথ নিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানসহ ১৪ উপদেষ্টা। আরও তিনজন শপথ নেবেন শিগগিরই। শপথ নেওয়াদের শুক্রবার দপ্তরও বণ্টন হয়ে গেছে।

পরিবর্তিত এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিনা কিংবা তাকে নিয়ে কী ভাবছেন সাধারণ মানুষ তারই তত্ত্ব-তালাশের চেষ্টা করেছিল সকাল সন্ধ্যা।

শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দাঁড়িয়ে, রিকশা-সিএনসি-বাসে চড়ে এই প্রতিবেদক কথা বলেন নগরের সাধারণ মানুষদের সঙ্গে।

তেমনই একজন নওগাঁর মো. তোতা। ঢাকায় ২০ বছর ধরে রিকশা চালান। পান্থপথের দিকে চলতে চলতে কথা হয় তার সঙ্গে।

তোতা জানালেন অনেক আগে থেকেই তিনি ড. ইউনূসের নাম জানেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার কারণে চেনে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারও আগে থেকে চিনি। উনি গ্রামীণ ব্যাংক বানাইসে।”

এই রিকশা চালকের প্রত্যাশা, ড. ইউনূসসহ তার উপদেষ্টারা যেসব ভালো ভালো কথা বলছেন, সব অনিয়ম ঠিক করার কথা বলছেন, সেই কথাগুলো যেন তারা রাখেন।

তারা যদি তাদের দেওয়া কথার চারভাগের দুইভাগও পূরণ করতে পারেন তাতেও বাংলাদেশের মানুষ খুশি হবে বলে মনে করেন তোতা। সেইসঙ্গে এটাও বললেন, দায়িত্ব পালন করতে না পারলে তাদেরও টেনে নামানো হবে।

ঢাকার কলাবাগানের একটি মনোহরী পণ্যের দোকানে কেনাকাটা করছিলেন নাজনীন নাহার। সঙ্গে ছিল ১০-১২ বছরের সন্তান। গৃহিনী নাজনীন কলাবাগানেই নিজেদের বাড়িতে থাকেন।

এত বছরে কখনও এমন অরাজক পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি জানিয়ে বললেন, “প্রতিদিন রাতে রামদা নিয়ে বের হচ্ছে ২০-২৫ জন। রাত হলেই বাসায় থাকতে ভয় করছে।”

এই পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গে তেমন কিছু বলতে চাইলেন না তিনি। কেবল বললেন, “কি যে হবে জানিনা। দেখা যাক।”

বিকালে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন মাসুম বিল্লাহ। তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। কিছুদিন আগে দেশে এসেছেন। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার দুবাই ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার।

আলাপচারিতায় ড. ইউনূস প্রসঙ্গে মাসুম বিল্লাহ বলেন, “আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট পড়তাম তখন প্রথমবার ড. ইউনূসের নাম শুনি। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কারণে। বন্ধুদের আড্ডায় তখন আলাপ হতো যে আমরাও ভালো কাজ করলে নোবেল পাবো। একজন তো উদাহরণ আছে।”

দেশের বর্তমান পরিস্থিতির উন্নয়নে ড. ইউনূস ভালো কিছু করবেন বলে আশা মাসুমের। বললেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে পছন্দ করি বা করি না, সেটা বড় কথা নয়। তিনি ভালো কিছু করলে তার প্রতি আমাদের যে সম্মান বা প্রত্যাশা আছে, সেই প্রত্যাশা তিনি রাখলে দেশের মানুষ তাকে মনে রাখবে।”

তেজগাঁও সাতরাস্তার মোড় ধরে যাচ্ছিলেন মনিরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি হোসিয়ারি পণ্যের ব্যবসা করেন। তেজগাঁওয়ে কাজে এসেছিলেন, সেখান থেকে ফিরছিলেন কেরানীগঞ্জে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

গুলিস্তানগামী একটি বাসে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ হয় মনিরুল ইসলামের। তিনি শিক্ষার্থীদের সড়ক ব্যবস্থাপনার কাজকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বলে জানালেন।

এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গ উঠতেই বললেন, “তাকে (ড. ইউনূস) লাগবে না, এই ছাত্রদেরকেই দায়িত্ব দিলে এরাই সব ঠিক করে ফেলতে পারবে। সবার আগে বন্ধ করতে হবে ঘুষ। আমরা ঘুষ দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স করব না। ট্যাক্স দিতে গেলেও ঘুষ দিতে হয়। এইগুলো বন্ধ হলেই আমরা খুশি।”

হাতিরঝিলে রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় কথা হয় মো. রুবেল নামের এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকের সঙ্গে। তার কাছে ড. ইউনূস সম্পর্কে জাইলে রুবেল বলেন, “ভালোই তো বলছে সবাই। আগে এক যাত্রী উঠে গল্প করছিল ইউনূস সাহেবকে নিয়ে। ভালো ভালো কথা বলল। নোবেল পেয়েছে। আবার কেউ কেউ বলে পারবে না। যা ছিল আবার তাই হবে। আমরা ভাই ছোটখাট মানুষ। দুইবেলা খেতে পারলেই খুশি।”

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ফটকের সামনে কথা হয় মুদি দোকানি আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। বাসের অপেক্ষা করতে করতেই কথা বললেন সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে।

তিনি বলেন, “ড. ইউনূসকে তো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নির্বাচন করে দেওয়ার জন্য। এরপর আবার নির্বাচন দিলে বোঝা যাবে কোন দল ক্ষমতায় আসবে। দেখা যাক তিনি তার দায়িত্ব কেমন পালন করেন।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত