Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

পাচার হওয়া অর্থে ফেরাতে সমন্বিত কৌশল নিতে হবে : ড. ইউনূস

চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে বৃহস্পতিবার ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে বৃহস্পতিবার ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়ে দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বড় সমস্যা হিসাবে দেখিয়ে এই অর্থ উদ্ধারের একটি সমন্বিত কৌশল বের করতে এশিয়ার দেশলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের মাহাত্ম্য তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব দেখেছে কীভাবে মানুষ দুর্নীতি ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশ দুর্নীতি এবং অবৈধ অর্থ প্রবাহের শিকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই অসাধু চর্চার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বছরে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়।

“কীভাবে এই অর্থ উদ্ধার এবং ফেরত আনা যায়, তার একটি বহুপাক্ষিক কৌশল বের করতে এশিয়াকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”

ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি হিসাব দিয়েছে, আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনকালে বাংলাদেশ থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে।

পাচার হওয়া এই অর্থ উদ্ধারের নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। তার মধ্যেই ড. ইউনূস এবিষয়ে এশিয়ার দেশগুলোকে এক হওয়ার আহ্বান জানালেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ এখন যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে তুলে ধরেন তিনি।

জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সংস্কার বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।

বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা সঙ্কটের ভুক্তভোগী হিসাবে তুলে ধরে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে এশিয়ার দেশগুলোকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

বোয়াও ফোরামের চেয়ারম্যান, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়

উন্নয়নের ক্ষেত্রে মহাদেশীয় সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে, যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।”

এশিয়ায় একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার, যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।”

বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়াতে আন্তঃদেশীয় সংযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বাড়িয়ে স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতেও বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।

এসবে কেন্দ্রে নতুন প্রজন্মকে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।

“আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে। আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।”

বোয়াও ফোরাম ও অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে সহায়তার পরামর্শ দেন তিনি।

যুব সমাজের প্রতি আহ্বান রেখে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রত্যেক যুবককে তিন-শূন্য নীতিতে গড়ে উঠতে হবে: শূন্য কার্বন নির্গমন, শূন্য সম্পদের কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব।”

চার দিনের সফরে চীন পৌঁছার দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ড. ইউনূস বোয়াও ফোরামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।  

শুক্রবার বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন িতনি। দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। চীনের বড় বড় কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের (সিইও) সঙ্গেও তিনি বৈঠক করবেন। ২৯ মার্চ তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত